৭ জুন ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৬

মেট্রোরেল প্রকল্প জেনেও নিচে লাইন বসিয়েছিল পিজিসিবি

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থেকে রোকেয়া সরণি হয়ে পল্লবী পর্যন্ত সড়কটি খুঁড়ে তছনছ করা হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন প্রভৃতি সেবা সংস্থার পাইপলাইন সরানোর কাজ চলছে। এর মধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) বিদ্যুৎ লাইন স্থানান্তর কাজও করা হচ্ছে। অথচ বিস্ময়কর যে, এই বিদ্যুতের লাইনটি বসানো হয়েছিল মাত্র চার বছর আগে, যখন এই অ্যালাইনমেন্ট দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়ার বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে।

বিদ্যুতের লাইন রেখে তার ওপর দিয়ে মেট্রোরেল স্থাপন করা সম্ভব নয়। এখন বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থানান্তর করা হচ্ছে। এতে একদিকে সরকারের যেমন বিপুল পরিমাণ আর্থিক দণ্ড যাচ্ছে, তেমনি মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আর এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে তীব্র ভোগান্তি হচ্ছে জনগণের। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে পিজিসিবির অদূরদর্শিতা ও গাফিলতিকে দায়ী করে বলছেন, পিজিসিবি তখন ইচ্ছে করলেই বিদ্যুতের লাইনগুলো ৫-৭ ফুট দূরে স্থাপন করতে পারত। তারা ইচ্ছে করেই সেটা করেনি। এর পেছনে কারণ হলো, একই কাজ দু'দফায় করলে


কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের পকেটে কিছু কমিশনের টাকা ঢুকবে। সরকারের আগাম উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয় মাথায় রেখে বর্তমানের যেকোনো উন্নয়ন কাজ করার ব্যাপারে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে তা উপেক্ষা করা হয়েছে।

অবশ্য এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী সমকালকে বলেন, তারা যখন কোনো কাজ করেন, তখন অনেক দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। রোকেয়া সরণিতে যখন লাইন স্থাপন করা হয়েছিল, তখন মেট্রোরেলের প্রকল্প চূড়ান্ত কিছু হয়নি। সেটা হলে যারা অনুমতি দিয়েছিল, তারাও আপত্তি দিত। মেট্রোরেলের অনুমোদনের আগেই এটা করা হয়েছিল।

তিনি আরও দাবি করেন, এবার পিজিসিবি আগেভাগেই লাইন স্থানান্তরের কাজ শেষ করেছে। অন্যরা এখনও খুঁড়ছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে পিজিসিবি আগারগাঁও থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ২০১২ সালে তারা লাইনের কাজ শেষ করে। যেখানে লাইন স্থাপিত হয়েছে তার অনেক অংশের ওপর দিয়েই যাবে মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের খুঁটির অনেকগুলো পড়বে এই কেবল লাইনের ওপর। ফলে এ লাইনগুলো স্থানান্তর করা ছাড়া উপায় ছিল না।

সর্বশেষ মেট্রোরেলের টেকনিক্যাল কমিটি বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন স্থানান্তরে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করে। এর মধ্যে পিজিসিবির লাইন স্থানান্তরে ব্যয় ধরা হয় ৬২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সেই অর্থে পিজিসিবির লাইন স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়েছে। যে স্থানে লাইন ছিল তা থেকে এবার মাত্র ৫ ফুট সরিয়ে বসানো হয়েছে।

জানা যায়, ২০০৮ সালে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকাকে দেওয়া হয়েছিল মেট্রেরেলের রুট নির্ধারণ ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। জাইকা সম্ভাব্যতা যাচাই করে রিপোর্ট দেয় উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এরই মধ্যে পিজিসিবির কাজ চলতে থাকে। পিজিসিবির লাইন স্থাপনের পরপরই ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। গত দুই বছর ধরে পুরোদমে চলছে মেট্রোরেল স্থাপনের প্রাথমিক কার্যক্রম।

খোঁজ করলে মেট্রোরেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সেবা সংস্থার লাইনগুলো সমন্বয়হীনভাবে একেক সময় একেকভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এসব লাইন কোনোটিই নির্দিষ্ট স্থানে একসঙ্গে নেই। একপাশে লাইনগুলো থাকলে রাস্তার একদিকে কাটলেই হতো। কিন্তু তা না হওয়ায় মেট্রোরেল স্থাপনে রাস্তার প্রায় সর্বত্রই কাটাছেঁড়া করতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী। গত ছয় মাস ধরে রোকেয়া সরণিতে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির যজ্ঞ। কখনও রাস্তার মাঝখানে, কখনও রাস্তার পূর্ব পাশে, কখনও পশ্চিম পাশে।

চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে থেকে মিরপুর ১২ নম্বর পর্যন্ত এখন পুরো সড়কেই গর্ত ও ক্ষতের চিহ্ন। কিছু এলাকায় খনন গভীর হলেও নিরাপত্তা বেষ্টনী না রাখায় যান চলাচল অনিরাপদ। কোথাও খোঁড়া অংশের পাশের রাস্তা ভেঙে গেছে। রাস্তা সংকুচিত হওয়ায় যানজট আরও বেশি। আর প্রচণ্ড ধুলায় জনস্বাস্থ্য হুমকিতে।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে বদলি হওয়া মোফাজ্জল হোসেন সমকালকে বলেন, এসব কাজ ৩০ মের মধ্যে করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুযায়ী অনেক কাজ শেষও হয়েছে। বর্তমানে আগারগাঁও এলাকায় যে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে, তার কিছুটা মেট্রোরেলের। কিছুটা সিটি করপোরেশনে নিজস্ব কাজ। তবে যেসব রাস্তা খোঁড়া হয়েছে, সেগুলো মেরামত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।

মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ আহমদ বলেন, তারা আশা করছেন আগামী জুন মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ করতে পারবেন।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, যেসব এলাকায় খোঁড়ার কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে সিটি করপোরেশন কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করেছে।


http://bangla.samakal.net/2017/06/07/298945#sthash.EJvtnX2D.dpuf