২ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৫

জমানো টাকায় পণ্যের ভ্যাটে নাখোশ মানুষ

ব্যাংকে জমানো টাকায় বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপ ও পণ্য এবং সেবা পণ্যে সবার জন্য অভিন্ন ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপে নাখোশ সাধারণ মানুষ। বাজেট প্রস্তাবের পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গেছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইকতিয়ার রাসেল জানান, ব্যাংকে জমানো টাকা থেকে আবগারি শুল্ক কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত একেবারেই খারাপ হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য এই বোঝা বয়ে বেড়ানো কঠিন হয়ে যাবে। কারণ এই বাজেটে হয়তো বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদেরকে ধরার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু তার প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়বে। সরকারের যারা কর্মচারী আছেন তাদের বেতন-ভাতা দুদিন পরপরই বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করি তাদের বেতন সেই তুলনায় বাড়ছে না। সারা বছর কষ্ট করে আমরা যে টাকা ব্যাংকে জমিয়ে রাখবো সেই টাকা থেকে যদি কেটে নেয়া হয় তা সত্যিই অমানবিক। কাওরানবাজারের স্টেশনারি পণ্য ব্যবসায়ী মো. মামুন জানান, বাজেটে সব পণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার বিষয়টা একেবারে মানানসই না। কারণ আমরা হয়তো পণ্য কেনার সময় ভ্যাট দিয়ে কিনে আনবো। কিন্তু যখন আমরা এই পণ্যটা বিক্রি করবো তখন আমরা ক্রেতার কাছ থেকে সেটা আদায় করতে পারবো না। এতে করে ব্যবসায়ীদের লাভের অংশ থেকে সে ঘাটতিটা পুষিয়ে নিতে হবে। বেসরকারি কোম্পানির সিনিয়র বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাজেটটি সাধারণ জনগণের পক্ষে করা হয়নি। দেশের প্রতিটি বাজেটে সাধারণ জনগণের কথা মাথায় রেখে করা উচিত। পণ্য ক্রয় করতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান ব্যাংকে জমানো টাকার ওপর আবগারি শুল্ক কেটে নেয়া সাধারণ জনগণের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। কারণ আমাদের আয় না বাড়লে এগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। আমাদের আয় বাড়িয়ে যদি উচ্চাভিলাষী বাজেট করা হতো তবেই এর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো। ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, টাকা আয় করে আমরা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখি। আর সেই টাকা থেকে যদি ব্যাংক কেটে নেয়। তবে আমরা টাকা কোথায় রাখবো? একটা উপায় হয়তো আছে বিনিয়োগ করা। কিন্তু বিনিয়োগ করতে গেলে তো সরকার ভ্যাট ট্যাক্স কেটে রাখবে। মোটকথা আমরা যারা সাধারণ জনগণ তাদের কথা চিন্তা না করেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সাধারণ জনগণ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করে। কিন্তু তারা নির্বাচিত হওয়ার পর আর জনগণকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করে না। বাংলামোটর এলাকার রিকশাচালক মহিন মিয়া জানান, আমি বাজেট বুঝি না। কিন্তু রিকশায় অনেক ধরনের যাত্রী উঠে তারা নানান কথা বলে। তবে এটুকু বুঝতে পারি আমাদের মতো গরিবদের কথা কেউ ভাবে না। শুনেছি এখন যা কিনতে যাবো সরকারকে ভ্যাট দিতে হবে। আমরা সারাদিনে কতো টাকা কামাই। খরচ বাড়লেও আয় বাড়ছে না আমাদের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল আমিন জানান, এবারের বাজেটে দেখলাম অনেক পণ্যের ওপর ভ্যাট যোগ করা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য এটা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। সরকার তার ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করছে। রহিম নামের এক সিএনজি চালক বলেন, শুনছি সিগারেট, মসলা, সাবানসহ আরো কিছু পণ্যের দাম বাড়বে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তি। তার ওপর আবার যদি দাম বাড়ে তাহলে আমরা কোথায় যাবো?

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=67988&cat=10/