২৩ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:২৬

দুর্ভোগ সঙ্গী করে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা শুরু

উপচেপড়া ভিড়। মানুষের দৌড়ঝাঁপ। গাড়ীতে ওঠার তাড়া। এই ছিল রাজধানীর টার্মিনালগুলোর চিত্র। দুপুরের পর থেকেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। টার্মিনালগুলোতে যেন মানুষের স্রোত। এরা নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে। গতকাল দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় এই স্রোত। প্রতি পদে ছিল চরম ভোগান্তি। রাজধানী থেকে বের হতেই অনেকের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় গাড়ির মধ্যে। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরেও মহাসড়কে বাড়তি চাপে গতকাল শুরু হয়েছে তীব্র যানজট।
ট্রেন যাত্রীদের গত বুধবার থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও লঞ্চ ও বাসযাত্রীদের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে মূলত গতকাল দুপুরের পর থেকে। বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরি করেন, তারা গতকাল অফিস করে দুপুরের পরই রওনা দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। পথে পথে এই মানুষগুলো পড়েন চরম ভোগান্তিতে। বিশেষ করে যানজটের কারণে তাদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। কাজী শাহরিয়ার নামে এক সরকারি কর্মচারী জানালেন, সকালেই প্রস্তুত হয়ে বের হয়েছিলেন বাসা থেকে। দুপুরের মধ্যে অফিসের সব কাজ শেষ করে তিনি রওনা দেন মহাখালী টার্মিনালের উদ্দেশে। পল্টন মোড় থেকে মহাখালী যেতে তার সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীতে ভিড় লক্ষ করা যায়। দুপুরের দিকে এই ভিড় তীব্র আকার ধারণ করে। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকা এই সময় স্থবির হয়ে পড়ে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বলা হয়েছে হঠাৎ রাস্তায় যানবাহনের তীব্র চাপ পড়েছে। যে কারণে ভিড় লেগে গেছে। একাধিক সূত্র বলেছে, দুপুরের পর একই সাথে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়ে যায়। যে কারণে তীব্র আকার ধারণ করে যানজট। আবুল কালাম নামে এক পথচারী জানান, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত তাকে হেঁটে যেতে হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যাওয়ার পর হাঁটারও পথ ছিল না। কষ্ট করে তাকে ঘাটে পৌঁছতে হয়েছে।
মহাখালী টার্মিনালে বেলা ৩টায় দেখা যায়, মানুষ আর মানুষ। নাড়ির টানে সবাই বাড়ি ফিরছেন। ময়মনসিংহের যাত্রী আবু তাহের জানালেন, এখানে গাড়ির কোনো সিরিয়াল নেই। যে যেভাবে পারছে গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে। টিকিটেরও অধিক মূল্য রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গাবতলীতে খবর নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে টার্মিনালে ছিল উপচেপড়া ভিড়। অনেকের গাড়ি সন্ধ্যার পরে হলেও তারা আগেভাগে গিয়ে টার্মিনালে বসে আছেন। এমন এক যাত্রী কাইয়ূম জানালেন, অফিস থেকে আর বাসায় যাননি। স্ত্রী-সন্তানদের টার্মিনালে চলে আসতে বলেছেন, আর তিনি সোজা অফিস থেকে টার্মিনালে এসেছেন। টার্মিনালেই ইফতার সেরে গাড়িতে উঠবেন। গাবতলী থেকে একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, আমিন বাজারে প্রচণ্ড যানজট। এই জটে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পরে ফেরিঘাটগুলোতেও বাড়তি চাপ পড়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে কাচপুরের এ পারে দীর্ঘ যানজট লেগেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল দিনভর টঙ্গি থেকেই যানজট লক্ষ করা গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ধীর গতিতে যানবাহন চলছে।
সবচেয়ে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে সদরঘাট টার্মিনালে। টার্মিনালে গতকাল ছিল উপচেপড়া ভিড়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই দুই চারজনের ব্যাগ ও মূল্যবান মালামাল খোয়া যাচ্ছে। একাধিক যাত্রী বলেছেন, মানুষের ভিড় বাড়ায় এই পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হতে পারে। এ দিকে টার্মিনালের ৬ নম্বর পন্টুনের তিন নম্বর সিঁড়িটি কয়েক দিন ধরে বিকল পড়ে আছে। গতকাল সেখান থেকে পড়ে সোলেমান, জামিল ও হারুন নামে তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা আহত হওয়ার পরেই টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তার মেরামতের কাজ ধরেছে কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে যাত্রীরা ঘাটে প্রবেশের পরই টানাহেঁচড়ার মধ্যে পড়ছেন। একাধিক যাত্রী বলেছেন, ঘাটের শ্রমিকেরা তাদের মালামাল টেনে নিয়ে যায়। বাড়তি টাকা আদায় করছে মালামাল বহনের নামে। শামসুদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেছেন, তার একটি হাত ব্যাগ। যা নিজেই বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘাটের ভেতরে প্রবেশের পরই তিন-চারজন টানাটানি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত একজনের কাছে ব্যাগটি দিতে হয়। হাত ব্যাগটি লঞ্চে তুলে দিয়ে দেড়শ’ টাকা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত তাকে ১০০ টাকা দিতে হয়। ভুক্তভোগী শামসুদ্দিন বলেন, এটা জুলুম। কিন্তু প্রতিকারের কোনো উপায় নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘাটে দু’টি শ্রমিক গ্রুপ আছে। বিআইডাব্লিউটিএ একটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। আর একটি নিয়ন্ত্রণ করছে শ্রমিকলীগ নামধারী কিছু লোক। এরা মানুষের সাথে জোরজবরদস্তি করছে। এ দিকে লঞ্চগুলোতেও দেখা গেছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। লঞ্চের ভেতর থেকে অনেকের মালামাল খোয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চে চড়ে গতকাল মারধরের শিকার হয়েছেন অনেক সাধারণ যাত্রী। জানা গেছে, এই লঞ্চটি গত বুধবার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ গতকালের অগ্রিম কেবিন টিকেট বিক্রি করায় গতকাল তারা বাড়তি ট্রিপ দেয়। গতকাল লঞ্চটি যখন টার্মিনালে আসে তখন কেবিনের যাত্রী ছাড়া অনেক সাধারণ যাত্রীও লঞ্চে ওঠেন। এই সাধারণ যাত্রীদের লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মারধর করে লঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়।
অব্যবস্থাপনা রয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত নৌযানেও। এমভি বাঙালি নামে নৌযানের সি-৪ কেবিনে গতকালের যাত্রী ছিলেন কানিজ ফাতেমা। জাহাজে ওঠে তিনি দেখতে পান এসি নষ্ট। অথচ এসি কেবিনের ভাড়া ১৭১৮ টাকাই রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। গতকাল এসি নষ্ট দেখে তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সোজা জানিয়ে দেয় এসি মেরামত করে দেয়া ওই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/230647