৩০ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৩৩

পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যমূল্য আকাশ-পাতাল

রোজার সময় ভোগ্যপণ্য ও সবজির দাম বাড়বে না এ রকম প্রতিশ্রুতি সরকারের তরফ থেকে এবারও ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সাধারণ মানুষ টের পেয়ে গেছে রমজানে বাজার কতটা বেপরোয়া।

রাজধানী, বিভাগীয় ও বড় শহরগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোথায়ও ক্রেতারা স্বস্তিতে নেই। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের এত ফারাক। কিন্তু কোনো সদুত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছে। আমদানিকারক দোষ চাপাচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায় দিচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের।
জানা গেছে, বিক্রেতারা নিজেরাই বসে দাম ঠিক করছে নিজেদের ইচ্ছামতো। বিশেষ করে সবজির ক্ষেত্রে এ প্রবণতা বেশি। এতে করে হাত ঘুরতেই দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
এ নৈরাজ্যের মধ্যে ক্রেতারা বলছে, দামের এই অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি রুখতে কার্যকর বাজার তদারকি দরকার, দৃশ্যত যা কোথাও দেখা যায় না।
দুই দিন ধরে ভোগ্যপণ্যের খুচরা ও সবজি বাজার তদারকি করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারগুলোতে দামের পার্থক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। খুচরা ব্যবসায়ীরা তালিকার চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় প্রথমে তাদের সতর্ক এবং পরে জরিমানা করা হয়েছে। তবে দেশের অন্য স্থানের তুলনায় এবার বাজার অনেকটা ভালো ছিল। ’
চট্টগ্রামে প্রশাসন বাজার তদারকি করলেও বরিশাল, রংপুরসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও বড় শহরের চিত্র ভিন্ন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বরিশালের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আককাস হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসন বাজার মনিটর করছে না। মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবারই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা সীমিত আকারে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছে। ’
তবু চালের দাম বাড়ার ধারাবাহিকতা আছে : রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হতে হচ্ছে চালের বাজারে। নতুন ধান ওঠার পর সবাই মনে করেছিল, এ বছরের শুরু থেকে চালের বাজারের যে অস্থিরতা ছিল সেটা এবার কিছুটা কমবে। কিন্তু কমা তো দূরের কথা, নতুন চাল আসার পর সংকট যেন আরো বেড়ে গেছে। এখনো এই বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা চলছে। সবচেয়ে বেশি সংকট তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মোটা চালের বাজারে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এটি ৪৬-৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিনা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ টাকা। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে বড় সাইনবোর্ডে পণ্যের মূল্যতালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মোটা চালের যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য লেখা হয়েছে ৪৬-৪৭ টাকা। এখানকার প্রতিটি দোকানেই ৪৭ টাকা কেজিতে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে। এখানে পাইকারি মূল্য দেওয়া হয়েছে ৪৪-৪৫ টাকা। কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে এ বাজারের তালিকায় টাঙানো পাইকারি দামের মিল পাওয়া গেছে।
ধানমণ্ডির কলাবাগানে এক মুদি দোকানে চাল কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী কাওসার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বছর তো চালের দাম বেড়েই চলছে। এখনো কমার কোনো লক্ষণ নেই। স্বল্প আয়ের মানুষ আমি। চাল কিনতেই দম ফেটে যাচ্ছে। আরো দাম বাড়লে বাধ্য হয়ে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। ’
বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল বিক্রেতা কাওসার জানান, এ মৌসুমে মোটা চালটা কম আসে। তার ওপর সারা দেশেই কিছু কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে ধানের দাম অনেক বেশি। এ জন্যই মূলত চালের দাম কমছে না।
সিলেটের কালীঘাটের সন্তুষী ভাণ্ডারের ব্যবস্থাপক নিপু পাল বলেন, ‘মিনিকেট চাল এখন ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। ১০-১৫ দিন আগে একই চাল ৫৬ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আতপ চাল বর্তমানে ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি, যেটা কিছুদিন আগে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। ’ তবে সিদ্ধ চালের দাম কিছুটা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিরা সিদ্ধ প্রতি কেজি ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আগে এর দাম ছিল ৫১ টাকা।
রাজশাহীতে প্রতি কেজি চালের দাম মানভেদে গত দু-তিন দিনের ব্যবধানে অন্তত দুই টাকা বেড়েছে। গত রবিবার রাজশাহীতে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪২ টাকা, মিনিকেট ৬০ টাকা, ব্রি-২৮ ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে।
চিনি ও ছোলায় দর নির্ধারণ করে কী লাভ হলো : আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কেজিপ্রতি ছোলা ও চিনির দর বেঁধে দিয়েছে। সেই দর অনুযায়ী পাইকারি বাজারে এক কেজি ছোলা মানভেদে ৭৫ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায় বিক্রির কথা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে থেকে পাইকারি বাজারে সেই ছোলা বিক্রি হচ্ছে চার টাকা কমে অর্থাৎ ৭২ থেকে ৭৬ টাকায়। পাইকারি বাজারে দাম কেজিতে চার টাকা কমলেও খুচরা বাজারে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ছোলা। রমজানের শুরু থেকে খুচরায় ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা কেজি। অথচ জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া দর হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
ক্রেতা আরিফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এক কেজি ছোলা সর্বনিম্ন ৭২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাইল দূরে কাজীর দেউড়ীতে সেই ছোলা ৮৮ টাকা দাম হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
দাম এত বেশি থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী পরস্পরকে দোষারোপ করেই দায় সারছে।
নগরীর কাজীর দেউড়ীর খুচরা দোকানি মদিনা স্টোরের কর্ণধার নাছির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন যে ছোলা আমি বিক্রি করছি সেটি ৮০ টাকা দরে প্রায় ২০ দিন আগে কেনা। কয়েক দিন ধরে পাইকারিতে দাম কমেছে ঠিকই, কিন্তু আমার ছোলা তো আগে সর্বোচ্চ দামে কেনা। আমি তো নিরুপায়। ’

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ছোলা আড়তদার পায়েল ট্রেডার্সের আশুতোষ মহাজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দাম বেড়ে যাবে এই শঙ্কায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে কিনে মজুদ করে রেখেছেন। এখন দাম কমে গেলে তো লস তাঁদেরই দিতে হবে। কারণ বেশি কিনে রাখায় বাজারে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে আর এতে দাম বেড়ে গেছে। ’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দাম নির্ধারণ করলে সারা দেশে একই সঙ্গে করা উচিত। ঢাকায় দাম বেশি থাকায় চট্টগ্রামের উৎপাদিত চিনি ঢাকায় চলে যাচ্ছে। এতে তো বাজারে ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজার তদারকি শুরু করেছেন প্রথম রমজান থেকে। আর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ছোলা ও চিনির পাইকারি ও খুচরা দর ঠিক করেছে গত ৪ মে। কিন্তু এই দুই পণ্যের দাম বেড়ে গেছে আরো ১৫ দিন আগে অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝিতে।
একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলছেন, সর্বোচ্চ দাম ছোঁয়ার পর দাম নির্ধারণ করা হলো, যাতে দাম এর চেয়ে নিচে না নামতে পারে।
রোজার আগে যে পণ্যটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ছিল সেটি হলো চিনি। চিনির দাম বাড়ানোর নানা পাঁয়তারা চলছিল। রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের সে উদ্দেশ্যও সফল হয়েছে প্রথম রোজা থেকেই। এদিন তারা ৮০ টাকা কেজিতে সব ধরনের চিনি বাজারে বিক্রি শুরু করেছে।
কারওয়ান বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাইকারি বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের চিনি আনতে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। আমরা তাই তিন হাজার ৫০০ টাকায় (৫০ কেজি) বস্তায় চিনি বিক্রি করছি। তার পরও চিনির সংকট রয়েছে। ’
বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, সব ধরনের চিনিই বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এমনকি চিনি শিল্প করপোরেশনের ৬৫ টাকার চিনিও ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজশাহীর আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী আজিবুর রহমান বলেন, রোজার এক দিন আগে যে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭৮ টাকা দরে, আজ (গতকাল) সেটির দাম গিয়ে ঠেকে ৮৫ টাকায়। একই অবস্থা চিনি এবং ডালের ক্ষেত্রেও হয়েছে। চিনিতে কেজিপ্রতি সাত টাকা দাম বেড়ে হয়েছে ৭২ টাকা। অথচ চিনির দাম ছিল ৬৫ টাকা কেজি।
বগুড়ায় ছোলার দাম দুই দিনেই ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে এখন মানভেদে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সিলেটে চিনি পাইকারি বাজারে ৬৮ টাকা দরে এবং খুচরা বাজারে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আম্বরখানার ভাই ভাই স্টোরের স্বত্বাধিকারী কাওছার আহমদ বলেন, ‘এবার রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তেমন একটা বাড়েনি। কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। ’
হাত ঘুরতেই সবজির দাম এত বেশি : বগুড়ায় বেগুনের কেজি এখন মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। রমজান মাসে কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে এ সবজির দাম। এক সপ্তাহ আগেও বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি ছিল। রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেগুন বিক্রি হচ্ছে মান ও জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এসব বেগুন ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সিলেটে পাইকারি বাজার থেকে ২৮ থেকে ৩৫ টাকা দরে কেনা বেগুন একেক জায়গায় একেক দরে বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। আম্বরখানায় ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বেগুন। একই দামে বিক্রি করছেন বন্দরবাজারের লালবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে রাস্তার বিপরীতে ৪০-৫০ গজ দূরত্বে ব্রহ্মময়ী বাজারে সেই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে।
খুলনার ডুমুরিয়া বাজারে গতকাল সোমবার কথা হয় বেগুনচাষি দিদার শেখের (৬০) সঙ্গে। তিনি দুই ঝুড়ি বেগুন নিয়ে এসেছিলেন। বিক্রি করেন সাত শ টাকা মণ দরে; অর্থাৎ প্রায় ৪০ কেজি সাত শ টাকা; প্রতি কেজি সাড়ে ১৭ টাকা। অথচ খুলনার ময়লাপোতা মোড়ের সান্ধ্য বাজার, নিউ মার্কেট, নিরালা প্রভৃতি কাঁচাবাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
কেন প্রয়োজনীয় এই সবজিগুলোর দাম বাড়ল? বগুড়ার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও আড়ত ঘুরে কোনো সদুত্তর মিলল না। অথচ কৃষকরা ২০ থেকে ২৫ টাকায় বেগুন বিক্রি করেছেন। সেই বেগুনই হাত ঘুরে বাজারে বিক্রি হয়েছে তিন গুণেরও বেশি দামে।
বগুড়ার মহাস্থান বাজারে গতকাল এক কেজি বেগুন বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন ২৫ টাকা। পাশের নওগাঁর ভাণ্ডারপুর বাজারে গোল বেগুন বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন ২৩ টাকা। এই গোল বেগুন কয়েক হাত ঘুরে শহরের বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। অথচ এক কেজি বেগুন জমি থেকে শহরের বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে পরিবহন খরচ মাত্র এক টাকা।
বগুড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিকরা বলেছেন, তাঁরা ৪০-৫০ টাকায় বেগুন বিক্রি করেছেন। বেশি দামে বেগুন বিক্রি হওয়ার জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তাঁরা এই বেগুন কিনেছেন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। সে কারণে তাঁদের বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
একই অবস্থা শসার ক্ষেত্রেও। বগুড়ায় ১০ টাকা কেজির শসা লাফিয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়ে গেছে। রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৩৫ টাকা, আবার কোথাও ৬০ টাকা। রংপুরে বর্তমানে শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিলেটে শসা পাইকারি বাজার থেকে ৩০ টাকা দরে কিনে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া শহরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সাত দিন আগেও ২০ টাকা কেজির বরবটি এখন ৪০ টাকা কেজি। বাজারে লেবুর হালি এখন ২০-২৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আর রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে হালি ২৫-৪০ টাকায়। রংপুরে লেবুর দাম বেড়ে হালিপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে।
বগুড়ার মহাস্থান বাজারে গতকাল পাইকারিতে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ বগুড়া শহরের বাজার ঘুরে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কয়েক দিন আগেও মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। রংপুরে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গতকাল কাঁচা মরিচের মান ও বাজার ভেদে তা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। সিলেটে কাঁচা মরিচ পাইকারি বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বরিশালে সরেজমিনে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, পাইকারি বাজার সিটি মার্কেটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। চৌমাথা বাজারে এ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
সিলেটে এ রকম তারতম্য দেখা গেছে প্রায় সব সবজির বেলায়। পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা কেজিতে কেনা গাজর আম্বরখানা ও লালবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় আর ব্রহ্মময়ী বাজারে তা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ২৪ টাকা পাইকারি দরে কিনে আম্বরখানা ও লালবাজারে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও ব্রহ্মময়ী বাজারে তা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হাঁকা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে আলু ১০ থেকে সাড়ে ১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একই আলু আম্বরখানায় ১৮ টাকা কেজি, লালবাজার ও ব্রহ্মময়ী বাজারে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আম্বরখানা বাজারের সবজি বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, রমজানের শুরুতে সবজির কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে কাঁচা মরিচে ১৫ টাকা, শসায় ২০ টাকার মতো কেজিপ্রতি বেড়েছে।
রাজশাহী নগরীর পাইকারি কাঁচাবাজার সাহেববাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বাজারে গতকাল প্রতিকেজি বেগুন ৪৫, পেঁপে ৪০, করলা ৮০, শসা ৩৫, আলু ১৮, পেঁয়াজ ২৮, ঢেঁড়স ২৫, কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা কেজি এবং কাঁচা কলা ২০ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ রোজা শুরুর এক দিন আগে গত শুক্রবার প্রতিকেজি বেগুন ৩৫, পেঁপে ৩০, করলা ৬০, শসা ২০, আলু ১৫, ঢেঁড়স ২০, কাঁচা মরিচ ৩৫ টাকা কেজি এবং কাঁচা কলা ১৬ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা যায়।
ময়মনসিংহে নূর এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা গেছে, তারা বেগুন বিক্রি করছে পাইকারি ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে। সেই বেগুন ওই দোকানের সামনেই খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি।
বরিশালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচাবাজারের বিক্রেতা প্রতিনিধিদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট করা হয়েছে। সিটি মার্কেটে প্রতিদিন ভোরে সবজি কিনতে এসে সিন্ডিকেটের সদস্যরা একত্র হয়। এ সময় সবাই মিলে কী দরে সবজি বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করে নেয়। দর নির্ধারণ হয়ে গেলে এলাকাভিত্তিক বাজারের বিক্রেতাদের নির্ধারিত দর স্ব স্ব প্রতিনিধি জানিয়ে দেন। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত দরেই সবজি বিক্রি করে বিক্রেতারা। এ জন্যই শহরের অধিকাংশ বাজারেই সবজির দরের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই।
পেয়াজ, রসুনেও ঝাঁজ কম নয় : রাজধানীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুনের দাম না বাড়লেও বেড়েছে আমদানি করা রসুনের দাম। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, চীনের এই রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। যদিও এটি বাজারে ৩৫০-৩৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ায় গত শুক্রবারও প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫ টাকা কেজি দরে। সেই পেঁয়াজের দর গতকাল সোমবার ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। এই পেঁয়াজের দর ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা।

নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না গরুর মাংস : রাজধানীতে যারা মাংস বিক্রি করছে তারা কেউই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত দামে তা বিক্রি করছে না। দোকানগুলো ৫০০-৫৫০ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে। কিছু সুপারশপ ও হাতিরপুল বাজারে শুধু নির্ধারিত ৪৭৫ টাকায় মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মাংস বিক্রেতা মিনহাজ বলেন, ‘একটা গরু আনতে যে পরিমাণ খরচ হয় তাতে করে আমরা কোনোভাবেই পোষাতে পারছি না। ৪৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হলে আমাদের লোকসান দিতে হবে। লোকসান দিয়ে তো আর ব্যবসা করা সম্ভব নয়। ’
রাজশাহীতে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা। তিন-চার দিন আগে যে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা কেজি দরে। তবে দাম বাড়েনি খাসির মাংসের, বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজি দরে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/05/30/502936