১ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৭

টানা ৯ দিন বন্ধ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট ব্যবস্থা

রিজার্ভ চুরির পর আবারও কারিগরি ত্রুটি

কারিগরি ত্রুটিতে টানা নয় দিন বন্ধ বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট ব্যবস্থা। অর্থ পরিশোধের বার্তা আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক এ ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যোগাযোগ গত ২৩ মে থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অকার্যকর ছিল। এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এমনকি পণ্য বা সেবা আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নয়টি দেশের সঙ্গে লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ও কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির পর কারিগরি ত্রুটির কারণে কয়েক দিন সুইফট লেনদেন বন্ধ ছিল। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটল। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ তথ্য স্বীকার করেছেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান সমকালকে জানান, বুধবারই এ সমস্যার অনেকখানি সমাধান করা গেছে। এ ঘটনায় অর্থ পরিশোধে সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।


কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৩ মে থেকে আকুভুক্ত নয়টি দেশের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারেননি তারা। তবে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে এলসির ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যবস্থায় পরিশোধ করেছেন।

বিশেষ প্রয়োজন থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করতে পারেননি।


সুইফট সিস্টেমের সমস্যার বিষয়ে রাজী হাসান আরও বলেন, এটি কম্পিউটারনির্ভর একটি ব্যবস্থা। ২০১৩ সালেই পুরো সিস্টেমটি পুনঃস্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল। নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে সময় লাগে। মাঝে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার পর পুনঃস্থাপন কাজটি আরও বিলম্বিত হয়েছে। এ ছাড়া সুইফট কর্তৃপক্ষ থেকেও মাঝে কিছুটা অসহযোগিতা ছিল। তবে এখন তারা সহযোগিতা করছে। সুইফট কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সর্বশেষ সমস্যাটির সমাধান হয়েছে বলে জানান তিনি।


সুইফট তথা 'সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন্স' আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুরক্ষিত একটি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। সুইফট কোডের বার্তায় একটি দেশের ব্যাংক তার গ্রাহকের পক্ষ থেকে অন্য দেশের করেসপন্ডিং ব্যাংককে অর্থ প্রদানের নির্দেশনা দেয়। আমদানি-রফতানির ঋণপত্রের অর্থ এভাবে বিশ্বব্যাপী বৈধ প্রক্রিয়ায় লেনদেন হয়।


তবে আকুভুক্ত নয়টি দেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানির সমুদয় লেনদেন নিজ নিজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। দেশগুলো হলো_ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ইরান। এই নয় দেশের মাধ্যমে বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের অনুরোধ পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই অনুরোধ গ্রহণ করলেও তা গত সাত কার্যদিবস কার্যকর করতে পারেনি।

জানতে চাইলে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান এবং এভিপি আজাদ সমকালকে বলেন, গত ২৩ মে থেকে তারা গ্রাহকদের পক্ষে আকু পেমেন্টের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুইফট সিস্টেমে সমস্যার কারণে লেনদেন ব্যবস্থা বন্ধ আছে। প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যবস্থাটি পুনরায় চালুর আশ্বাস দিলেও বুধবার পর্যন্ত তা হয়নি। গ্রাহকরা পেমেন্টগুলো না হওয়ার কারণ জানতে চাইলেও সদুত্তর দেওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, সুইফট কোডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট করার জন্য তিনটি পৃথক সার্ভার সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন হয়। একটির সমস্যা হলে বাকি দুটি 'ব্যাকআপ' হিসেবে কাজ করে। রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তের জন্য সিআইডি একটি সার্ভার জব্দ করেছে। বাকি দুটি দিয়ে এত দিন কাজ করছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মে মাসের আগেই সমস্যা দেখা দিলে মে মাসজুড়ে ব্যাকআপ ছাড়াই সুইফট সিস্টেম চলেছে। সর্বশেষ সিস্টেমটিও গত ২৩ মে থেকে সমস্যায় পড়েছে।


প্রসঙ্গত, আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সাময়িক ঘাটতি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জমা করা বৈদেশিক মুদ্রা থেকে সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্যাংককে পরিশোধের অনুরোধ জানায়। প্রতিদিনই এমন লেনদেনের পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ কোটি ডলার। গত কয়েক দিনে এমন লেনদেন পুরো বন্ধ ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এলসি পেমেন্ট করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের জমা করা বৈদেশিক মুদ্রা তারা ব্যবহার করতে পারেননি। তবে এ জন্য লেনদেন বিঘি্নত হয়নি। অন্য বেসরকারি ব্যাংক থেকে ডলার বা ইউরো কিনে লেনদেন করেছেন তারা ।

http://bangla.samakal.net/2017/06/01/297361#sthash.bhnkDI3m.dpuf