১১ জুন ২০১৭, রবিবার, ১১:৩২

বাজারে অতিরিক্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন

* পোশাকেই ৩৬ হাজার কোটি টাকা

মুসলিম উম্মাহর প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব হলো-পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। বড় এই দুইটি ধর্মীয় উৎসব ঘিরে খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাত চাঙা হয়ে ওঠে। আসন্ন ঈদুল ফিতর তথা রোযার ঈদ উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীদের হিসেবে এ সময়টি হচ্ছে ব্যবসায়ের সেরা মওসুম। বিশেষ করে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদকেন্দ্রিক বড় অংকের বিনিয়োগ করেন তারা। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম সর্বত্রই দোকানে দোকানে ক্রেতাসাধারণের ঢল নামে এ সময়টাতে।
পবিত্র মাহে রমযান ও ঈদ ঘিরে দেশের অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় এ মাসে যোগ হচ্ছে অতিরিক্ত আরো ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন। এর পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী, দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবীদের বোনাসও এই কর্মকান্ডে যোগ হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অংকের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেমন বাড়বে, তেমনি চাঙা হয়ে উঠবে গোটা অর্থনীতি। প্রথম রমযান থেকে শুরু হওয়া এ কর্মকান্ড চলবে গোটা রমযান মাসজুড়ে। এ মাসে একদিকে যেমন খেজুর, ছোলা, ডাল, মসলা ও ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে যায়, রোযার ঈদের জন্য নতুন জামা-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল, প্রসাধন সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রুনিক পণ্য ইত্যাদি বেচাকেনার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
পর্যবেক্ষকমহল বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সরব আলোচনায় ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরের সকল রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জনমুখী হওয়ার চেষ্টা করছেন। রোযা ও ঈদ কেন্দ্রিক উপহার নিয়ে হাজির হচ্ছেন লক্ষ্যভূক্ত কর্মী-শুভাকাংখীদের মাঝে। এছাড়া দেশে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও আগের চেয়ে বেড়েছে। সব মিলিয়ে সারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে মওসুমী জোয়ার এসেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী বলেন, ঈদে টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বাড়ে- এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ টাকার ব্যবহার পোশাক, ভোগ্যপণ্য, শৌখিনতা ও ভ্রমণসহ বিনোদনমুখী খাতেই বেশি হচ্ছে। কাজেই এটা একটা বড় ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের উৎসব অর্থনীতির আকার, ধরন ও ব্যাপ্তি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। মানুষ এ উৎসবকে ঘিরে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করে। এতে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী প্রত্যেকে কিছু না কিছু লাভবান হচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের হিসেবে দেশের মোট অর্থনীতির আকার হচ্ছে সাড়ে ১৯ লাখ কোটি টাকা। রোযা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সমীক্ষা অনুসারে, রোযায় অতিরিক্ত ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন যোগ হচ্ছে।
সমীক্ষার হিসাব মতে, রোযার মাসে ইফতার ও সেহ্রিতে যোগ হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। রমযান ও ঈদে অ্যাপায়ন বাবদ অর্থাৎ ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। ধনীদের দেয়া যাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে অতিরিক্ত যাচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৫ হাজার কোটি টাকা।
এফবিসিসিআই বলছে, এর বাইরে আরো কয়েকটি খাতের কর্মকান্ডে টাকার প্রবাহ বাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস; যা ঈদ-অর্থনীতিতে আসছে। এ ছাড়া আরো রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকা। ঈদের সময়ে প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে বাড়তি ব্যয় মেটাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে রোযা ও ঈদকে ঘিরে অর্থনীতিতে আরও যোগ হবে মানুষের সঞ্চয়ের টাকা। সারা বছর মানুষ যে সঞ্চয় করে রোযার সময়ে বাড়তি ব্যয় মেটাতে তার একটি অংশ তারা খরচ করে থাকেন। যে কারণে রোযার শেষ সময়ে এসে ব্যাংকে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। কারণ, ওই সময়ে গ্রাহকরা তাদের জমা টাকা তুলে নেন। ফলে বেড়ে যায় কলমানির সুদের হার। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র ও ডিপিএস হিসাব ভাঙিয়েও অনেকে ঈদের বাড়তি খরচ মেটান।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ইতিমধ্যেই রাজধানীর ইসলামপুর, নবাবপুর, চকবাজার, উর্দুরোড, সদরঘাট, গুলিস্তান ও বঙ্গবাজার এলাকার পাইকারি মার্কেটগুলো তাদের সাধ্যমতো বিনিয়োগ খাটিয়েছেন। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটের মার্কেটগুলোতে একইরকম রমরমা অবস্থা। এছাড়া বিদেশি পণ্যের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত পলওয়েল মার্কেট, বিসাভী, গাজী ভবন, বসুন্ধারা শপিং মলের ব্যবসায়ীরাও বড় বিনিয়োগ নিয়ে নামছেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় অত্যাধুনিক মার্কেট হচ্ছে রাজধানীর বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্ক। এখানে রয়েছে বিশ্বের নামকরা সব ব্র্যান্ডের পোশাক, জুতা, কসমেটিক্স, ইলেকট্রনিক্স কিংবা খাদ্যপণ্যের মহাসমারোহ। এখানকার সব শো-রুমগুলোতেই রয়েছে বড় বিনিয়োগ। বছরজুড়েই এ মার্কেটে অভিজাত, আধুনিক ও রুচিশীল ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর থাকে। উচ্চবিত্তের এসব ক্রেতার ঈদকেন্দ্রিক চাহিদা পূরণে ব্র্যান্ডনির্ভর শো-রুমগুলোও বসে নেই।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সূত্রমতে, সারা দেশে প্রায় ২৫ লাখ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। ঢাকার বড় ও বিলাসবহুল দোকানগুলোতে সাধারণত ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত পুঁজি খাটানো হয়। বড় বড় পাইকারি দোকানগুলোয়ও একই ধরনের বিনিয়োগ হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি দোকানগুলোয় এটি ন্যূনতম ৪০ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা। আর ঢাকার বাইরের জেলা শহরের বড় দোকানগুলো ন্যূনতম ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়। মফস্বলের বিনিয়োগের এ হার সাধারণত ২ থেকে ১০ লাখ টাকায় ওঠানামা করে। যাদের সম্ভব হয় না, তারাও এ রমযানে ধার-দেনা করে হলেও লাখ টাকার বিনিয়োগ খাটান।
সরেজমিন ঢাকার পাইকারি কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ক্রেতারা এসব মার্কেট থেকে ইতিমধ্যে এক দফা চালান নিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের চালানের অপেক্ষায় তারা মার্কেটে আসছেন। এর বাইরে গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারার বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোতে ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো আমদানি হয়েছে। এছাড়া নি¤œ আয়ের মানুষের বঙ্গবাজার এবং ফুটপাথেও ঈদের জন্য বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিরা বাজার এলাকার শত শত জুতার কারখানাগুলোয় দিন-রাত কাজ চলছে ঈদ বাজারে জুতা সরবরাহের জন্য। ঈদকেন্দ্রিক প্রায় কোটি মানুষের তৈরি পোশাকের সরবরাহ করা হয় পুরান ঢাকার উর্দুরোড থেকে। যখন দেশের বিভিন্ন এলাকার মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে প্রস্তুতি শুরু হয়, তখন উর্দুরোডের পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬০ শতাংশ বেচাবিক্রি রমযান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। এ মার্কেটের ব্যবসায়ী রমজান গাজী জানান, এখানে ২৫টির বেশি মার্কেটে রয়েছে প্রায় ৫০০ পাইকারি দোকান। ঈদ বাণিজ্যে এদের কারোরই বিনিয়োগে ঘাটতি থাকে না। এসব দোকানে গড়ে ২ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ হয়েছে বলে দাবি তার।
ঈদ অর্থনীতি প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের ঈদ অর্থনীতি-সংক্রান্ত কোনো গবেষণা নেই। এ সময় অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও এর সুফল সার্বিক অর্থনীতিতে ততটা যোগ হয় না। কারণ, এ সময় একটা অতি মুনাফার প্রবণতা থাকে। মুনাফা বাটোয়ারা হয় অল্প কিছু মানুষের মধ্যে। তিনি বলেন, ঈদ অর্থনীতির প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। ঈদ সামনে রেখে ক্রেতাদের খরচ বাড়ছে। আর ক্রেতাদের খরচ বাড়লে তার প্রভাব অর্থনীতির ওপর এসে পড়বে, যা ঈদ মার্কেট ঘিরে হচ্ছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইমলামের মতে, গ্রামের লিংকেজ বেড়েছে। শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়েও গ্রাম চলছে। ফলে ঈদ মার্কেট ঘিরে গ্রামের অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঈদের মতো উৎসব এলেই বাড়তি টাকার প্রবাহে সচল হয়ে ওঠে গ্রামের অর্থনীতি। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের হাতেও টাকা যাচ্ছে। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ছে। এটি ইতিবাচক দিক। তবে বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়।
বিদেশী পণ্যের দখলে বাজার : এদিকে, বিভিন্ন দেশের পণ্যের দখলে রাজধানীর ঈদ বাজার। এর অধিকাংশই ভারতের। ফলে মার খাচ্ছে দেশীয় পোশাক শিল্প। ঈদে পোশাক পণ্যের চাহিদা সর্বোচ্চ। কিন্তু দেখা গেছে, দেশীয় তৈরি পোশাকের স্থলে একচেটিয়া আধিপত্য ভারতীয় পোশাকের। ডিজাইনের বৈচিত্র্য, মনকাড়া ফ্যাশন আর মানের কারণে এগিয়ে আছে এসব পণ্য। তবে দাম অনেক বেশি। শাড়ি, লেহেঙ্গা, আর ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের নামের বা ডিজাইনের থ্রি-পিসের দাম আকাশচুম্বী। বিশেষ করে নারী, শিশু ও কিশোরদের পোশাকের একক দখলে এখন ভারতীয় পণ্য। লাভ ও চাহিদা বেশি হওয়ায় একশ্রেণির বিক্রেতা ভারতীয় পোশাক মজুদ ও বিক্রিতে উৎসাহিত হচ্ছেন বেশি।
জানা গেছে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশে এ বছর বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পথেই ভারতীয় পণ্য এসেছে বেশি। শুল্ক পরিশোধের ঝামেলা না থাকায় ভারতীয় শাড়ি, তৈরি পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, কসমেটিক্সসহ সব পণ্যের দাম অনেক কম। ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় দেশীয় তৈরি পণ্যের চেয়ে ভারতীয় অবৈধ পথে আসা পণ্য বিক্রিতেই আগ্রহী বেশি। এসব কারণে সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে চাহিদার সুযোগে ইচ্ছামতো দামে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন বিক্রেতারা। তবে চটকদার নাম ও বাহারি ডিজাইনের অধিকাংশ ভারতীয় পোশাক ও পণ্য নিুমানের বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু তারপরও কেতাদের কাছে চাহিদা অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে এসব পণ্য দেশে আসায় দামে সস্তা এবং রঙের বাহারে আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারাও। মানহীন এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হলেও লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। শপিংমল, মাঝারি মার্কেট এবং ছোট ছোট মার্কেটগুলোতে ভারতীয় পণ্যে সয়লাব। কিছু কিছু পোশাকের বাহারি নাম দিয়েও উঠতি বয়সী ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের প্রানান্ত চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকার ঈদ বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
মার্কেট ও শো-রুমগুলোতে শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, স্যান্ডেলসহ ঈদকেন্দ্রিক প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয়। ঈদে চমক সৃষ্টির জন্য জনপ্রিয় হিন্দি ছবি বাহুবলী, বাজিরাও মাস্তানি নামের পোশাক নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মিডিয়াম সাইজের বাজিরাও মাস্তানি থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় ফ্লোর টার্চ লং গাউন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় লেহেঙ্গা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান পার্টি ড্রেস এবং মতিজ থ্রি-পিস। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবি ১৭৮০ থেকে ৪ হাজার টাকা মধ্যে। শিশুদের ইন্ডিয়ান পার্টি ড্রেস বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। ইন্ডিয়ান জর্জেট, গাউন এবং আনস্টিচ থ্রি-পিস ৫ হাজার ৭০০ থেকে ২২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটগুলোতে রয়েছে ভারতীয় শাড়ির বিপুল কালেকশন। শাড়িগুলোর রয়েছে বাহারি নামও। ভারতীয় কাঞ্জিবরন কাতান, ফ্রেঞ্জ শিপন, সিল্ক কোটা, জর্জেট, সামুজ শার্টেন সিল্ক, পিওর সিল্ক, খাড্ডি কাতান, গাদোয়াল কাতান এবং ভলিয়ম কাতান। এগুলো পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে ৪১ হাজার টাকার মধ্যে। চেন্নাই কাতান, দুলহান সিল্ক, রাজগুরু সিল্ক, অপেরা কাতান, কেপফ্রি কাতান, নাইসোর সিল্ক, পাট্টিপাল্লি কাতান, গঙ্গা-যমুনা কাতান শাড়ি। এগুলো বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে নাম ও দোকানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, ভারতীয় পোশাক আধুনিক, চকমকে, কালারফুল এবং দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা ভারতীয় পোশাক কালেকশন করি। তবে সব ব্যবসায়ীই যে অবৈধ পথে এসব পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসে তা নয়। শুল্ক দিয়েই নিয়ম মেনেই বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এসব নিয়ে আসে। তবে অবৈধ ব্যবসায়ী যে নেই তা বলা যাবে না। অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, এসব লিখলে আবার কাস্টমস কর্মকর্তারা হানা দিতে পারেন। তখন আমাদের পেটে লাথি মারা হবে।
ভারতীয় পোশাক ও শাড়ির বিপরীতে মার্কেটগুলোতে রয়েছে দেশীয় কালেকশনও। তবে সেগুলোর বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। দেশী শাড়ির মধ্যে রয়েছে জয়পুরী সিল্ক, অপেরা কাতান, মিরপুরের বেনারসি, ঢাকাইয়া জামদানি, মসলিন জামদানি, টাঙ্গাইলের সুতি এবং সুতি কোটা শাড়ি। এগুলো ২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় শাড়ি মানসম্মত হলেও ভারতীয় নি¤œমানের কাপড়ের কাছে মার খাচ্ছে। আগের মতো রুচিশীল ক্রেতার সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
দেশীয় কাপড়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, অবৈধ পথে যেসব কাপড় আনা হয় সেগুলোর দাম কম পড়ে ফলে ক্রেতারা সেদিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে। বরাবরের মতোই এবারের ঈদ মার্কেটেও ফ্যাশনের বাড়তি আবহ সৃষ্টি করেছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর নিজস্ব সৃষ্টিকর্মের বাইরে প্রতিযোগিতায় টিকতে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, চীন, কোরিয়া, জাপান এমনকি ইতালিসহ ইউরোপ ও আমেরিকার আমদানিকৃত দ্রব্যাদি। তবে প্রায় সর্বত্রই ভারতীয় ডিজাইনের কাপড় ও শাড়ির কালেকশনই বেশি।

http://www.dailysangram.com/post/287569-