১১ জুন ২০১৭, রবিবার, ১১:৩০

বাঙালিদের মধ্যে ভীতি ছড়াতেই পাহাড়ে একের পর এক হত্যা

পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে গত ছয় বছরে আট বাঙালি মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। গুম হয়েছেন আরো অন্তত আটজন। মোটরসাইকেল ছিনতাই বা চুরির জন্য নয়, এসব হচ্ছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এ তথ্য পেয়েছে। নয়ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দু’জনও পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও পিবিআই ওই দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্য নয়, পাহাড়ে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যই সশস্ত্র গ্রুপগুলো পরিকল্পিত এই হত্যার ঘটনাগুলো ঘটায়।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি তারেক মো: আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার খাগড়াছড়ি পুলিশ ও পিবিআই চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে জুনেল চাকমা (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে রাতে দীঘিনালা থেকে রুনেল চাকমা (৩৬) নামে আরো একজনকে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নয়নের মোটরসাইলটি উদ্ধারের চেষ্টা চালায় স্থানীয় প্রশাসন। পরে তারা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন। সেনাবাহিনীর অনুরোধে গতকাল বেলা ১১টা থেকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মাইনী নদীতে অভিযান পরিচালনা করে কাপ্তাইয়ের শহীদ মোয়াজ্জেম নৌঘাঁটির একটি ডুবুরি দল। ডুবুরি দলের অভিযানে নয়নের ব্যবহৃত সাইকেল উদ্ধার হয়।
অভিযানস্থলে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহম্মদ খান, নৌবাহিনীর লে. এম কবীর হোসেন, পিবিআই চট্টগ্রাম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাঈন উদ্দিন, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাহউদ্দীন, দীঘিনালা থানার ওসি সামসুদ্দিন ভূঁইয়া, খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান আটকের বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নয়নকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নিহত নয়নের মোটরসাইকেল উদ্ধারে মাইনী নদীতে নৌবাহিনীর একটি ডুবুরি দল অভিযান চালায়। চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটও অভিযানে যোগ দেয়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি জানান, ২ জুন লংগদুতে পাহাড়ি বাড়িঘরে আগুন দেয়ার পর ভয়ে সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলটি মাইনী নদীতে ফেলে দেয়।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রায় ছয় বছরে খাগড়াছড়িতে অন্তত আটজন বাঙালি মোটরসাইকেল চালক যাত্রীবেশী সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। গুম হন আরো অন্তত আটজন। এদের মধ্যে একজন ছাড়া সকলেই খাগড়াছড়ির বাসিন্দা। অপহরণ হয় অন্তত এক ডজন। এ ছাড়া অস্ত্রের মুখে মোটরসাইকেল ছিনতাই ও চুরি হয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব ঘটনায় আঞ্চলিক উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে পরিকল্পিত। বাঙালিরা যাতে মোটরসাইকেল না চালায়, তারা যাতে এই সেক্টর দিয়ে অর্থ উপার্জন না করতে পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়। আরো রয়েছে বাঙালিদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার কৌশল। পাহাড়ি সশস্ত্রগ্রুপগুলো পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ছাদিকুল ইসলামকে (২৩) দুই উপজাতি মহালছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটির ঘিলাছড়ি উদ্দেশে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি নিখোঁজ হন। তিনদিন পর ১৩ এপ্রিল বিকেলে রাঙ্গামাটির নানিয়াচর উপজেলার ঘিলাছড়ি এলাকায় ছাদিকুল ইসলামের তবিত লাশ মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে নানিয়ারচরের কৃঞ্চমাছড়া গ্রামের বাসিন্দা সাধক চন্দ্র চাকমার ছেলে চিরঞ্জিত চাকমা (৩৬) ওরফে ঠিক বাবু এবং শুক্র কুমার চাকমার ছেলে কৃঞ্চ বিকাশ চাকমা (২৯) ওরফে চোখ্যাকে ছাদিকুল হত্যার সাথে জড়িত থাকার কারণে গ্রেফতার করা হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/227500