মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ফটো)
১০ জুন ২০১৭, শনিবার, ৮:৫৪

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে সরকার : মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার একদিকে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দিচ্ছে না, অন্যদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আগামী নির্বাচন এককভাবে করার জন্য, বিরোধী দলকে কোনো সুযোগ না দেয়ার জন্যে বিভিন্ন কায়দায় কাজ করছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই সমান্তরাল ফিল্ডে হতে হবে, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। এছাড়া বিরোধী দলের ইফতার অনুষ্ঠানে সরকার বাঁধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
আজ শুক্রবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, সারা দেশে ইফতারের ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকার বাধা দিচ্ছে। শুধু বাধাই দিচ্ছে না, এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করছে। এর থেকে এই সরকারের চরিত্র আরো বেশি করে উন্মোচিত হচ্ছে। সরকার যে মাঝে মাঝে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত না দেয়ার কথা বলে সেটা যে শুধুমাত্র প্রতারণা- এই ঘটনাগুলো থেকে আরো পরিস্কার হয়ে যায়। এসময় বৃহস্পতিবার ভোলার একটি উপজেলা ও বুধবার খুলনার একটি থানায় দলের ইফতার অনুষ্ঠানে পুলিশের বাধা প্রদান এবং সেখান থেকে নেতৃবৃন্দ গ্রেফতারের ঘটনা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ভোলাতে তজুমউদ্দিন উপজেলায় আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ সাহেবের এলাকায় ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে মাইক ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। ইফতারের পরে সেই উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত পরশু একইভাবে খুলনায় আরেক থানায় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী তারা বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আগামী ১২ তারিখে ইফতারের আয়োজন করেছিলো পুলিশ তা বন্ধ করে দিয়েছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফারস হোটেলে ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের উদ্যোগে ইফতার অনুষ্ঠান হয়। ইফতারে মাহফিলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুর হোসাইন কাশেমী, সহসভাপতি মুফতি আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা জহিরুল হক ভুঁইয়া, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্মমহাসচিব শাহীনুল পাশা চৌধুরীসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন মির্জা ফখরুল।
বিশ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম খান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, মুসলিম লীগের কাজী আবুল বাশার, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাংবাদিক উবায়দুর রহমান খান নদভী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ইফতারে অংশ নেন।
ইফতারের আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে, অন্যদিকে তারা বিশেষ বিশেষ ধর্ম প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করছে। আপনারা দেখেছেন যে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই সরকারের সময়ে কীভাবে বিনষ্ট হয়েছে। হিন্দু ভাইদের মন্দির বিনষ্ট করা হয়েছে, তাদের জায়গা-জমি দখল করা হয়েছে, আমাদের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে, আমাদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির রয়েছে, তাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে কয়েকদিন আগে রাঙামাটিতে ঘটনা ঘটেছে।
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুরাবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ম্যাক্রো ম্যানেজমেন্ট- সেটা সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। আজকে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার ওপরে। ইতিমধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থাতে আরো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা চাপিয়ে যে, আমানতের ওপরে লাখ টাকায় আবগারী শুল্ক এই বাজেটে ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট যে দিয়েছে, সেটাতে পুরো করের বোঝা সব জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত রাখতে চাই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বরাবরই বলে এসেছি, আমরা একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করুক, সব মানুষ তাদের নিজের ভোট নিজে দিতে পারুক, তাদের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটুক। আমরা আশা করবো, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, দাম্ভিকতা ছেড়ে দিয়ে সহনশীলতাকে রেখে সব মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে একটি নির্বাচন দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/227064