৯ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১২

ভ্যাট প্রস্তুতি নেই দোকান মালিকদের

আগামী ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২। নতুন আইনে পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে একক ভ্যাট থাকছে। কিন্তু ভ্যাট প্রদানে আগাম কোনো প্রস্তুতি এখনো লক্ষ্য করা যায়নি দোকান মালিকদের মাঝে। অনেকের আবার ভ্যাটের সিসটেম সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই 

। রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মল ও বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি তাদের টার্গেট বড় বড় ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই ২৬ হাজার ব্যবসায়ী ভ্যাট অনলাইনে নিবন্ধন নিয়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি এনবিআর কার্যালায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা পূর্ব কাস্টম এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান বলেন, আগামী ৩০শে জুনের মধ্যেই শতভাগ অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তিনি জানান, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন সনদ প্রদানের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে কমিশনারেট সদর দপ্তর, বিভাগী দপ্তর, প্রতিটি সার্কেল দপ্তরে ভ্যাট হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বরাবর নিবন্ধন গ্রহণের অনুরোধ করে পত্র লেখা হয়েছে। একেএম নুরুজ্জামান বলেন, ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত যে কোন লেনদেনের ওপর ভ্যাট মুক্ত অর্থাৎ ভ্যাট আদায়যোগ্য নয় এবং ৩৬ লাখ টাকার অধিক থেকে ১.৫ কোটি টাকার মধ্যে টার্নওভারের ওপর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ টার্নওভার কর পরিশোধযোগ্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে কোন ব্যবসায়ী যদি অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন না করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভ্যাটের নতুন আইন কার্যকর হবে, এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে কাওরান বাজারের পাইকারি দোকান মেসার্স রয়েল জেনারেল স্টোর মালিক মোহাম্মদ হাসান বলেন, পেপার-পত্রিকা মাধ্যমে জেনেছি। কিন্তু কিভাবে নেয়া হবে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, দোকানে দৈনিক বিক্রি সর্বনিম্ন ৫০ হাজার। অর্থাৎ নতুন আইন অনুযায়ী তিনি ভ্যাটের আওতায় রয়েছেন। তবে তিনি পুরনো আইনে একটি প্যাকেজ হিসেবে ভ্যাট দিয়ে আসছেন।
সূত্র জানায়, আগামী ১লা জুলাই থেকে ভ্যাট দিতে হলে ব্যবসায়ীকে হিসাব রাখতে হবে। হিসাবের জন্য প্রয়োজন একটি ইসিআর বা ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার। কম্পিউটারে বেচাকেনা করলে লেনদেনের সফটওয়্যার। আর অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে তাকে। কিন্তু এসবের কিছুই এখনো করেননি অনেকেই। অথচ ব্যবসায়ীদের এসব প্রস্তুতি নেবার ১ বছর সময় দেয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজনে প্যাকেজের পরিমাণ তারা বাড়াতে আগ্রহী। কিন্তু হিসেব করতে তাদের অনাগ্রহ।
মোহাম্মদ হাসানের মতো রাজধানীর বসুন্ধারা সিটির নিউ ক্যামেরা ওয়ার্ল্ড, মোতালেব প্লাজা, ইর্স্টান প্লাজাসহ বিভিন্ন দোকান মালিকরাও একই তথ্য জানান। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রীর ওপর।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এখনো সরকারের সিদ্ধান্ত বদলানোর আশায় আছেন।
তিনি বলেন, আইনের মধ্যে কিছু মন্দ দিক আছে, সেগুলোকে বাদ দিতে হবে।
এদিকে এনবিআর ভ্যাট প্রশাসন প্রচারণা চালাচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, জনগণ সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছে, এখানে ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র বাহক হিসেবে কাজ করছে, ফলে এখানে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির বা লোকসানের কিছু নেই। ইতিমধ্যেই ভ্যাট অনলাইন নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে রাজস্ব বোর্ড। এর জন্য একটি পৃথক অফিস নেয়া হয়েছে। অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও অন্য কাজ সম্পাদনের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে চালু করা হয়েছে। কল সেন্টার বসিয়ে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। আর লক্ষাধিক ব্যবসায়ীকে দেয়া হয়েছে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ।
আশা করা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা স্ব-উদ্যোগেই তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন এবং অনলাইনে নিবন্ধন করবেন।
ভ্যাট অনলাইনের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সবাইকে ভ্যাট অনলাইনে নিবন্ধন নিতে হবে। তথ্য গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করলেও যেখান থেকে পণ্য কিনেছেন সেখান থেকে তথ্য আসবে, ফলে তিনি ধরা পড়ে যাবেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ২৬ হাজার ব্যবসায়ী ভ্যাট অনলাইনে নিবন্ধন নিয়েছেন। আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে কয়েক লাখ ছেড়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। তিনি বলেন, আপাতত বড় বড় ব্যবসায়ীরা টাগের্ট। এর পরে পর্যায়ক্রমে খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর নজর আনা হবে।


http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=69104&cat=2/