৩ জুন ২০১৭, শনিবার, ১০:৫৭

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল

ভ্যাট বাড়ল দ্বিগুণ, ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

নতুন অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাই থেকে দ্বিগুণ ভ্যাটের খড়্গ চাপছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ওপর। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওই মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলন করে আসছিলেন; কিন্তু এবারের বাজেটে ভ্যাট বন্ধ না করে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হলো।
ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, বাংলা মাধ্যমে ভ্যাট তো নেওয়াই হয় না; বরং শিক্ষার্থীদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়। আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের উচ্চ বেতনের সঙ্গে এবার উচ্চ হারে ভ্যাটও আরোপ করা হলো। এর মাধ্যমে শিক্ষায় দ্বৈত নীতি প্রচলন করল সরকার।
নাম প্রকাশ না করে সানিডেল স্কুলের একজন অভিভাবক গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার দুই বাচ্চার বেতনের সঙ্গে প্রতি মাসে ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। এখন যদি ভ্যাট ১৫ শতাংশ হয় তাহলে আগামী মাস থেকেই আমাকে অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা দিতে হবে। ’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আসলে সরকার কি উচ্চ হারে ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষাকে নিরুৎসাহ করছে?’
ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১২ সাল থেকে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিয়ে আসছে এই মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। ওই অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরও এই হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাদের ওপর থেকে সেই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ভ্যাট রয়েই গেছে। এর ওপর আবার দ্বিগুণ করা হলো।
তবে এ বিষয়ে গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে সমতা সৃষ্টিতে কোনো সমস্যা হবে না। এতে শিক্ষা ক্ষেত্রেও কোনো বৈষম্য হবে না। ’
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে দেশের ১৫৯টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫ হাজার। তবে বাস্তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি বলে ধারণ করা হয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ৩০০-র বেশি স্কুলে পড়ালেখা করছে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আমিনা রত্না গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন প্রচারে আসল। অথচ এর আগে থেকে আমরা তা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমরা সংখ্যায় কম ও একতাবদ্ধ নই। আমাদের শিক্ষার্থীরা ছোট। আমাদের বাচ্চাদের পক্ষে রাস্তায় নেমে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই সরকার আমাদের খেয়াল করছে না। ’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরাও যদি গাড়ি ভাঙচুর করতে পারতাম, রাজধানী অচল করে দিতে পারতাম তাহলে সরকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ওপর থেকেও ভ্যাট প্রত্যাহার করত। ’
এই অভিভাবক বলেন, সরকারের অন্তত একটা জরিপ করা উচিত যে বর্তমানে কতজন উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে আর কতজন মধ্যবিত্তের। অথচ শিক্ষায় এমন দ্বৈত নীতি থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা এগোবে না।
সানিডেল ও সানবিম স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের টিউশন ফির ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরেরই ১৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করেন। ফলে স্কুলগুলো ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ভ্যাট আদায় বন্ধ রাখলেও নভেম্বর মাসেই তা আবার চালু করে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/06/03/504465