নদী থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র
৪ জুন ২০১৭, রবিবার, ১০:৩১

এত অস্ত্র আসছে কোত্থেকে

এত অস্ত্র আসছে কোত্থেকে? কেনই বা আসছে? কারা নিয়ে আসছে? সবার এখন এই একই প্রশ্ন। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আগ্নেয়াস্ত্রের এত বড় চালান উদ্ধারের ঘটনায় রীতিমতো প্রশ্নের মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরাও। প্রশ্ন জেগেছে এত পুলিশ-গোয়েন্দার নজরদারির ভেতরেও কিভাবে এই অস্ত্র আসছে? গত ১ জুন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যে রূপগঞ্জের একটি লেক থেকে বিপুল সাবমেশিন গান, রকেট লঞ্চার ও গুলি উদ্ধার করা হয়। গতকাল শনিবারও ওই লেকে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলে। মাত্র এক বছর আগে গত বছরের জুন মাসে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন দিয়াবাড়ি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
গত ১ জুন রাত থেকে ২ জুন সকাল পর্যন্ত পূর্বাচল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬২টি চায়নিজ রাইফেল, ৪০টি এসএমজি, দু’টি রকেট লঞ্চার, পাঁচটি পিস্তল, ৫৪টি হ্যান্ডগ্রেনেড, ৪৯টি মর্টার শেল, ৪৪টি ম্যাগজিন, গুলি, ডেটোনেটরসহ বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কোনো অপরাধী চক্র এই বিপুল অস্ত্র গোরাবারুদ এনে থাকতে পারে। তবে কে বা কারা এই আগ্নেয়াস্ত্র এনেছে সে সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো ব্যাগে ভরে একটি ডোবায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
আইজিপি আরো বলেন, এরই মধ্যে এক ব্যক্তি আমাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ওই ব্যক্তির তথ্যের ভিত্তিতে এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রের হাতে আরো অস্ত্র-গোলাবারুদ আছে কি না তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কারা কী কারণে এই গোলাবারুদ মজুদ করেছে তা শিগগিরই জানা যাবে।
এ দিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত বছর রাজধানীর দিয়াবাড়িতে যে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল তার সাথে রূপগঞ্জের ঘটনার মিল আছে। দু’টি স্থানে একই কৌশলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখা হয়। এর পেছনে একই চক্র সক্রিয় থাকতে পারে। এ ঘটনায় উগ্রবাদীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন আস্তানায় যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সাথে এই অস্ত্রের মিল নেই। তবুও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
গত বছরের ১৮, ১৯ ও ২৫ জুন তুরাগ থানাধীন মিরপুর-আশুলিয়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন (বৌদ্ধ মন্দিরের পেছনে) দিয়াবাড়ি খাল থেকে তিন দফায় বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৮ জুন উদ্ধার করা হয় ৯৫টি ৭.৬২ বোরের পিস্তল ও ১৯২টি ম্যাগজিন, দু’টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৮৪০টি গুলি, ১০টি গ্লোক পিস্তলের ম্যাগজিন, এসএমজির (সাব মেশিনগান) ২৬৩টি ম্যাগজিন ও ২১৭টি গুলি, ১০টি বেয়নেট, অস্ত্র পরিষ্কার করার ১৮০টি রড, ১০৪টি স্প্রিংযুক্ত আইএডি বক্স। পরদিন ১৯ জুন এসএমজির ৩২টি ম্যাগাজিন ও ৮টি কিনিং রড পাওয়া যায়। এরপর ২৫ জুন আগের ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দূরের লেক থেকে আরো তিনটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ব্যাগগুলোতে পাওয়া যায় পাঁচটি ওয়াকিটকি, দু’টি বড় আকারের বেতারযন্ত্র, দু’টি এন্টোন ফিডার কেবল, ২২টি ছোট-বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত কৌটা, যাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় রড, আইসি, ক্রিস্টাল, ট্রানজিস্টার, ক্যাপাসিটার, রেজিস্টার ইত্যাদি সার্কিট, বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস ভর্তি ৪০টি পলিথিনের ব্যাগ, পলিথিনে মোড়ানো কালো রঙের সাত প্যাকেট বিস্ফোরক জেল, রুপালি রঙের ৫৫টি ছোট স্প্রিংযুক্ত বাক্স, সবুজ রঙের স্প্রিংযুক্ত ২৭০টি বাক্সসহ আরো কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস। উদ্ধার করা অস্ত্র, গুলি ও ম্যাগজিন একেবারে নতুন, স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো। এর মধ্যে ৭.৬২ বোরের পিস্তল মূলত সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ব্যবহার করে। এই আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় উৎপাদন হয়েছে তার কোনো সীল পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন জেগেছে বিপুল এই আগ্নেয়াস্ত্র কোত্থেকে আসছে? কারা এবং কী উদ্দেশ্যে এই আগ্নেয়াস্ত্র আনছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। কারা এই অস্ত্রের চালান এনেছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট এখনো কিছু জানা যায়নি বলে ওই কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। রূপগঞ্জে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শুক্রবারই পুলিশ সদরের নির্দেশে ওই কমিটি গঠিত হয়। ১০ কার্য দিবসে ওই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রূপগঞ্জের ওসি ইসমাইল হোসেন বলেছেন, এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শরিফ খানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশের বিশেষ টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ঘটনার ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে ওসি জানান।