১২ জুন ২০১৭, সোমবার, ১১:০৮

চালের মজুত তলানিতে

দেশে চাল ও গমের মজুত এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গত ২৫শে মে’র খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী চালের মজুত দুই লাখ ২৪ হাজার টন ও গমের মজুত দুই লাখ ৭৫ হাজার টন। সব মিলিয়ে চার লাখ ৯৯ হাজার টন খাদ্যশস্য সরকারি গুদামে মজুত রয়েছে। চালের একই মজুতকে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে কখনো এত সর্বনিম্ন পর্যায়ে চাল ও গমের মজুত ছিল না। পরিকল্পনা না করেই কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, ভিজিডি ও ভিজিএফের মতো কর্মসূচি চালানোর কারণে খাদ্য মজুতজনিত সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিলের শেষদিকে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় আগাম বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ওই সময় এসব জেলার ৬২টি উপজেলার ৫১৮টি ইউনিয়নে ৮,৫০,০৮৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ২,১৯,৮৪০ হেক্টর জমির বোরো ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন অবস্থার কারণে সরকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এক বছর সহায়তা দেয়ার। এদিকে হাওরাঞ্চলের আগাম বন্যা, সারা দেশে অতি বৃষ্টি ও ব্লাস্ট রোগের কারণে এবার বোরোর আবাদ কম হয়েছে। তাই সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টন চাল কম হওয়ার আশংকা করছে সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে মজুত বাড়াতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আট লাখ টন চাল ও সাত লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা পূরণে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। চালকল মালিকরা সরকারের নির্ধারিত ৩৪ টাকা কেজি দরে চাল দিতে অনীহা দেখাচ্ছে। এছাড়া, এক লাখ টন চাল আমদানির প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দরপত্রের মাধ্যমে কেনা চাল দেশে পৌঁছাতে দেড় মাস সময় লাগবে। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে সরকারিভাবে (জিটুজি পদ্ধতি) আড়াই লাখ টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন। ওদিকে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে চাল কেনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে খাদ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি আতপ চাল কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৩.৭৩ টাকায়। এছাড়া ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫.৫১ টাকা দরে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল কিনতে লাগছে ১৭৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার পাঁচশ’ টাকা এবং ৫০ হাজার টন আতপ চাল কিনতে লাগছে ১৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও চালের দাম বাড়ছে। ভারতে প্রতি টন আতপ চাল ৪৪০ ডলার, পাকিস্তানে ৪৬৭ দশমিক ৮৫ ডলার, থাইল্যান্ডে ৪৭৭ দশমিক ৩৫ ডলার ও ভিয়েতনামে ৪২২ দশমিক ৫০ ডলারের কমে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেড়েই চলছে। এসব নানা সমস্যার মধ্যেও চালের মজুত বাড়াতে সক্রিয় সরকার। 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=69553&cat=3/