শ্যামপুরের হাড্ডির কারখানা এলাকায় রেললাইনের স্লিপার ও পাথর সরিয়ে তৈরি করা নালা দিয়ে সরানো হচ্ছে তরল বর্জ্য। গত সোমবার ছবিটি তোলা l প্রথম আলো
৭ জুন ২০১৭, বুধবার, ১০:৪২

ঢাকা–না.গঞ্জ রেললাইনের নিচে তরল বর্জ্যের ১০ নালা

কারখানার তরল বর্জ্যে ডুবে গেছে জুলেখা আক্তারের ঘর। তাঁর রান্নাঘরে প্রায় এক হাত সমান পানি। বাধ্য হয়ে মাটির চুলা খাটের ওপরে রেখে রান্না করেন। সাত বছর ধরে এমন পরিবেশে বসবাস জুলেখার পরিবারের।
শ্যামপুর হাড্ডির কারখানা এলাকার বাসিন্দা জুলেখা আক্তার। তাঁর বাড়িটির মতো শ্যামপুরের বরইতলা ও হাড্ডির কারখানা এলাকার অন্তত ৫০টি বাড়িঘর বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত পানিতে ডুবে আছে। ওয়াসার পানির লাইন, গ্যাসের লাইন সব এই বিষাক্ত পানির নিচে ডুবে আছে। জুলেখা আক্তার বলেন, সাত বছর ধরে শ্যামপুরের রেললাইনের নিচ দিয়ে এই এলাকায় তরল বর্জ্য ফেলছে শ্যামপুর-কদমতলীর ডাইং-রোলিং কারখানার মালিকেরা। সে কারণেই এই অবস্থা।
শ্যামপুর-কদমতলীর দুই বালুর মাঠে কারখানা আছে ২০০টি। এর মধ্যে ডাইং কারখানা ৫০টি। পানির ব্যবহার এই কারখানাগুলোয় বেশি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রেলের লোকজনকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে রেললাইনের স্লিপার ও পাথর সরিয়ে নালা তৈরি করেছেন কারখানার মালিকেরা। সেই নালা দিয়ে কারখানার তরল বর্জ্য ঢুকছে রেল লাইনের পূর্ব পাশের এলাকায়। এ পানির কিছু এ এলাকায় জমে থাকছে। কিছু যাচ্ছে ওয়াসার পাগলার লেগুনায়। বাকিটা কদমতলী বাজারে এবং ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরির পাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামপুর বাজার থেকে ওয়াসার মোড় পর্যন্ত অন্তত ১০টি স্থানে রেললাইনের স্লিপার ও পাথর সরিয়ে নালা তৈরি করা হয়েছে। রেলের কর্মকর্তারাই বলেন, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প-কলকারখানার পূর্ব পাশ দিয়ে গেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এই রুটে প্রতিদিন ৩২ বার ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আরিফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক যুগ আগে থেকে কারখানার পানি রেললাইনের নিচ দিয়ে সরাচ্ছেন কারখানার মালিকেরা। রেললাইনের পাথর সরিয়ে নালা তৈরি করে পানি নেওয়ার ব্যাপারে আমি বহুবার মালিকদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তাঁরা শুনছেন না। এভাবে পানি নেওয়ায় যেকোনো দিন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
শ্যামপুর-কদমতলীর শিল্পাঞ্চলের থ্রি স্টার ডাইং কারখানার মালিক মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারখানায় বর্জ্য শোধনাগারের (ইটিপি) ব্যবস্থা নেই। ফলে সব তরল বর্জ্য শ্যামপুর রেললাইনের নিচ দিয়ে ফেলা হয়। অচিরেই ইটিপি বসানো হবে। তখন আর রেললাইনের নিচ দিয়ে বর্জ্য সরানো হবে না। এলাকার লোকজনও কষ্ট পাবে না।
১০ জায়গায় রেললাইনের নিচে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নালা খোঁড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী নালা তৈরিতে সহায়তা করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে আজকালের মধ্যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1208436/