১১ জুন ২০১৭, রবিবার, ১১:১৫

দুই তরুণীর বেদনার দুঃসহ ভার

চলতে ফিরতে দেখা

|| ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ||

চলতে ফিরতে কত কী যে দেখি! রাস্তায় হাঁটি। শপিং মলে যাই। বাসে উঠি। টেম্পোতে চড়ি। এর সব জায়গায়ই মেয়েদের নানারূপ নিগ্রহ দেখি। রাস্তায় হাঁটতে গেলে দেখি কোনো বখাটে তরুণ কনুই বাড়িয়ে দিয়ে কোনো মেয়ের শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করে। কোনো কোনো মেয়ে এটা এড়িয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ পারে না। ভীত, ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে ফিরে তাকিয়ে শুধু দেখে। জুতা খুলে বখাটের গাল বরাবর মারতে পারে না। কোনো তরুণকে কখনো এর প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসতে দেখি না। এখন আমার বয়স হয়েছে। তবু সহ্য করতে না পেরে কখনো কখনো চিৎকার করে উঠিÑ এই, এই, কী করছ? তবে ওর টুঁটি চেপে ধরে গালে জোরে চপেটাঘাত করতে পারি না। সেই শক্তি নেই গায়ে। শপিং মলেও একই অবস্থা। মেয়েদের শরীর ছুঁয়ে দেয়ার নানা অপকৌশল দেখি। নিজে প্রতিবাদ করতে পারি না। কাউকে প্রতিবাদ করতেও দেখি না। বাসে উঠতে গেলে মেয়েদের নাজেহালের শেষ নেই। নারী-পুরুষ একসঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু যখন বাস আসে, তখন ভদ্রতার সব মুখোশ খুলে পড়ে।
লাইনের মাঝখানে দাঁড়ানো মেয়ে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে যায় দু’পাশের পুরুষের চাপে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের গায়ের সাথে লেপ্টে যায়, কেউ ভিড়ের চাপে। এখানেই শেষ নয়। এত ভিড়ের মধ্যেও কন্ডাক্টর বাস থেকে নামে না। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। আর কোনো মেয়ে বাসের পাদানিতে পা রাখলেই তার পিঠে হাত দেয়। যেন তাকে উঠতে সাহায্য করছে। কিন্তু না। কন্ডাক্টর আসলে তার গা ছুঁয়ে দেখে বা চাপ দেয়। বাসে ওঠার পর তিন পাশ থেকে পুরুষের চাপ। মেয়েদের সিটে পুরুষরা গাঁট হয়ে বসে থাকে, ছেড়ে দেয় না। কোনো কোনো মেয়ে প্রতিবাদ করে বলে, এটা মেয়েদের সিট, ওঠেন। নির্লজ্জ পুরুষ বলেন, কেনো, আপনারা যে পুরুষদের সিটে বসেন। আমি পুরুষদের সিটে বসে থাকলেও কখনো কখনো কোনো মেয়েকে জায়গা ছেড়ে দেই। কিন্তু কোনো তরুণকে মেয়েদের জন্য নির্ধারিত সিটে তাদের বসিয়ে দিতে এগিয়ে আসতে দেখি না। টেম্পোতেও এ অবস্থা। কোনো তরুণীর পাশে বসা বেহায়া পুরুষ নানাভাবে হাত রাখে, যাতে তরুণীর অঙ্গ স্পর্শ করা যায়। এসব ঘটনা নিত্যদিনের। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে একেকটি মেয়ের জীবনে যে মানসিক বিপর্যয় ঘটে, তার খবর আমরা রাখি না।
পুলিশের কাছে গেলে বেশির ভাগ সময়ই কোনো প্রতিকার তো হয়ই না, বরং নতুন ধরনের শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয়। সে শ্লীলতাহানি শারীরিকভাবে যেমন হয়, তেমনি হয় মানসিকভাবে। পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে খেলা করে। মনে হয়, একটা ‘মজার কাহিনী’ তাদের হাতে এসে পড়েছে। অতএব যাচ্ছেতাই করো। এই পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অভিযোগ শত শত। কিন্তু প্রতিকার কিছুই হয় না। যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সেখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় পুলিশ অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে আটজন ছাত্রীকেও আটক করে। রাতভর তাদের গণনা করতে বারবার আসে ধামরাই থানার পুলিশ সদস্যরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের উদ্দেশে নানা ধরনের অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানায়। পুলিশ কুৎসিত হাসি হাসে বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছে।
এর সর্বশেষ উদাহরণ, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত ওই দুই ছাত্রী ও তাদের একজন বন্ধুকে বনানীর অননুমোদিত হোটেলে নিয়ে যায় জন্মদিনের পার্টির কথা বলে। সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম ওরফে আবদুল হালিম দুই তরুণীকে দু’টি কক্ষে নিয়ে তাদের জোর করে বিদেশী মদ খাইয়ে এবং নিজেরা মদ খেয়ে ইয়াবা সেবন করে ধর্ষণ করেছে। এতে বাধা দিলে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে আসা বন্ধুকে তারা কিল-ঘুষি-চড়-লাথি মারে এবং সেগুলো ভিডিও করে রাখে। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে এই পুরো ঘটনা ৪৮ মিনিট ধরে ভিডিও করেছিল। মামলার আসামি পাঁচজন। এদের দু’জন ধর্ষণকারী, বাকি তিনজন তাদের সহযোগী। সহযোগীদের একজন সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলী জবানবন্দীতে ওই দুই তরুণীকে উপর্যুপরি ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ মার্চ। এরপর লোকলজ্জার ভয়ে এবং ধর্ষণকারীদের হুমকিতে মেয়ে দু’টি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তারা থানায় মামলা করতে যায়। কিন্তু সেখানেও তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার পর তারা বনানী থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি ফরমান আলী প্রথম থেকেই নানা টালবাহানা শুরু করেন। শুধু তাই নয়, সহানুভূতি তো দূরের কথা, তাদের প্রতি কটূক্তি করতে থাকেন। অভিযোগ শুনেই ওসি বলেন, ‘তোমরা কি নর্তকী? তোমরা কি হোটেলে গান গাও? তা না হলে হোটেলে যাবা কেন? টাকা নেয়ার জন্য ওদের ফাঁদে ফেলতে চাও। এই সব কইরা কী হইব। বাসায় যাওগা। জানাজানি হলে বিয়া হইব না। এরা প্রভাবশালী। এই বয়সে বিপদে পড়লে কিন্তু আর উঠতে পারবা না।’ ফরমান আলী এভাবে বিভিন্ন মন্তব্য ও কটূক্তি করতে থাকেন। থানায় মোবাইল ফোনে তাদের ছবি ধারণ করতে বলে ওসি নিজেই ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। এরপর দু’দিন থানায় গেলে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে গণমাধ্যম ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপে মামলা গ্রহণ করলেও আসামিদের না ধরে পালিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করা হয়। ভিকটিমরা বলেছে, আসামিদের স্বজনদের কাছ থেকে ওসি যে পঁচিশ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন, তা ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মামলা শেষ করে দিতে তদন্ত কর্মকর্তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ ওই ভুক্তভোগীদের।
ওই দুই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দীতে তাদের ওপর নির্যাতনের লোহমর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা জানায়, সাফাত পিস্তল তাক করেছিল প্রথম ভিকটিমের দিকে। সে বলে, ‘কিরে চিনোস এইটা?’ সেই সাথে অকথ্য ভাষায় তারা গালিগালাজ করেছে। নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম লাফিয়ে লাফিয়ে কিল-ঘুষি-চড় দিচ্ছিল। তাদের একটাই কথা, ওদের সাথে ‘সেক্স’ করতে হবে। আমরা ছিলাম তিনজন মেয়ে ও একজন ছেলে। তারা এসেছিল জন্মদিনের পার্টিতে। যে ছেলেটি এসেছিল, সে অনেকবার কাকুতি-মিনতি করেছে আমাদের ছেড়ে দিতে। নাঈমের পা ধরেছে; চিৎকার করে কেঁদেছে। তবুও ধর্ষকেরা ছেড়ে দেয়নি। বরং ছেলেটিকে নিয়ে ‘মজা করেছে’। পা দিয়ে লাথি দিয়েছে, চড় দিয়েছে।, আমরা ছাড়া অন্য যে মেয়েটি ছিল, ধর্ষকেরা সেই মেয়েটিকে চেঁচিয়ে জামাকাপড় খুলতে বলছিল। তারা তার অনাবৃত শরীরের নাচ দেখবে। নাঈম বলে, ‘নাচ না, গ্যাং রেপ হবে আজ।’ আমরা সাফাত আর নাঈমের পায়ে ধরে কাঁদতে থাকি। বলি, ‘ভাইয়া, প্লিজ মেয়েটাকে ছেড়ে দিন।’ ধর্ষক নাঈম বলতে থাকে, ‘তাইলে তুই আয়।’ এই বলে মেয়েটিকে ৭০২ নম্বর রুমে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। এদিকে সাফাত টেনে নেয় আরেকজনকে। সারা রাত ধরে চলে নির্যাতন। একপর্যায়ে সাফাতের দুই পা ধরে বলি, ‘ভাইয়া প্লিজ মাফ চাই আপনাদের কাছে, প্লিজ। সাফাত পশুর মতো চিল্লাতে থাকে আর নানা ভাষায় গালি দিতে থাকে। বলে, ‘বলছিলি আসবি না, দেখ কী করি তোদের।’ সাফাত আগেই তার ড্রাইভারকে বলে রাখে। ড্রাইভার বিল্লাল ঘুরে ঘুরে দু’টি রুমের ভিডিও করতে থাকে। হোটেল রেইনট্রির দু’জন কর্মকর্তা ও বেয়ারা এসে খোঁজ নিয়ে যায়, ‘সব ঠিকমতো চলছে’ কি না। বাইরে দাঁড়ানো ছিল সাফাতের বডিগার্ড আবুল কালাম আজাদ। সে বন্দুক হাতে দরজার বাইরে পাহারা দিতে থাকে। অভিযোগকারিণীরা বলেছে, সাফাত আহমেদ চিল্লাতে থাকে, ‘আমার বাপ কি... ফালায়? সোনা বেচে, সোনা! এই দেশের এয়ারপোর্টের সব সোনা কই যায়? কোইত্থেইকা আসে? সব আমার বাপের আন্ডারে। তোগো মতো দুইডা একটারে কাইটা ভাসায় দিলেও কেউ টের পাইব না।’ ধর্ষণ শেষে আমাদের সাথে আসা ছেলেটিকে ইচ্ছামতো লাথি দেয়। বলেÑ ‘তুইও ওই ঘরে গিয়ে... কইরা আয়।’ ছেলেটি অপমান আর কষ্টে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।’
নির্যাতিতারা বলে, ‘এ ঘটনার পর কতবার মনে হয়েছে মরে যাই। কতবার ভেবেছি সব কিছু ছেড়ে পালাই। কিন্তু পারিনি। এরপর মাঝে মধ্যে ওরা আমাদের ফোন করে জানায় যে, আমাদের ভিডিও ছেড়ে দিয়েছে। বলে, ‘তোরা হইলি এখন আমাদের কেনা। যখন ডাকমু, তখন আসবি।’ একপর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেই, পুলিশের কাছে যাবো। যা থাকে কপালে। সব বলব। এভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব।’ থানায় গেলে পুলিশ আমাদের বসিয়ে রেখে নানা কথা বলে ঘুরায়। কিন্তু আমরা নাছোড়বান্দার মতো থানায় পড়ে থাকি।’ শেষ পর্যন্ত থানা মামলা নেয়। ওসি ফরমান আলী ও তদন্ত কর্মকর্তা মতিন চেষ্টা করেছেন মামলাটা শেষ করে দিতে।
কিন্তু তারা তা শেষ করতে পারেননি। ধর্মের ঢাক আপনি বেজেছে। এদিকে আবার কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে এসেছে।
মামলার সূত্র ধরে পুলিশ আপন জুয়েলার্সের আউটলেটগুলোতে হানা দিয়েছে। তার পাঁচটি আউটলেট থেকে সাড়ে পনেরো মণ অবৈধ স্বর্ণ আটক করা হয়েছে এবং সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এত বড় একজন সোনা পাচারকারীকে বমাল হাতে পাওয়ার পরও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রভাব যে তার আছে, সেটা এ থেকেই বোঝা যায়। আবার রেইনট্রি হোটেলের মালিক বি এইচ হারুন পরিবার। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি। তার হোটেলে অবৈধ বিদেশী মদ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের সময় হোটেল কর্মকর্তারা এসে খোঁজ নিয়ে গেছেন যে, সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না। অবৈধভাবে হোটেলটি নির্মাণ করায় একপর্যায়ে রাজউক এসে হোটেলটির গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়েছিল। নিজের প্রভাব খাটিয়ে এমপি হারুন তা আবার চালু করেন এবং রাজউকের অনুমোদন না থাকলেও হোটেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে তিনি সম্পত্তির হিসাব দিয়েছিলেন ৩৮ লাখ টাকা। এখন তা শত শত কোটি টাকায় রূপ নিয়েছে। এর উৎস সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই এমপি কিছুই জানাতে পারেননি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ বলেছে, ওই দুই তরুণীর ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তারা এই কথাও বলেছেন যে, ধর্ষণের এক মাস দশ দিন পর পরীক্ষা করলে আলামত না পাওয়া যাওয়ারই কথা। তবে পুলিশ বলেছে, মেডিকেলের ফরেনসিক প্রতিবেদনে যা-ই আসুক না কেন, রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণের জন্য পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, এ দেশে নির্যাতিতা নারীকে সুবিচার পাওয়া বড়ই দুঃসাধ্য ব্যাপার। মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, ধর্ষণের বেশির ভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়। ধর্ষণের বিচার পেতে নারীকে পদে পদে হয়রানি ও অসম্মানের শিকার হতে হয়। পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চার হাজার আট শ’র বেশি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। কিন্তু বিচার হয়েছে অতি সামান্যসংখ্যকেরই। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ধর্ষণ মামলায় মাত্র তিন থেকে চার শতাংশের সাজা হয়। প্রত্যেক জায়গায় একজন মহিলা বা কিশোরীকেই প্রমাণ করতে হয় যে, সে ধর্ষিত হয়েছে। যেটা আমরা চাই তা হলো, আসামি প্রমাণ করবে যে, সে নির্দোষ। রেপ কেসে এটাই কিন্তু হওয়া উচিত।’
এই দুই তরুণী শেষ পর্যন্ত বিচার পাবে কি না, নাকি প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দম্ভের কাছে পরাজিত হতে হবেÑ তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কিন্তু ওই দুই তরুণীর ওপর যে দুঃসহ বোঝা চেপে বসল তার ভার কোনো দিন নামবে বলে মনে হয় না। এটি শুধু ওই দুই জনের ঘটনাই নয়, হাজার হাজার নারী কিশোরী ও শিশুর জীবনেও এমন বেদনার ভয়াবহ ভার প্রতিদিন নেমে আসছে। কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
উপসংহার
১৯৮৭ সালে চীন গিয়েছিলাম। ঘুম আসে না। হোটেল রুমে জানালার পাশে বসে রয়েছি, চব্বিশ তলায়। রাস্তাঘাট সুমসাম। হঠাৎ হঠাৎ দেখি, বাইসাইকেলে চেপে ঘরে ফিরছে কোনো নারী বা তরুণী, তরুণ। তারপর আবার নিঝুম। দেখে মনে খটকা লাগল। পরদিন সকালে আমাদের সঙ্গী দোভাষীর কাছে জানতে চাইলাম, এই যে মধ্য রাতে তরুণীরা বাইসাইকেলে করে ঘরে ফেরে, তারা কি কখনো ধর্ষণের শিকার হয়? তিনি জানালেন, আগে হতো, এখন আর হয় না। কেন? কী ব্যবস্থা নিয়েছ তোমরা? জবাবে তিনি জানালেন, চীনে কোনো মেয়ে কারো বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির অভিযোগ করলেই শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড। বললাম, কেউ তো শত্রুতা বা প্রতিহিংসা থেকেও অভিযোগ করতে পারে। তিনি বললেন, পারে। তবে বৃহত্তর কল্যাণের জন্য ছোটখাটো ক্ষতি মেনে নিতে হয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/227363