১৩ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৩৫

ভ্যাটের জন্য বাড়ছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম

জাতীয় বাজেটে প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ করায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আইনি এখতিয়ার কেবল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। তাই ভ্যাট আদায়ের জন্য কীভাবে এই দুটি অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো যাবে, তার পন্থা খোঁজা শুরু হয়েছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিলের ওপর এখনো ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। কোনো গ্রাহকের এক হাজার টাকা বিল হলে তার ওপর ওই হিসাবে ৫০ টাকা ভ্যাট ধার্য করে বিল নেওয়া হয়। কিন্তু ভ্যাট আইন অনুযায়ী এখন যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, তা ওই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বিলে উল্লেখ করে নেওয়া যাবে না। নিতে হবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দামের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করে বিদ্যুতের দাম পুনর্নির্ধারণ করে।
অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল হলে ১৫ শতাংশ হারে ১৫০ টাকা নেওয়া যাবে না। ওই গ্রাহকের বিল নিতে হবে তাঁর ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের যে দাম, তার সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যুক্ত করে। অর্থাৎ ওই গ্রাহকের ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম যদি হয় ছয় টাকা, তাহলে বিদ্যুৎ বিলে প্রতি ইউনিটের দাম ধরতে হবে ৬ টাকা ৯০ পয়সা। কিন্তু তাতে যে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়বে, অর্থাৎ বাড়িয়ে দেখাতে হবে, তা বিইআরসির সিদ্ধান্ত ছাড়া করা কারও পক্ষে আইনগতভাবে সম্ভব নয়।
অবশ্য আরোপিত ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ হলেও বিদ্যুতের ওপর প্রয়োগ হবে তার চেয়ে কম। কারণ, বিদ্যুৎ খাতের যন্ত্রপাতি আমদানি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ কিছু জিনিস আছে করমুক্ত। সেগুলো হিসাব করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এনবিআরের কাছে কর রেয়াত চাইতে পারে। মন্ত্রণালয় সেই উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎসচিব আহমদ কায়কাউস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা হিসাব করে দেখেছেন, প্রাপ্য ক্ষেত্রে কর রেয়াত নেওয়ার পরও প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে প্রায় ৮ শতাংশ হারে। কিন্তু দাম বাড়ানো বা কমানোর এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই। এ কাজ করতে পারে একমাত্র এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাই এ ক্ষেত্রে কী করা যাবে, তা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করছেন।
গ্যাসের দামে ভ্যাট প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা অনেক কম। কারণ, সব শ্রেণির গ্রাহকের ক্ষেত্রেই গ্যাসের দামের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করা আছে। তবে তা ১৫ শতাংশ নয়। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দামের সঙ্গে ৪২ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৩ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করা আছে। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় এ ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। তাই অবশিষ্ট ২ শতাংশের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামের ওপর ভ্যাট আরোপের বিষয়ে বিইআরসি কিছু করছে কি না বা কী ভাবছে জানতে চাইলে সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, তাদের প্রথমে দরকার ভ্যাট আইনটি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া। কারণ, আইনটি তাদের কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। তাই এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তারা এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এই আলোচনার ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকার যদি এই ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে, তাহলে যেকোনো উপায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণ অর্থাৎ বাড়ানো হবে।

http://www.prothom-alo.com/economy/article/1215876/