৩০ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২৯

প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামি খুঁজে পায় না পুলিশ

গাবতলীতে তাণ্ডব

পরিবহন ধর্মঘটের নামে রাজধানী ঢাকার গাবতলীতে শ্রমিকদের দু'দিনের তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিয়মিত বসছেন ট্রাকচালক ইউনিয়ন কার্যালয়ে, সভা-সমাবেশেও অংশ নিচ্ছেন তারা। তারপরও তাদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ঘটনার প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও একজনও গ্রেফতার হয়নি। গতানুগতিক ভাষায় পুলিশ বলছে, আত্মগোপনে থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে সমকালের অনুসন্ধানে তাদের প্রকাশ্যে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গাবতলীতে বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের কার্যালয়ে প্রায় প্রতিদিনই বসছেন তারা। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশেও অংশ নিচ্ছেন। নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও খোলা রয়েছে। কয়েকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের কথাও হয়েছে একাধিকবার।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এজাহারভুক্ত আসামিদের বেশিরভাগই ট্রাকচালক ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা। আবার তাদের ওপর রয়েছে সরকারদলীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির আশীর্বাদ। এসব কারণে মূলত তাদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ।


জানতে চাইলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আহাম্মদ সমকালকে বলেন, 'মামলার আসামি হয়ে জামিন না নিয়ে কীভাবে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিষয়টি আমি দেখছি।'


সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এক আদালত ট্রাকচালক মীর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এর আগে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর মামলায় বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। এসবের প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের নামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ গাবতলীতে দুই দিনব্যাপী শ্রমিকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পুলিশের রেকার, পুলিশ বক্সসহ একাধিক গাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে তারা। পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে শাহীনুর নামে এক চালকের সহকারী নিহত হয়। এসব ঘটনায় দারুস সালাম থানায় হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ মোট পাঁচটি মামলা করা হয়। একটি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি। অন্য চারটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ৭৯ জনের নামসহ আড়াই হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।


বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজু, সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছাত্তার এবং বালুরঘাট ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাদেক হোসেন তুফান মামলার অন্যতম আসামি। ঘটনার পর পরই পুলিশ বলেছিল, তাণ্ডবের নাটের গুরু শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম তাজু ও সাদেক হোসেন তুফান। তাদের ইন্ধনে শ্রমিকরা তাণ্ডব চালিয়েছে।


অথচ প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও আজও তারা গ্রেফতার হননি। সম্প্রতি গাবতলী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়ন কার্যালয়ে গিয়ে সংগঠনটির সভাপতি তাজুল ইসলাম তাজু ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলীসহ এজাহারভুক্ত একাধিকজনকে দেখা গেছে। এ ছাড়া গত ২০ মে ডেমরার সারুলিয়া (সান্দিরা) ও ডেমরা বালুরঘাট শাখার ট্রাকচালক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন এ দু'জনসহ বেশ কয়েকজন এজাহারভুক্ত আসামি। গত ২৭ মে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক সুলতান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কালাম মুন্সি ও প্রচার সম্পাদক নাছির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আসামি।


তাজুল ইসলাম তাজু ফোনে সমকালকে বলেন, 'নিরীহ শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে, গাড়ি পোড়ায়নি। রেকারে আগুন দেওয়াসহ তাণ্ডব চালিয়েছে অন্যরা, অথচ মামলা হয়েছে আমাদের নামে। পুলিশ এসব মামলার তদন্ত করছে।'


মামলার আরেক অভিযুক্ত সাদেক হোসেন তুফান ফোনে সমকালকে বলেন- 'বাসের শ্রমিকরা জ্বালাওপোড়াও করেছে। গাবতলীর বাসের নেতাদের নামে মামলা না হয়ে এককভাবে আমাদের (ট্রাক শ্রমিক) ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো।' তিনি অসুস্থতার কারণে বাসায় আছেন বলেও জানান।


পাঁচটি মামলার মধ্যে দুটির তদন্ত করছেন দারুস সালাম থানার এসআই মজিবর রহমান। গতকাল ফোনে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, 'তারা গ্রেফতার হয়নি। পলাতক আছে।' তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন প্রশ্নে আরও উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন,' এতকিছু জেনে লাভ কী, বলতে পারব না। আমাকে কেন ফোন দিয়েছেন। আর ফোন দেবেন না।' এর পরই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন। অন্য দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. যোবায়ের সমকালকে বলেন, আসামিরা সব পলাতক। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।


গাবতলীতে তাণ্ডবের ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন- আবুল হাসেম, সামছুল আলম, নসু, আবুল বাশার, কালাম মুন্সী, জালাল, লোকমান ফরাজী, কালাম, আবু বক্কর, ইউসুফ, জজ মিয়া, জামাল, নুরুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, মঞ্জু মিয়া, মিলন, মোবারক হোসেন, রাজিব হোসেন, শাহ আলম, হাবিল শিকদার, সিদ্দিকুর রহমান, কাওসার আহমেদ, মাহবুবুর রহমান, শহর আলী, বশির আহম্মেদ, আবু তালেব, লাট মিয়া, দুলাল, শামীম আহম্মেদ, সালাম, রফিকুল ইসলাম বকুল, পারভেজ খান, আবু মিয়া, আওলাদ হোসেন, মোহাম্মদ আলী, হাবিবুল্লাহ, জাহাঙ্গীর হোসেন, শফিউল্লাহ, সিদ্দিক হোসেন, ইব্রাহিম খলিল, সুমন, মহন গাজী, ওবাইদুল্লাহ, ওহিদ মহাজন, আসলাম, নাছির মহাজন, ওমর ফারুক, খলিলুর খলিল, মোকছেদ আলী, রাজু গাজী, রুবেল, আলাউদ্দিন, জাকির হোসেন প্রমুখ।

http://bangla.samakal.net/2017/05/30/296886#sthash.2oJ6VILX.dpuf