২১ জুন ২০১৭, বুধবার, ৩:০৩

ঈদযাত্রার আগেই মহাসড়কে দুর্ভোগ

ঈদযাত্রার আগেই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। সড়কের খানাখন্দ, অবৈধ পার্কিং আর উন্নয়ন কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এ তিন মহাসড়কে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। এ অবস্থায় ঈদ যাত্রায় এসব মহাসড়কে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

রাজধানীর প্রবেশদ্বার রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আর এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে মঙ্গলবার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দু’টি সড়কে যানজট প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এতে করে দেশের পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগসহ কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী ঈদে ঘরমুখো মানুষ আর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চলাচল করা হাজার হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালকেরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ভুলতা-গোলাকান্দাইল এলাকায় গাড়ি চলাচলের পর্যাপ্ত জায়গা না রেখে ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে ভাঙাচোরা ও গর্ত, এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কাঞ্চন সেতুর উপর ও টোলপ্লাজার উভয়দিকে ভাঙাচোরা ও ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি ও টোল আদায়ে ধীরগতি। আইন না মানা ও যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, আর হাটবারের বাড়তিচাপে দীর্ঘ এ যানজটের সৃষ্টি হয়। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কারনে সেখানে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের কাঞ্চন সেতুর উপর ও সেতুর টোল প্লাজার উভয় দিকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ কারনে এই দুই মহাসড়কের যানবাহন ধীর গতিতে চলাচলের করছে এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে চালক ও স্থানীয়রা জানান। অন্যদিকে, ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার গাউছিয়া বাজারে মঙ্গলবার শেষহাটের দিন থাকায় সারা দেশের যাকাতের কাপড় কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে যানজট চরম আকার ধারণ করে। এছাড়া আঞ্চলিক সড়কে চলাচলরত গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড, মহাসড়কে অননুমোদিত গাড়ি চলাচল যানজটের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আধুরিয়া থেকে রূপসী পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার ও এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের গোলাকান্দাইল থেকে চরপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীসাধারণ ও মালবাহী গাড়ির চালকেরা। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশে ইন্সপেক্টর ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, হাটের ক্রেতাদের চাপ, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণেই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বেশিরর ভাগ চালক আগে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য প্রতিযোগিতা করে বেআইনিভাবে গাড়ি ওভার টেকিং করার দরুন এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ যানজট নিরশনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। আশা করি খুব দ্রুত যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল মহাসড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা
গাজীপুরের উপর দিয়ে যাওয়া দুই মহাসড়ক ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদ যাত্রা বরাবর দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এবারও উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাঁচ জেলার যাত্রীদের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেন নির্মাণ করায় চান্দনা থেকে শ্রীপুরের জৈনা বাজার পর্যন্ত দুভোর্গের কোনো আশঙ্কা না থাকলেও চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত নানা কারণে দুর্ভোগের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চারলেনের কাজ চলতে থাকায় বঙ্গবন্ধু সেতু অভিমুখী যানবাহনকে পড়তে হচ্ছে দীর্ঘ যানজটে। সেই সঙ্গে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সড়ক ভাঙা, নানা অব্যবস্থাপনা আর ময়লা-আবর্জনার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেন করার কাজ শেষ হওয়ায় এই সড়কে কোনো যানজট নেই। কিন্তু একই মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লেগে যায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। দু’টি মহাসড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ দোকান বসানো ও ময়লা-আবর্জনা সড়কের ওপর ফেলায় মহাসড়ক সরু হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়ক ভেঙে গেছে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। টানা বৃষ্টি আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। মহাসড়কের অনেক স্থানে উঠে গেছে কার্পেটিং। রয়েছে খানা-খন্দ। আর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনের কাজ এগিয়ে চলায় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও কোনাবাড়ীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে এ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট প্রতিদিনের ঘটনা। যানজট এড়াতে মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ ঈদ যাত্রার সময় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঈদে ঢাকা থেকে ১১৭টি রুটের যাত্রী ব্যবহার করেন গাজীপুরের ওপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এর মধ্যে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের অংশে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অনেক গর্ত। অনেক স্থানে উঠে গেছে কার্পেটিং। মহাসড়কের দুই পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জমে হাঁটু পানি। মহাসড়কে দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ না হওয়ায়ও সড়কটি এখন ব্যবহারকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এলোমেলো গাড়ি পার্কিং, ইউটার্ন ও শ্রমিক অধ্যুষিত থাকায় তারা পায়ে হেঁটে পারাপারের কারণে মহাসড়কের এই অংশে গত কয়েকমাস ধরেই লেগে রয়েছে তীব্র যানজট। এয়াড়া চেরাগ আলী ও বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড, মালেকের বাড়ি এবং চান্দনা চৌরাস্তার অনেক জায়গায় ফুটপাতে দোকান গড়ে উঠেছে। ফলে যানজটের কারণে এক ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে যাত্রীদের। এতে রমজান মাসে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। যদিও ঈদে সামনে রেখে ফুটপাতের দোকান ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহন চলাচলের সুবিধায় চার লেন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে দুইটি ফ্লাইওভার। এছাড়া ভোগড়া বাইপাস থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। মহাসড়কের উন্নয়নে মাটি ভরাট, ইট বিছানোসহ বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং কাজে ভারী যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ব্যবহার করায় এ মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কোনাবাড়ী, সফিপুর, পল্লী বিদ্যুৎ, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈরসহ টাঙ্গাইল অংশের হাঁটুভাঙ্গা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে আটকে থেকে নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঈদে সমহাড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলার পাশাপাশি লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করলে যানজটের তীব্রতা আরো বাড়বে। চালকরা বলছেন, প্রতিবছর ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কের চন্দ্রা ও আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজটে সৃষ্টি হয়। এবার মহাসড়কের চারলেনের কাজ চলার পাশাপাশি বৃষ্টিপাত হলে এমনিতেই যানজটে তাদের নাকাল হতে হচ্ছে। ঈদের আগে মহাসড়কে মেরামত কাজ বন্ধ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করলে হয়তো দুর্ভোগ কমবে।
তবে সড়ক বিভাগের গাজীপুরের নির্বাহী কর্মকর্তা ডিকেএম নাহীন রেজা বলছেন, এয়ারপোর্ট- জয়দেবপুর মহাসড়ক বিআরটি প্রজেক্ট আর টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেন নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে থাকায় এ মহাসড়কে কিছুটা সমস্যা হলেও সড়ক সংস্কারের জন্য তারা কাজ করছেন। এছাড়া মহাসড়কে অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং সড়ক বিভাগ একযোগে কাজ করবে।
এ বিষয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, যানজট ও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং আনসার সদস্য ও এক হাজার কমিউনিটি পুলিশ সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছে। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুলিশের মোটরসাইকেল ৫২টি টহল দল রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট ও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। ঈদের দিন পর্যন্ত পুলিশ মহাসড়কে অবস্থান করবে যাতে ঈদে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও স্বাভাবিক রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে দু’দিন গাজীপুরের দু’টি মহাসড়ক পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। এবার ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে তিনি আশা করছেন। মহাসড়ক দু’টিতে যাতে যানজট না হয়, সেজন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=71011