১৩ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৩৯

রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ হচ্ছে না

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে পড়ছে ব্যাংকিং খাত; সরকারি ব্যাংকই প্রধান বাধা মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালে দেয়া এ রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ হারে। অথচ এ সময়ে হওয়ার কথা ছিল ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ জন্য প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। এ কারণেই আন্তর্র্জাতিক মানদণ্ডে দেশের ব্যাংকিং খাত পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারার অন্যতম কারণ ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের আধিক্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। আর এর প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত মার্চ শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পুরো ব্যাংকিং খাত গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ হারে। এর মধ্যে ৩৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১২ দশমিক ২২ শতাংশ হারে। আর ৯টি বিদেশী ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ হারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে মাত্র ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ হারে। আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ঋণাত্মক ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে।
মূলধন সংরক্ষণের এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সাল শেষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা দুই বছর আগেই অতিক্রম করতে পেরেছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার প্রভাব গোটা ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সূত্র জানিয়েছে, আগামী দ্ইু বছরের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি রাতারাতি উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। বরং ব্যবসাবাণিজ্যে মন্দা ও নানা কারণে সরকারি ব্যাংকসহ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যেতে পারে। আর এটা হলে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। এমনি পরিস্থিতিতে আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মূলধন সংরক্ষণ কিভাবে সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। ফলে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে। এতে ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/228068