১০ জুন ২০১৭, শনিবার, ৮:৪০

রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুযোগ

প্রবাসীর চিঠি

|| মঈনুল আলম ||

আবহাওয়া ও পরিবেশ দূষণকারী শিল্প প্রকল্প, বিদ্যুৎ ও তেল কোম্পানিগুলো হতে তিপূরণ আদায় করার জন্য বিভিন্ন দেশে মামলা করার আইনিপ্রক্রিয়া জোরদার হচ্ছে। এ পরিপ্রেেিত বাংলাদেশে সুন্দরবন ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে বলে যারা রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তাদের জন্য এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় শক্তিশালী পদপে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
এপ্রিল মাসে ‘পলিসি হরাইজন কানাডা’ নামে সরকারি দফতর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যাতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে এই বলে যে, আবহাওয়া দূষণকারী শিল্প ও প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যাবে। প্রতিবেদনে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোসহ বাযুদূষণ করা গ্যাস নির্গমনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কিভাবে আইনিপ্রতিবিধান চাওয়া যাবে, তার একটি রূপরেখাও বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পরিবেশ ও আবহাওয়া পরিবর্তন দফতর আবহাওয়া পরিবর্তনকারী কর্মকাণ্ডগুলোকে গুরুতর দৃষ্টিতে পর্যবেণ করছে এবং এমন কিছু নীতি প্রণয়ন করছে, যা বর্তমান এবং প্রজন্মদের কল্যাণ সাধন করবে।’
আবহাওয়া সম্পর্কিত মামলা দায়ের করা বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করছে। নেদারল্যান্ডে ‘আর্জেন্ডা’ নামীয় পরিবেশ সুরা সংগঠন নেদারল্যান্ড সরকার আবহাওয়ায় বায়ুদূষণকারী গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না মর্মে অভিযোগ করে মামলা করেছেন আদালতে। ২০১৫ সালে জুন মাসে নেদারল্যান্ডের আদালত মামলাকারীর পে রায়ে ‘বাসোপযোগী পরিবেশ সুরা ও উন্নয়ন সাধন করা সরকারের কর্তব্য’ মন্তব্য দিয়ে প্রয়োজনীয় পদপে নেয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। ফিলিপাইনে ‘গ্রিন পিস’ নামীয় পরিবেশ সুরা সংগঠন একটি মামলা দায়ের করেছে যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বিশ্বের বৃহত্তম তেল কোম্পানিগুলো আবহাওয়াকে ক্রমাগত দূষিত ও তিকারক করে জনসাধারণের তি করছে এবং তাদের মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করছে; যেমন ২০১৩ সালের ভয়াবহ বার্তা হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে এবং লাখ কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তি ধ্বংস করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা যৌথভাবে গত বছর তিনটি বৃহত্তম তেল কোম্পানি শেল, শেভরন এবং এক্সন-মোবিলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এ সম্পর্কে ‘পলিসি হরাইজন্স’ নামীয় সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘এটি একটি অভূতপূর্ব পদপে’। এই তদন্তের ল্য হচ্ছে যে, নির্ধারণ করা তেল কোম্পানিগুলো কি ইচ্ছাকৃত অবহেলা করছে। এমনকি বায়ু যে দূষিত হচ্ছে এবং তার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়েস্ট কোস্ট এনভায়রনমেন্টাল ল’ নামে পরিবেশ সুরা সংগঠনের মুখপাত্র গেজ বলেন, ‘আমার মনে সন্দেহ’ নেই যে, এই জাতীয় (পরিবেশ ও আবহাওয়া) মামলা হতে থাকবে ক্রমবর্ধমান হারে। কারণ দূষিত আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় যখন জনগণের ব্যয় বাড়তে থাকবে, তখন তারা দাবি করবে যে, এ জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোই এই ব্যয় বহন করুক।’
গেজ বলেন, ‘আবহাওয়া উষ্ণ ও দূষিত হওয়ার কারণে পানির উচ্চতা যখন বৃদ্ধি পায়, শহর-নগর প্লাবিত করে, বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন বাড়ে, এর ব্যয় বহন করার জন্য তিগ্রস্ত পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদগুলো যৌথভাবে যদি বায়ু ও পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পগুলোর বিরুদ্ধে তিপূরণের মামলা করে, তাতে আইনের যথেষ্ট সহায়তা পাওয়া যাবে।’
লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/227126