১ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৬

মাথায় নির্বাচন, নজরে ট্যাক্স

‘সেরা ও বৃহত্তম’ বাজেট নিয়ে আজ সংসদে অর্থমন্ত্রী

নিজের জীবনের ‘সেরা বাজেট’ আজ ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জাতীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে জনগণের ওপর করের ভার চাপানো যাবে না ভেবে এবার পরোক্ষ করের সহজ পথই তিনি বেছে নিচ্ছেন। চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে গিয়ে তিনি ধনী-গরিব সবার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন এবার। উচ্চহারে আয়করের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধের পরও অনেক কষ্টে যারা কিছু অর্থ সঞ্চয় করে ব্যাংকে আমানত রাখবে, সেখান থেকেও দ্বিগুণ হারে আবগারি শুল্ক কাটবেন তিনি। এভাবে নানা উপায়ে ভোক্তার ওপর শুল্ক, কর ও ভ্যাটের চাপ বাড়িয়েও গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য আবুল মাল আবদুল মুহিত চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করছেন আজ, তা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৭.৫ শতাংশ আর সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি।
বড় অঙ্কের এই বাজেটের মাত্র এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা আগামী এক বছর সারা দেশে পরিচালিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় করবে সরকার। বাকি দুই লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে অনুন্নয়নমূলক কাজে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা, এডিপিতে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বাজেট প্রণয়নে অভ্যস্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে আয় ধরছেন দুই লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ আয় পাঁচ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। বাকি আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক, আয়কর, করপোরেট কর ও আমদানি শুল্ক খাত থেকে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বাকি ৩৯ হাজার ৮০১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি ও টোল থেকে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে পাঁচ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার আশা করছে সরকার। অনুদান যেহেতু ফেরত দিতে হয় না, তাই বাজেট প্রস্তাবে এটিকে আয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী বৈদেশিক অনুদান পাওয়া যাবে, এর কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় একই সঙ্গে এই পরিমাণ অর্থকে ঘাটতি হিসেবেও ধরা হয় বাজেটে। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৈদেশিক অনুদান পাওয়া গেলে নতুন অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ ছয় হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান না পাওয়া গেলে ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.০৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে, একটি দেশের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। গত পাঁচ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, বাজেট সংশোধনকালে ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই নেমে আসবে। ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের ওপর ভরসা করতে হবে সরকারকে।
বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ানো। গত এক বছরে দেশে সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে জিডিপির ২৯.৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০.২৭ শতাংশ হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি। এ কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে সরকারের যে ভাবনা ছিল, তাও পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে মাত্র ১৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নতুন বাজেটে কর্মসংস্থানের তুলনায় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে নতুন অর্থবছরে ৭.৪ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রাক্কলন থাকছে বাজেটে।
বিবিএসের তথ্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধির হার হবে আরো বেশি, ৭.২৪ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দেশীয় অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের এ তথ্য সঠিক নয়। নতুন অর্থবছরে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ২২ লাখ ২৪৩ কোটি টাকা।
চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট থেকে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত। এ খাতে সরকারের মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ১৬.৪ শতাংশ। এর পরের অবস্থানই জনপ্রশাসনে। এ খাতে মোট বাজেটের ১৩.৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৫৪ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকবে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। পরিবহন খাতে মোট বাজেটের ১২.৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ থাকছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে মোট বাজেটের ৬ শতাংশ, যার পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী অপরিবর্তিত রেখে তাঁদের জন্য বছরে দুটি উৎসব ভাতার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ১৫ লাখ ভিজিডি কার্ডধারীকে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সঞ্চয়ের জন্য নগদ দেওয়া হবে ২০০ টাকা করে। বয়স্ক ভাতা উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে সাড়ে চার লাখ, ভাতাও বাড়ছে ১০০ টাকা করে।
ভ্যাট ১৫ শতাংশই : বড় বাজেট করতে গিয়ে জনগণের কাছ থেকে নানা কায়দায় রাজস্ব আদায় করার পরিকল্পনা করেছে এনবিআর। সেসব উদ্যোগের সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে ১৫ শতাংশ হার বহাল রেখে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করার উদ্যোগ। ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টির পর ভ্যাটের একক হার কমানোর যে চিন্তা ছিল সরকারের, শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। তবে ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের পরিমাণ ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ নির্ধারণ করা এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার বদলে মোট বিক্রির ওপর দেওয়া টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা যেখানে ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা রয়েছে, তা বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের চাপ থেকে রেহাই পাবে। একই সঙ্গে ভোজ্যতেল, চিনি, দেশে তৈরি ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনারসহ মৌলিক খাদ্যপণ্য, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, কৃষি-উদ্যান ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পণ্য ও সেবা, গবাদি পশুর চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবা; ধর্মীয়, দাতব্য ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের আয় এবং অলাভজনক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব কমবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে যেসব পণ্য ও সেবার ওপর নতুন করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে বা যেসব পণ্য ও সেবার ওপর বর্তমানে সংকুচিত হারে ভ্যাট ছিল, সেসব পণ্য ও সেবার ভোক্তাদের বাড়তি চাপে ফেলবে নতুন বাজেট। এ অবস্থার মধ্যেও আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন কমিয়ে নির্ধারণ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি অর্থবছর ৫.৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছিল। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৫.২৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ।
ভ্যাট অব্যাহতির পণ্য ও সেবা বাড়ছে : ভোজ্যতেল, চিনি ও সব ধরনের লবণ থেকে শুরু করে আটা-ময়দা, সব ধরনের মসলা ও ফল, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মাংস এবং জীবন রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। প্যাকেটজাত তরল দুধ, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের সবজি এ সুবিধা পাচ্ছে আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে। খেজুর, আঙুর, আপেল, আনারস, আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলও পাচ্ছে একই সুবিধা। আদা, জিরা, লবঙ্গ, ধনিয়া, দারচিনি, এলাচসহ অন্যান্য মসলা আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়েও ভ্যাট থাকছে না। বার্লি, ভুট্টা, ধান, সব ধরনের চাল, মুড়ি, গম ও গমের ময়দার ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই নয়, ফুল ও ফুলের তোড়া, পাটজাত পণ্য এবং কৃষি খাতে ব্যবহৃত প্রায় সব ধরনের বীজ, সেচ ও কীটনাশককে নতুন অর্থবছরে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ফার্স্টট্র্যাকভুক্ত সরকারের ১০ প্রকল্প, হাইটেক পার্ক, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে (পিপিপি) বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা থাকছে।
২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম অয়েল সরবরাহ এবং এলপিজি সিলিন্ডার, প্রাকৃতিক গ্যাস (উত্তোলন পর্যায় থেকে ডিস্ট্রিবিউটর পর্যন্ত) ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে। আর ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার ও এসবের যন্ত্রপাতি এবং উপকরণ আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে। দেশীয় ইলেকট্রনিক শিল্পকে সুবিধা দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্পূরক শুল্কে হেরফের, বাড়বে-কমবে বহু পণ্যের দাম : এক হাজার ৫২০টি পণ্যের মধ্যে এক হাজার ৩৫০টি পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক উঠে গেলে দেশীয় শিল্প-কারখানা ধসে পড়ার যে আশঙ্কা দেশের শিল্পমালিকরা করছিলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৮০০ পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু পণ্যের আমদানি পর্যায়ে এ শুল্কহার আরো বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যেসব পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে, সেসব পণ্যের ওপর মোটেই কোনো সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। আর যেসব পণ্যে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে, তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং ৪৫ শতাংশ থাকা পণ্যগুলোর ওপর ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ হচ্ছে। ফলে বেশ কিছু পণ্য আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ছে। তবে আমদানি পর্যায়ে যেসব পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল আছে, সেগুলোর ওপর থেকে ৫ শতাংশ এবং যেসব পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বহাল আছে, সেগুলোর ওপর থেকে ১০ শতাংশ হারে কমানো হচ্ছে। ফলে বেশ কিছু পণ্যের আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক কমছেও। আর যেসব আমদানি পণ্যের ওপর ১০০ ভাগ বা এরও বেশি হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা আছে, সেগুলোর হার অপরিবর্তিত থাকছে আগামী বাজেটে। বিভিন্ন পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্কহার ওঠানামার কারণে আগামী বাজেটের পর ওই সব পণ্যের আমদানি ব্যয় ও দাম কম-বেশি হতে পারে।
চলতি অর্থবছর যেসব পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ রয়েছে সেগুলো বেড়ে ২৫ শতাংশ হচ্ছে। আর যেসব পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে সেগুলোর বেড়ে ৫০ শতাংশ হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ে আগামী অর্থবছরে ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থাকছে, এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে—সব ধরনের মাছ, শুঁটকি মাছ, গুঁড়া দুধ (আড়াই কেজি পর্যন্ত), আঙুর, আপেল, নাশপাতি, ব্ল্যাক টি (তিন কেজি পর্যন্ত), জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, বিভিন্ন ধরনের চকোলেট, খুচরা মোড়কে আনা শূন্য থেকে এক বছরের শিশুদের খাদ্যপণ্য, জ্যাম, জেলি, ফলের রস, সস, আইসক্রিম, প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম পানি, বিটলবন, মার্বেল, গ্রানাইট, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, সালফিউরিক এসিড, পেইন্ট, বার্নিশ, মুখগহ্বর ও দাঁতে ব্যবহৃত সামগ্রী, শেভের আগে, পরে ও শেভের সময় ব্যবহৃত প্রসাধনী, সাবান ও সাবান হিসেবে ব্যবহৃত সমজাতীয় পণ্য, ডিটারজেন্ট, দিয়াশলাই, মশার কয়েল, অ্যারোসল, চামড়া, প্লাস্টিক বা কাপড়ের তৈরি স্যুটকেস, ব্রিফকেস, ভ্যানিটি কেস, হ্যান্ডব্যাগ, শপিংব্যাগ, ওভেন ফেব্রিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন, সব ধরনের পশমি কম্বল, পর্দা এবং ইন্টেরিয়ন ব্লাইন্ড, আসবাবপত্র, কৃত্রিম ফুল ও ফল, কাচের আয়না, অমসৃণ হীরা, ইমিটেশন জুয়েলারি, রেজর, বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারি, রঙিন টিভি, টিভি কার্ডসহ টিভির পার্টস, সিমকার্ড এবং ডেন্টাল প্লেট ব্রাশসহ সব ধরনের টুথব্রাশ।
আমদানি পর্যায়ে ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে যেসব পণ্যে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসছে তার মধ্যে রয়েছে—মিষ্টি বিস্কুট, ওয়েফার্স, পটেটো চিপস, সৌন্দর্য বা প্রসাধনসামগ্রী, সানস্ক্রিন বা সান ট্যানসামগ্রী, হাত, নখ ও পায়ের প্রসাধনসামগ্রী, প্লাস্টিকের তৈরি বাক্স, কেইস, পলিমারের বস্তা ও ব্যাগ, প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা বা তার ফ্রেম, বিভিন্ন ধরনের পোশাক, প্লাস্টিক, রাবার, চামড়ার মিশ্রণ বা এসব উপকরণে তৈরি বিভিন্ন ধরনের জুতা, কাচের তৈজসপত্র, ১২৫ ওয়াট পর্যন্ত টেবিল, সিলিং, দেয়াল ফ্যান ও ফ্যানের যন্ত্রাংশ, কাঠ ও ধাতুর তৈরি সিট এবং স্যানিটারি টাওয়েল ও ন্যাপকিন।
চলতি অর্থবছর যেসব পণ্যে ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক রয়েছে সেসব পণ্যে আগামী অর্থবছর থেকে কোনো সম্পূরক শুল্ক থাকছে না বলে জানা গেছে। আর যেসব পণ্যে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে সেগুলো কমে ২৫ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থাকা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসছে। ফলে এ ধরনের পণ্য আমদানিতে খরচ কমবে, দামও কমার কথা।
যেসব পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে—সব ধরনের পার্টিক্যাল বোর্ড, ওরিয়েন্টেড স্ট্রান্ড বোর্ড, ফাইবার বোর্ড, হার্ডবোর্ড, প্লাইউড, দরজা, জানালা বা তার ফ্রেম ও থ্রেশহোল্ড, শাটারিং, ১০ শতাংশের কম ফাইবার থাকা পেপার ও পেপার বোর্ড, করোগেটেড পেপার ও পেপার বোর্ডে তৈরি কার্টন, বক্স, কেস, ৪০ সেন্টিমিটার বা তার চেয়ে বেশি প্রস্থবেজ বিশিষ্ট বস্তা ও ব্যাগ, ছাপানো পণ্যসামগ্রী, স্মার্ট কার্ডস, পকেট সাইজ রেডিও ক্যাসেট প্লেয়ার ও তাস।
৬০ শতাংশ থেকে সম্পূরক শুল্ক কমে ৫০ শতাংশ হচ্ছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে—চুল পরিচর্যায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রশাধনী, দেয়ালের টাইলস, সিরামিক মোজাইক কিউব, চিনামাটি ও সিরামিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি ও টয়লেটসামগ্রী ও মসৃণ হীরা।
বাজেট ঘোষণা দেড়টায় : অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেদুর রহমান জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ ও ব্যক্তিগত ১১তম বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এটি আবুল মাল আব্দুল মুহিতের একনাগারে নবম বাজেট। এর আগে এরশাদ সরকারের সময় অর্থমন্ত্রী থাকাকালে দুটি বাজেট দিয়েছিলেন তিনি।
শাহেদুর রহমান জানান, প্রতিবারের মতো এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে বা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতার পাশাপাশি বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, বিকশিত শিশু : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা : হালচিত্র-২০১৭, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা, জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন, সংযুক্ত তহবিল প্রাপ্তি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭, মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন), বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন), মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সংক্ষিপ্তসার সংসদ ভবন থেকে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে এসব পুস্তক ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলি ২০১৬-১৭ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/06/01/503706