২৩ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:২৭

এলজিইডির ধর্মীয় অবকাঠামো প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

এমপিদের সুপারিশে প্রতি উপজেলায় বরাদ্দ ১ কোটি টাকা

দেশের বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, প্যাগোডা, গির্জা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সংসদ সদস্যদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি উপজেলায় এ জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রায় ১০ হাজারটি সার্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কার ও সম্প্রসারণ এই প্রকল্পটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এলজিইডির এ ধরনের কাজ করার ম্যান্ডেট আছে কি না সে প্রশ্নও উত্তাপিত হয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র বলছে, স্থানীয় পর্যায়ে সমাজের কল্যাণ ও সংহতি সুসংহত করতে সামাজিক, ধর্মীয় এবং খেলাধুলাবিষয়ক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সার্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন নামে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দেশের সব উপজেলায় এটি বাস্তবায়নের জন্য ৬৭৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়।
প্রকল্পটি নিয়ে পর্যালোচনায়, এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ ইত্যাদির জন্য স্কিমভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন না করে উপজেলাভিত্তিক প্রাক্কলন করা হয়েছে। কাজের স্বচ্ছতার স্বার্থে উপজেলাভিত্তিক থোক বরাদ্দ না রেখে স্কিমভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রকল্পে খেলাধুলাবিষয়ক অবকাঠামো উন্নয়নের খাত রাখা হয়েছে। এ ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সম্মতি থাকা প্রয়োজন।
এখানে ছোট বড় উপজেলা বিবেচনা না করেই গড়ে এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সংসদ সদস্যদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণ করা হচ্ছে, তাই তাদের সে জন্য প্রতি সংসদীয় আসনে এক কোটি টাকা হারে নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত করে নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উপজেলা বা জেলা বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় আকারের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত অর্থের জোগান ভালো থাকে। সেগুলো মেরামত বা উন্নয়নে খুব বেশি সমস্যা হয় না। অন্য দিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থের অভাবে সংস্কার বা মেরামত বা সম্প্রসারণ ব্যয় নির্বাহ করতে পারে না। সে বিবেচনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা সন্নিবেশ করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে থেকে বা বিভিন্নভাবে যেসব অনুদান পেয়ে থাকে তাদের এই তালিকা থেকে বাদ দেয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি উইং বলছে, মসজিদ, মন্দির, শ্মশান, গির্জা, প্যাগোডা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংস্কার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। তাই এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়ার আগে ওই মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে পরিপত্র অনুযায়ী অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুসরণ করা যেতে পারে। তাদের বক্তব্য, এলজিইডি কর্তৃক এ ধরনের প্রকল্প আগে নেয়া হয়নি। তাই বড় আকারের নয়, ছোট করে নিলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের স্কিম বাস্তবায়নে নীতিমালা থাকা দরকার।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/230633