২১ জুন ২০১৭, বুধবার, ২:৫৫

চড়া দামের কারণে ক্রেতা জুটছে না

ঈদে ধনী-গরিব সবাই নতুন জামা-জুতা কিনবে—এটি মাথায় রেখে আকাশসমান দাম হাঁকে বিক্রেতারা। এক দামের দোকানগুলোর মালিকরাও কেনা দামের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি দাম লিখে রাখে ট্যাগে।

সারা বছরের খোরাক তারা এই এক উৎসবেই তুলে নিতে চায় যেন। আগে ক্রেতাদের বিকল্প ছিল না। বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীদের একচ্ছত্র মুনাফা মেনে নিত তারা। এখন ক্রেতাদের জন্য অনেক বিকল্প তৈরি হয়েছে। তারা অনলাইন থেকে কম দামে কিনতে পারছে, সহজে ভিসা পেয়ে অবাধে চলে যাচ্ছে কলকাতায়। ফলে অধিক মুনাফার লোভ সামলাতে না পেরে ক্রেতা হারাচ্ছে মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীরা। ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরের বিপণিবিতানগুলোতে এবার ঈদে ক্রেতাদের আগের মতো ভিড় নেই। অথচ ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাচ্ছে শুক্রবার থেকে, অনেকেই বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগে দেখা যেত এই সময়ে ঢাকার মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকত না। এখন সেখানে ভিড়ভাট্টা অনেকটাই কম। বিক্রেতারাও বলছে, এ বছর ব্যবসা তেমন ভালো নয়। ঢাকার মার্কেটগুলোতে এই ক্রেতাশূন্যতার জন্য বিক্রেতারা দায়ী করছে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির কলকাতায় গিয়ে ঈদ কেনাকাটার প্রবণতাকে।
গতকাল কালের কণ্ঠ’র কয়েকজন রিপোর্টার ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে, বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, এবার ঈদের বেচা-বিক্রি আগের মতো জমজমাট নয়। অনেক ব্যবসায়ী বলেছে, তাদের ব্যবসাজীবনে এমন মন্দা আর দেখা যায়নি। ১৫ রোজার পরে আগে যেখানে ক্রেতা সামলানো ছিল বড় কাজ, এখন সেখানে এক রকম শূন্যতা। শুধু ঈদ নয়, যেকোনো শুক্রবারও রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে যেখানে ক্রেতাদের পা ফেলার জায়গা থাকে না, সেখানকার ব্যবসায়ীরাও এখন ক্রেতার অভাবে একে অন্যের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাচ্ছে। তারা এ জন্য বাংলাদেশিদের অধিকহারে কলকাতায় গিয়ে কেনাকাটাকে দায়ী করছে। তবে দেশি ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে বিক্রি মন্দ নয়।
ঢাকা ও আশপাশের উপজেলাগুলোতেও এখন মানসম্পন্ন শপিং মল গড়ে উঠেছে। ফলে আশপাশের উপজেলা ও জেলা থেকে ক্রেতাদের কেনাকাটার জন্য আর ঢাকায় আসতে হচ্ছে না। অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের। মার্কেটের চেয়ে অনলাইনে কম দামে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই পছন্দের জিনিস কেনা যাচ্ছে। এ ছাড়া এ বছর মাসের শেষে ঈদ হওয়ায় প্রথম দিকেই বেতন-বোনাস পেয়ে আগে থেকেই কেনাকাটা করেছে অনেকে। অনেক পরিবার আরো আগেই কেনাকাটা শুরু করে দেয় বাড়তি দাম আর ঝামেলা এড়াতে। ফলে শেষ মুহূর্তে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের যে ভিড় থাকে, এবার তা চোখে পড়ছে না।
গতকাল দুপুরে নিউ মার্কেট, চন্দ্রিমা, নূর ম্যানশন, ইসমাঈল ম্যানশন চিশতিয়া, নিউ চিশতিয়া, রহমানিয়া মার্কেট, মৌচাক মার্কেট মিরপুর বেনারসিপল্লীসহ ঢাকার অভিজাত মার্কেটগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা অন্যবারের চেয়ে কম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে ছাড় দিয়েও ক্রেতা টানতে পারছে না। দুপুর ২টায় রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার নূর ম্যানশনের চারতলা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে একজন-দুজন ক্রেতা রয়েছে। নিচতলায় ভিড় একটু বেশি হলেও ওপরের তলাগুলো প্রায় ফাঁকা। নিউ মার্কেটের বড় শাড়ির দোকানগুলোতে ক্রেতাস্বল্পতা আছে; তবে ভিড় রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবির দোকানে।
১৫ বছর ধরে গাউছিয়ার চিশতিয়া মার্কেটে উত্তরা গার্মেন্টে কাপড় বিক্রি করেন শাহাবুদ্দিন। দুপুর ১টার দিকে চিশতিয়া মার্কেট দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ক্রেতা নেই, তাই এখানে বসে থাকা। ক্রেতাদের চাপে অন্য বছর এই সময় কথা বলার ফুরসত পেতাম না। গত ১৫ বছরের ঈদ মৌসুমে এমন মন্দা আর দেখিনি। ’
বিক্রি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ভারত থেকে শুল্ককর দিয়ে কাপড় আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা ভারত যায়, তারা বিনা শুল্কে কম দামে কিনতে পারে। ভারত ভিসা সুবিধা বাড়ানোর কারণে এ বছর প্রচুর মানুষ কলকাতায় গিয়ে কিনছে। ’
প্রেমজয় শোরুমের স্বত্বাধিকারী ও গাউছিয়া সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা ঈদে বেশি জামাকাপড়, শাড়ি, জুতাসহ বিভিন্ন সাজসজ্জার পণ্য কেনে, তাদের বেশির ভাগই এখন ভারত থেকে কেনাকাটা করছে। কারণ কলকাতায় কাপড়ের দাম কম। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা দেশ থেকে কিনছে। ফলে আগের মতো বিক্রি নেই।
ক্রেতার অভাবে দুপুর ২টায় আরাফ ফ্যাশনের বিক্রেতা শরিফ একাই দোকানে বসে ছিলেন। তিনি জানান, বিক্রি একদম নেই। সারাদিন ক্রেতা পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার পর কিছু বিক্রি হয়, তাও আশানুরূপ নয়।
ঢাকার পলওয়েল মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও একই কথা। তাঁরা বলছেন, রোজার শুরুতে যখন পাইকারি বিক্রি করেছেন, তখন বেশ ভালোই ক্রেতা ছিল। তবে খুচরা ক্রেতা অন্যবারের চেয়ে বেশ কম। মার্কেটের মালিক সমিতির সভাপতি কাইয়ুম তালুকদার রনি কালের কণ্ঠকে বলেন, পলওয়েল মার্কেটে পাইকারি বিক্রি ভালো হয়েছে। তবে খুচরা ক্রেতা গতবারের চেয়ে কম। তিনি এ জন্য ঈদের আগে ভারতের ভিসা বাড়ানো ও বৃষ্টিপাতকে দায়ী করেছেন।
ঢাকার উত্তর-পশ্চিমাংশের মানুষের কেনাকাটার বড় ভরসার মার্কেট ছিল মৌচাক, আনারকলি, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স। বছর দুয়েক ধরে এসব মার্কেটের জন্য ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। রাস্তার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, ফলে বৃষ্টি হলে মার্কেটের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ার মতো অবস্থা হয়। এ কারণে মৌচাকসহ ওই এলাকার মার্কেটগুলোতে বেচাবিক্রি এমনিতেই কম। এর ওপর এবার ক্রেতার সংকট। ফলে মুখ বেজাড় করে থাকছেন বিক্রেতারা।
মৌচাক মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে এমনিতেই বিক্রি কম। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তা আরো কমে গেছে। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ভালো ভালো শোরুম হয়েছে। বাংলাদেশিদের গত বছর থেকে কলকাতায় গিয়ে কেনাকাটার ঝোঁক বেড়েছে। এ কারণে এবার বিক্রি আরো কম হচ্ছে।
পোশাকের ব্র্যান্ড সেইলরের যমুনা ফিউচার পার্কের আউটলেটে গতকাল ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়। এই আউটলেটটির ব্যবস্থাপক ল্যান্সি জোসেফ রোজারিও বলেন, ‘গতবছরের চেয়ে এবারের ঈদে বিক্রি বেড়েছে। তবে সেটা খুব বেশি নয়। দুই বছরের কিছু বেশি সময় ধরে যমুনা ফিউচার পার্কে আমাদের ওই আউটলেটটি চালু আছে। গত ঈদেও আমাদের পোশাকে বিকাশের ক্যাশব্যাক ও কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে মূল্য ছাড় ছিল। এবারও তা আছে। বিক্রি নেই বলে যে আমরা এই অফারগুলো দিচ্ছি তা নয়, বর্তমানে বিভিন্ন উৎসবে অনেক ব্র্যান্ডের পোশাকে এ ধরনের মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে আমরাও এ সুবিধা চালু রেখেছি। ’
ইয়োলোর যমুনা ফিউচার পার্কের শাখা ব্যবস্থাপক মো. আলতাফ হোসেন জানান, গত বছরের রোজার ঈদের তুলনায় এবার বিক্রি বেড়েছে বেশ খানিকটা। তবে অন্যান্য পোশাকের ব্র্যান্ডের মতো ইয়োলোর বিক্রি বাড়াতে কোনো ধরনের ছাড় দিতে হচ্ছে না। পোশাকের স্টাইল ও পরিমাণ বাড়ায় ক্রেতারা এমনিতেই আকৃষ্ট হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
ঈদ কেনাকাটায় শাড়ির চাহিদা অনেক বাড়ে। এই সময় ঢাকার বেনারসিপল্লীর শোরুমগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু সেখানেও ক্রেতাশূন্যতা। ভারত ভিসা সহজ করায় গতবারই ক্রেতা কমে গিয়েছিল। এ বছর আরো কমেছে।
মিরপুর বেনারসিপল্লীর অধিকাংশ দোকানেই গতবারের তুলনায় এবার বিক্রি প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ কম—এমন তথ্য জানিয়ে মিরপুর বেনারসিপল্লীর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সমিতির সদস্যদের ১১০টি শাড়ির দোকান আছে। সদস্য নয় এমন কিছু দোকানও আছে। এসব দোকানে শাড়ির সঙ্গে লেহেঙ্গা, সালোয়ার-কামিজও বিক্রি করা হয়। তবে এবারে বিক্রি এত খারাপ যে, রোজা শুরু হওয়ার পর শতকরা ৯০ ভাগ দোকানে নতুন শাড়ি আনা হয়নি। অথচ গতবার ২৭ রোজায়ও নতুন শাড়ি এনেছি। ’
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘খুচরা ও পাইকারি উভয় ধরনের বিক্রিই এবার খারাপ। বেশি দামের শাড়ির ক্রেতা নেই বললেই চলে। ভারতে মাল আনতে গেলে দেখা যায় সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি ক্রেতা। ’
রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাওয়া মিরপুর বেনারসিপল্লীর হানিফ সিল্কের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রয়োজনের পাশাপাশি মা, বোন ও স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য ঈদে অনেকে শাড়ি কেনেন। এ ছাড়া রোজার এক মাস বিয়েশাদি হয় না। ফলে ঈদের পরপরই সারা দেশে অনেক বিয়ে হয়। বিয়ের কেনাকাটাও ঈদের সময়ই করে ক্রেতারা। তারা শাড়ি ছাড়াও লেহেঙ্গা কেনে বেশি। কিন্তু গত বছর থেকে ভারত ভিসা সহজ করায় বেশির ভাগ ক্রেতা এখন কলকাতামুখী। এতে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রচলিত মার্কেটে যেখানে হা-হুঁতাশ, অনলাইনভিত্তিক শপিং সেন্টারে সেখানে ক্রেতার ভিড়। ক্রেতাদের বড় অংশই মার্কেটে গিয়ে দরদামে থই না পাওয়ায় এখন ঝুঁকছেন অনলাইন কেনাকাটায়। এতে আরো সুবিধা হলো, বৃষ্টি-বাদলে রাস্তায় বের হওয়ার ঝামেলা নেই। নেই দরদাম করার ঝক্কিও। ঘরে বসে অনলাইনে পছন্দের পোশাক অর্ডার দিয়েই পেয়ে যাচ্ছে ক্রেতা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি আড়ংয়ের দুটি শোরুমে গিয়ে পছন্দের ড্রেসটি পাননি। পরে তিনি ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে অর্ডার করেছেন। পরদিনই তা পেয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন ক্রেতাদের সময় কম। রাস্তায় যানজটের ঝামেলাও পোহাতে চান না তাঁরা। একই ব্র্যান্ডের সব পণ্য সব শোরুমে পাওয়া যায় না। এভাবে বিভিন্ন শোরুমে ঘুরে পণ্য খোঁজার চেয়ে অনলাইনে অর্ডার করে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। ’
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মার্কেটগুলোতে বিক্রি কমলেও অনলাইনে বিক্রি বাড়ছে। বিভিন্ন অনলাইননির্ভর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে আমরা যতটুকু জেনেছি, তাতে গতবারের ঈদ মৌসুমের তুলনায় এবার বিক্রি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ’
বাংলাদেশের ক্রেতাদের দেশের মার্কেট থেকে কেনাকাটার বদলে কলকাতায় গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করার অভিযোগের সত্যতা আছে। গত বছর থেকেই রোজার আগে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশিদের জন্য বিপুল পরিমাণ ভিসা ইস্যু করছে। এ ছাড়া অনেক বাংলাদেশির মাল্টিপল ভিসা আছে। বেনাপোল চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ওসি ওমর শরীফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন প্রতিদিন আট হাজার বাংলাদেশি বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। যাত্রীসংখ্যা বাড়ায় ডেস্কের সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। ঈদের কেনাকাটা ও বেড়ানোর জন্য যাচ্ছেন তাঁরা। ’
কেবল সহজে ভিসা প্রাপ্তির কারণে নয়, কলকাতায় বাংলাদেশের চেয়ে পোশাক-আশাকের দাম অনেক কম হওয়ায় বাংলাদেশিরা যাচ্ছে সেখানে। বিভিন্ন রুটে বাসে ও ট্রেনে সহজে যাতায়াতের সুযোগও তাদের কলকাতামুখী করছে। সুমন মিয়া নামের একজন ক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন পাঁচ হাজার টাকা হলেই কলকাতা থেকে কিনে দেশে আসা যায়। যারা আরো বেশি পরিমাণে কেনে, তাদের মধ্যেই কলকাতার যাওয়ার ঝোঁক বেশি।
ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিরা কলকাতায় গিয়ে পরিবার ও আত্মীয়দের জন্য কিনে আনছে লাগেজ ও ব্যাগ ভরা জামা-কাপড়, শাড়ি, কসমেটিকস এমনকি জুতাও। সেখান থেকে কেনাকাটা করে তৃপ্তির হাসি হাসছে অনেক ক্রেতাও। তাদের যুক্তি, কলকাতায় যাতায়াত ও হোটেলে থাকা-খাওয়ার পেছনে বাড়তি খরচ হিসাব করলেও কেনাকাটার খরচ কম হওয়ায় পুষিয়ে যায়। সেখানে যে শাড়ি বা ড্রেস দুই হাজার টাকায় কেনা যায় ঢাকার বিক্রেতারা সেটারই দাম হাকে ছয় হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে কেনাকাটা করা বাংলাদেশিদের যুক্তি, দেশের ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার লোভের কারণেই কলকাতায় গিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছে অনেক মধ্যবিত্ত।
তারা বলছে, দেশের ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার স্বভাবের কারণেই ক্রেতা হাতছাড়া হচ্ছে তাদের। একজন ক্রেতা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশে একসময় দেশি কলম বলতে ছিল ইকোনো। বাকি সবই ছিল বিদেশি কলম। পরে ম্যাটাডোর নামের দেশি কম্পানি কম দামে ভালো কলম বাজারে ছাড়ার পর বিদেশি কলমের আধিপত্য কমেছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উচিত কম মুনাফা করে দেশের ক্রেতাদের ধরে রাখা। ’
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তৈমুর ফারুক কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কলকাতা থেকে একটি ট্রাউজার কিনেছেন ৩৫০ রুপিতে, বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৪০০ টাকার সমান। একই ট্রাউজার ঢাকার একটি অভিজাত শপিং মলের ওয়েসটেক্সের শোরুমে কিনতে গিয়ে দেখেন দাম এক হাজার ২০০ টাকা।
আমিনুল হক পলাশ নামের একজন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মান্যবর’-এর যে পাঞ্জাবি কলকাতার মূল শোরুমে সাত হাজার টাকায় পাওয়া যায়, সেই একই পাঞ্জাবি গুলশানের এক অভিজাত শোরুমে ২৭ হাজার ৪০০ টাকায় ফিক্সড প্রাইসে বিক্রি হচ্ছে।
পলাশের ওই স্ট্যাটাসে এস জে শিশির নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ভিসা করে কলকাতায় যেতে খরচ সর্বোচ্চ ১,৫০০ টাকা। ১০ হাজার টাকার শপিং করলে কমপক্ষে তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। সঙ্গে ঘোরাঘুরিও হলো। দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে জনগণ নিজের ক্ষতি করবে কেন? দেশের ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার নীতি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এটি চলবেই। ’
বেনাপোল বন্দর দিয়ে কলকাতায় কেনাকাটা করতে যাওয়া মগবাজারের শাকিল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের শপিং করতে কলকাতা যাচ্ছি। এক দিনেই কেনাকাটা করে দেশে ফিরব। ’
কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার পোশাকের দোকান বিধাতা, মিলান, বাজার কলকাতা, মাহাত্মা গান্ধী রোডের আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল শাড়ির দোকান ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের ৯০ শতাংশই বাংলাদেশি।
আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল শাড়ির দোকানে কথা হয় ঢাকার ধানমণ্ডির ক্রেতা রুনা লায়লার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানকার নানা রকম ডিজাইনের শাড়ি দেখে পাগল হয়ে গেছি। নিজের ও আত্মীয়দের জন্য ১০টি কিনেছি। ’
ওই দোকানের মালিক স্বর্ণালী কাঞ্জিলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত ক্রেতা আমাদের দোকানে আসছেন। প্রত্যেকে একাধিক শাড়ি কিনছেন। ’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/06/21/511318