২১ জুন ২০১৭, বুধবার, ৩:০০

যানজটে স্থবির রাজধানী

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজধানীতে তীব্রতর হচ্ছে যানজট। একদিকে ঈদের কেনাকাটা। অন্যদিকে নগরবাসীর কর্মস্থল আসা-যাওয়া এবং নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার তোড়জোড়। সব মিলিয়ে সম্প্রতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যানজট। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র যানজটে স্থবির ছিল রাজধানী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল যানবাহন। অনেককে গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে বাড়ির পথ ধরতে দেখা গেছে। শুধু রাজধানী শহর নয়, সংযুক্ত মহাসড়কগুলোতেও পোহাতে হয়েছে একই দুর্ভোগ। 

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। গতকাল বিকালে পল্টনে কাজ সেরে কাওরান বাজারের দিকে অফিসের পথ ধরেন। পড়েন বিপাকে। রাস্তায় গাড়ি আছে। ঘুরছে না চাকা। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ঠাসাঠাসি করে। গাড়িতে যাত্রীরা ঝিমিয়ে, ঘুমিয়ে পার করছেন বিব্রতকর সময়। তাই তিনি যানজট এড়াতে চলন্ত গাড়ির ধরার জন্য পায়ে হেঁটে সামনে এগুতে থাকেন। সময় তখন ৩টা ৪৫ মিনিট। কিছুক্ষণ পর পৌঁছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। তখনও সামনে গাড়ি চলার নাম নেই। তাই তার হাঁটাও থামে না। পার করলেন মৎস্য ভবন মোড়। অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। একপর্যায়ে তিনি দূরত্ব কমানোর জন্য রমনা পার্কে ঢুকে ভেতরের পথ ধরে হাঁটতে থাকেন। পৌঁছেন রূপসী বাংলা হোটেলের পাশের রাস্তায়। তখন রূপসী বাংলা হোটেলের পাশের সিগন্যাল কিছুক্ষণ অবমুক্ত হলে হোটেলটির পাশ ঘেঁষে কয়েকটি গাড়ি মোড় পেরিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যায়। পর পরই আবার থমকে পড়ে সংযুক্ত সব রাস্তার গাড়ি। তার আর গাড়ি ধরা হলো না। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক ঘণ্টা পর পৌঁছেন কাওরান বাজারে। নিজ অফিসে। ঘর্মাক্ত পরিশ্রান্ত হয়ে। সকাল ১১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাসে উঠেন শহীদুল ইসলাম। যাবেন মতিঝিল। বাসটি থেমে থেমে ও ধীর গতিতে আসাদ গেট আসে। তারপর আরো দীর্ঘ প্রতীক্ষা। গাড়ি আর এগোয় না। অবশেষে জাতীয় সংসদের সামনে থেকে ফার্মগেট মোড় পার হাতে লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এরপর পুরো রাস্তা ও কাওরান বাজার, বাংলা মাটর, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, পল্টন মোড়ে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে বাসটি মতিঝিল পৌঁছে বেলা দেড়টায়। আড়াই ঘণ্টা পর।
এই দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে শহীদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই অসহনীয় যানজট। তার উপর এ রুটে ভিআইপিদের যাতায়াতের জন্য গণ-পরিবহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থামিয়ে রাখা হয়। যাত্রীদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এখন তো অফিসে পৌঁছাতেও দেরি হয়ে গেছে। এই শহর আসলেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা এমন অসনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।
ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ আহমেদ নিজের প্রাইভেট কারে গুলশানের বাসা থেকে বের হন। যাবেন বসুন্ধরা সিটিতে। বিকাল ৫টার দিকে পৌঁছেন হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনার গাঁয়ের সামনে। তারপর গাড়ি আর নড়ে না। পড়ে যান বহু গাড়ির ভিড়ে। গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। কিন্তু কাওরান বাজারের সিগন্যালে সবুজ বাতি আর জ্বলে না। সরে না সিগন্যাল বার। পাঁচ, দশ মিনিট পার হয়ে আধঘণ্টা। ভেঙ্গে যায় ধৈর্যের বাঁধ। অবশেষে ৪০ মিনিট পর সিগন্যাল খুলে দেয়া হয়। কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ গাড়িতে পাড়ি দেন দীর্ঘ ৪০ মিনিটে।
তবে দীর্ঘ যানজটে মাহমুদ, শহীদ আর ইমতিয়াজের এই ভোগান্তিকে অসহনীয় বলতে নারাজ ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তাদের মতে ঈদের আগে রাস্তায় স্বাভাবিকভাবে চাপ কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাই নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. আব্দুর রাজ্জাক মানবজমিনকে বলেন, ঈদের কেনাকাটা, ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা ও অফিসে আসা-যাওয়া মিলিয়ে রাস্তায় চাপ ছিল। বিশেষ করে ইফতারের আগে এই চাপটা কিছুটা বেশি ছিল। এ কারণে আউটগোয়িংয়ে মতিঝিল থেকে গাবতলীর দিকে কিছুটা যানজট হয়েছে। তবে আমরা সার্বক্ষণিক রাস্তায় থেকে যথাসাধ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=71010&cat=3/