২ জুন ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৩৩

বরাদ্দ কমেছে শিক্ষা খাতে

শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা অনেক দিন ধরেই বলছে ইউনেসকো। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক সংগঠনগুলোরও একই মত। চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৫.৬ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। শুধু শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৪.৩৯ শতাংশ।

আগামী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ ১৬.৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মনে হতে পারে, শিক্ষা খাতেও বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু বরাদ্দ বাড়ছে প্রযুক্তি খাতে। শুধু শিক্ষায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২.৬৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে বরাদ্দ কমেছে ১.৭৫ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দিয়ে বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন করা হবে। এসবের মধ্যে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয় রয়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা থাকবে কিনা অনেকের মনে এ সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দে এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষায় মোট বরাদ্দের অন্তত ২০ শতাংশ চাই। সে দিক দিয়ে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দও সন্তোষজনক নয়। আর আগামী অর্থবছরে যদি বরাদ্দ কমানো হয় তবে তা হবে খুবই দুঃখজনক। ’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ সবচেয়ে প্রথম প্রয়োজন। আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাই হলো প্রথম ভরসার জায়গা। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা খুবই প্রয়োজন। কারণ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা খুব একটা কাজে লাগে না। যদি একজন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা শেষ করতে পারে তাহলে সে একটা পর্যায়ে পৌঁছে। এসব খাতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা জরুরি। ’
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ১৬.৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই দুই খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫০ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ২২ হাজার ২২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৭ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের জন্য শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ ৫০ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের মোট বাজেট চলতি বছরের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি হলেও এর প্রতিফলন শিক্ষা খাতে তেমন নেই।
শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগ অনুন্নয়ন খাত, অর্থাৎ শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় ব্যয় হয়। অনুন্নয়ন খাতে আগামী অর্থবছরে দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ৩৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দের বাকি টাকা দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে তেমন কিছু করা যায় না বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে চার হাজার ২১৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিনি হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
শিক্ষা প্রকল্পগুলো শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন খাতের টাকা খরচ করতে পারছে না। গত মার্চ পর্যন্ত সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) বরাদ্দের মাত্র ৩৪ শতাংশ ব্যয় করা গেছে। গত দুই মাস ধরে তোড়জোড় করে টাকা খরচ করা হচ্ছে। এর পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরএডিপির প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ফেরত যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব কারণে আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2017/06/02/504049