৩০ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৩

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। উপকূলের ৩০৫ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ‘মহাবিপদ সংকেত’ দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর এবং পায়রা ও মংলা বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। 

ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার শক্তির ঝড়ো হাওয়া নিয়ে এ ঘূর্ণিঝড় আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ কক্সবাজারের কুতুবিদয়া, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও হাতিয়া হয়ে উপকূল রেখা অতিক্রম করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতরেরর পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত রোববার থেকেই ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হচ্ছিল। উপকূলের কাছাকাছি এসে ‘মোরা’র শক্তি বেড়ে যাওয়ায় মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার, পটুয়াখালী, বাগেরহাটসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় গতকাল সোমবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেলে কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় লোকালয়ে ঢুকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
উপকূলীয় ১৯ জেলায় মাইকিং করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকাল থেকে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকেই। আবহাওয়া অফিসের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পাশাপাশি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্র বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। তবে বিমানবন্দরগুলো এখনও স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রেখেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেছেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতিই তারা নিয়েছেন। ঝড়ের কারণে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থেকে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ছুটি বাতিল করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।
এদিকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করার পর থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে পণ্য উঠা-নামা বন্ধ করে দেয়া হয়। লাইটারগুলোকে উজানে অবস্থান নিতে বলা হয়। এছাড়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সারা দেশে নদীপথে নৌ-চলাচল। উপকূলে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ‘মোরা’ মোকাবিলায় নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। জলবায়ুগতভাবে বাংলাদেশে এপ্রিল-মে মাস ঘূর্ণিঝড়ের মওসুম।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১২ নম্বর) জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। দুপুর ১২ টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ও মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল।
প্রবল ঘূণির্ঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ (দশ) নম্বর পুনঃ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ (দশ) নম্বর পুনঃ ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৮ (আট) নম্বর পুনঃ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর পুনঃ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, প্রবল ঘূণির্ঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’ এর প্রভাবে আজ বিকেল ৩টার মধ্যে ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়া অফিসের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়েছে, অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে।
‘মোরা’ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে সকল আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা জানান, মন্ত্রণালয়ের সাথে জেলা-উপজেলার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় জেলা প্রশাসনকে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নৌযান প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, উপকূলীয় লোকদের সতর্কতামূলক তথ্য প্রচার ও তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য সিপিপির ভলান্টিয়ারদের অনুরোধ করা হয়েছে। দুর্যোগে যাতে মানুষের কোন জানমালের ক্ষতি না হয় তার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রত্যেক জেলায় ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। নিজের জানমাল রক্ষায় দুর্যোগ সংক্রান্ত বার্তাকে অবহেলা না করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে উপকূলবাসীকে অনুরোধ করেন গোলাম মোস্তফা।
সারা দেশে নৌ-চলাচল বন্ধ : সারা দেশে নদী পথে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, গতকাল দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন নৌপথে ২৯৫টি জাহাজ চলাচল করে। এরমধ্যে বিআইডিব্লিউটিসি’র ৬টি বড় জাহাজ এসব নৌপথে চলাচল করে থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বিকেল চারটায় গণমাধ্যমকে বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে রাজধানীর সদরঘাট থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের নৌযান চলাচল চালু করা হবে।
প্রশমিত হতে পারে তাপপ্রবাহ : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। একই কারণে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, সীতাকুন্ড, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, হাতিয়া, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী ও ঈশ্বরদী অঞ্চলসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে বহমান মৃদু তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে।
গতকাল সকাল ৯টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যৌথভাবে যশোর ও ভোলায় ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ময়মনসিংহ ছাড়া সকল বিভাগে এদিন কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাতের প্রভাবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি দাঁড়ায়। অবশ্য ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েব সাইটে দেয়া সকাল নয়টায় যেখানে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি ছিল, সন্ধ্যা ছয়টায় তা ৩৫ ডিগ্রি উল্লেখ করা হয়। ঢাকায় এদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইল ১৩ মিলিমিটার, ফরিদপুর ৬, মাদারীপুর ১, গোপালগঞ্জ ৬, চট্টগ্রাম ৪, সীতাকুন্ড ১, রাঙ্গামাটি ২৬, কুমিল্লা ৩, চাঁদপুর ৮, মাইজদীকোর্ট সর্বোচ্চ ৫১, ফেনী ৯, হাতিয়া ৩, কক্সবাজার ১০, কুতুবদিয়া ৭, টেকনাফ ৩১, সিলেট সামান্য, রাজশাহী সামান্য,বদলগাছী সামান্য, দিনাজপুর সামান্য, ডিমলা ১, খুলনা ৩২, মংলা ১৬, সাতক্ষীরা ৩৭, যশোর ১, চুয়াডাঙ্গা ৫, কুমারখালী সামান্য, বরিশাল ২৩, খেপুপাড়া ৩৩ ও ভোলায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড়টির নাম কেন ‘মোরা’ : গত ২৬ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর রোববার সকালে তা নিম্নচাপে এবং মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। আর এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম করণ করা হয়েছে ‘মোরা (গঙজঅ)’। ঘূর্ণিঝড়ের এই নামকরণ বিষয়টি নতুন কিছু নয়। প্রথম যে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছিল, সেটা ছিল প্রায় তিনশ’ বছর আগে শ্রীলংকার মহাপরাক্রমশালী রাজা মহাসেনের নামে। আর এ ব্যাপারে নাম প্রবর্তনকারী জাতিসংঘের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আবহাওয়া সংস্থা ‘এস্কেপ’। ‘মোরা’ নামটিও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি অনুমোদিত।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, ‘মোরা’ থ্যাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত নাম। ২০০০ সালে এস্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য। এখান থেকেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী তখন এর নাম দেয়া হয় ‘মোরা’।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং পরদিন তা ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’য় রূপ নেয়। পরে সেটি দক্ষিণপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে।
উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতি : এদিকে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলের দিকে অগ্রসরমান ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আবহাওয়া অধিদফতর সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করার পর উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করে মানুষজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক সভা শেষ জানানো হয়েছে, সে জেলায় ৫৩৮টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজন হলে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্র সরিয়ে আনার প্রস্তুতি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী কক্সবাজারের সাগর তীরবর্তী। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের আশংকায় তারা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
মহা বিপদ ঘূর্ণিঝড় ’ মোরা’। আজ মংগলবার সকাল নাগাদ চট্রগ্রাম - কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ১০ নং সংকেত জারি করা হয়েছে চট্টগ্রাম কক্সবাজারে সমুদ্রবন্দরে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বিকাল থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। নৌ চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর জেটিতে ধাকা সকল জাহাজ নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, সোমবার আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলার পর সতর্কতামূলক এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেটি ও বহিনোঙ্গরে জাহাজে পণ্য ওঠানো ও জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে জাহাজ থেকে যেসব পণ্য আগে জেটিতে নামানো হয়েছিল সেগুলো ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরের সব ভারি যন্ত্রপাতি এবং নিজস্ব জাহাজকে নিরাপদে রাখার কাজ শুরু হয়েছে। আর লাইটারগুলোকে (পণ্যবাহী ছোট জাহাজ) উজানের দিকে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। বন্দর সচিব বলেন, বন্দরে অভ্যন্তর থাকা ২৪টি জাহাজকে বহিনোঙ্গরে পাঠানো হয়েছে। ছুটি বাতিল করা হয়েছে বন্দর অপারেশনাল সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের। ঘূর্ণিঝড় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় মেরিন বিভাগ, পরিবহন বিভাগ ও সচিব বিভাগ নিয়ে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। কোস্টাল ব্যাসেল ও শিপিং বোটগুলোকে নিরাপদ স্থানে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ৩০ মে সকাল নাগাদ চট্রগ্রাম - কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সোমবার বিকাল থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া সহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিঃ মিঃ এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেত (পুনঃ) ০৫ (পাঁচ) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড় ’ মোরা’-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিঃ মিঃ বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার সমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।এদিকে ঘুর্ণিঝড় “মোরা”র মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন,জেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট।
প্রস্তুত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় “মোরা”র মোকাবেলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এর নির্দেশে নগরীর দামপাড়াস্থ বিদ্যুৎ কার্যালয়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এখানে ৩ শিফটে কর্মকর্তারা দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। এছাড়াও শুকনো খাবার,এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, আশ্রয় কেন্দ্র,যানবাহন সহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি ও প্রায় ২ হাজার শ্রমিক সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে জনগণকে সরে আসার জন্য মাইক দ্বারা প্রচার কার্য চালানো হচ্ছে। এছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর আঞ্চলিক অফিস, ওয়ার্ড কার্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ খোলা রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর সম্ভাব্য দূর্যোগ মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্ব পালন করছে। চসিক কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর ৬৩০৭৩৯,৬৩৩৬৪৯
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে এমন আশঙ্কায় চট্টগ্রামের সব চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।সিভিল সার্জন বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ১৬-২৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোলরুম (নম্বর: ০৩১ ৬৩৪৮৪৩) খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে কেউ আহত হলে কিংবা আঘাত পেলে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
জেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ: জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা সোমবার সকাল ১১.৩০ টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিভিল সার্জন, নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, উপ-পরিচালক (ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স), উপ-পরিচালক ( কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর), জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমাস্ এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রতিনিধি এবং এনজিও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবিলায় ঝঙউ অনুসারে সংশ্লিষ্ট সকলের করণীয় বিষয়ে অবহিত করা হয়। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৬,৭২,০০০/-টাকা এবং ৩৪২ মে:টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকের কাযালয়, চট্টগ্রামে একটি সার্বক্ষণিক জরুরী কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে যাহার নম্বর ০৩১-৬১১৫৪৫। প্রত্যেক উপজেলায় সার্বক্ষণিক কন্ট্রোলরুম খোলার জন্য বলা হয়েছে।সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশেষ করে, উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, সন্দীপ, সীতাকু-, মীরসরাই, আনোয়ারা কর্ণফুলী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জরুরি সভা করে ঝঙউ অনুসারে ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, বিশেষ করে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আনয়ন করা, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেয়ার জন্য চট্টগ্রামের ৪৭৯ টি বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ইতোমধ্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৬৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবী উপকূলীয় উপজেলা সমূহে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় হতে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি)গণ এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। অদ্য বিকাল থেকে তারা ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে। পর্যাপ্ত ঔষধ, স্যালাইন ও অন্যান্য ঋরৎংঃ অরফ সামগ্রী মজুদ আছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল টিম , অ্যাম্বুলেন্স সহযোগে জরুরি মেডিকেল সার্ভিস প্রদান করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে তাঁর নিকট মজুদকৃত পানি বিশুদ্ধ করণের টেবলেট বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে টিউবওয়েল সংস্কার করার জন্য ৬০ জন মেকানিকস্ কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা সমূহের ৪৫৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।তথ্য অফিসকে ঘূর্ণিঝড় মোরা বিষয়ে মাইকিং সহ ব্যাপক প্রচারণা চালানোর জন্য বলা হয়েছে। বেসরকারি ইপসা তাদের কমিউনিটি রেডিও এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করছে। সকল আশ্রয়কেন্দ্র,স্কুল, কলেজ খোলা রাখার জন্য বলা হয়েছে।সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
কৃষি, প্রাণিসম্পদ সহ অন্যান্য সকল সরকারি বিভাগ গুলো এবং এনজিওগুলো দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করছে। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী,আনোয়ারা,সীতাকু-,মীরসরাই, আনোয়ারা,কর্ণফুলী উপজেলায় ইতোমধ্যে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে অবস্থান নেয়া শুরু হয়েছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সকলঅকে নিয়ে যাবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও প্রচারণা করেছে।
যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম-বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও উত্তর দিকে সরে বাংলাদেশ উপকূলের ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা, দুগত মানুষকে সহযোগিতা করা এবং উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহন করেছেন যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম।
যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের যুব প্রধান ও রেড ক্রিসেন্ট জেলা ইউনিটের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ বলেন,ঘূর্ণিঝড়ের আগে, চলাকালীন কিংবা পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জরুরি বৈঠকে বসেছে যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের যুব সদস্যরা। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও সিটি করপোরেশনের সাথে জরুরি সম্বনয় সভা করা হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ও সিটি ইউনিটের সহযোগিতায় যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের কার্যালয়কে কন্ট্রোল রুম (০১৬৭৫৬২৮৮৪২, ০১৯১৯০৯৮২০৭) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ৫০ জন যুব সদস্য প্রস্তুত রয়েছে যে কোন দুর্যোগে তৎক্ষণাত সাড়া প্রদানের লক্ষ্যে। তাছাড়া যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের আরো তিনশতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রস্তুত রয়েছে তারা প্রয়োজন সাপেক্ষে সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসবে। জেলার সকল সাইক্লোন সেল্টার, উপকূলের স্কুল ভবনগুলোতেযুব সদস্য প্রেরণ করা হচ্ছেএবং আশ্রয় কেন্দ্রে আসা লোকজনকে প্রয়োজন সাপেক্ষে ইফতার ও সেহেরির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য ঘূর্ণিঝড় মোরা সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
পতেঙ্গা : চট্রগ্রামে ঘুর্নিঝড় মোরা’রপ্রবাহে ৭নং মহা বিপদ সংকেত বলবৎ রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর(আমবাগান) ও পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। গত দুদিন আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপটি আরো ঘনিভূত হয়ে এখন বিপদ জনক ঘুর্নিঝড় মোরা’ হিসেবে রূপ ধারণ করেছে।
এর প্রভাবে চট্রগ্রামে আশে-পাশের সকল এলাকায় লোকজন অনেকটাই আতংকিত রয়েছে বলে জানা গেছে। ঘূর্র্ণিঝড় মোরা’রপ্রভাবে সমূদ্র থেকে মাছ ধরার নৌকা,ট্রলার গুলো কে উপকূল‘র কাছে আনা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
দুপুরের দিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সাগরের পানি অনেকটাই ফুলে/জমে গুমট অবস্থায় দেখা গেছে। তাছাড়া ঘুর্নিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গুলো খোলা থাকলেও কোন লোকজন কে আসতে দেখা যায় নি। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের আশ্রয় কেন্দ্র বিশাল তালা ঝুলতে দেখো যাই। ওয়ার্ড সচিব কে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, রমজান রোজার কারণে হয়তো লোকজন আসছে না। তবে ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রকাশে সিটি মেয়র নাম বলে মাইকিং করতে দেখো গেছে বিকলে সাড়ে ৩টা দিকে।
এদিকে দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসন অফিসে জরুরি সভা থেকে নবাগত ডিসি মোঃ জিল্লুর রহমান জানান,চট্রগ্রামে ঘুর্নিঝড় মুখাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্ততি সহ আশ্রয় কেন্দ্র গুলো লোকজনের জান-মালের নিরাপত্তায় প্রস্তুত রাখার কথা । তবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেই দৃশ্য দেখা যায় নি ।
সর্বশেষ খবর অনুয়ায়ী (আমবাগান) ও পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে যে,ঘূর্ণিঝড় মোরা’কাল সকাল বা ভোর রাতে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার অতিক্রম করতে পারে। এবং দমকা ওজড়ো হাওয়া সহ বজ্র বৃষ্টি,হালকা বৃষ্টি হতে পারে।পরবর্তি বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত লোকজন দের নিরাপদ আশ্রয় বা নিজ নিজ বাসা-ঘর বাড়ি তে থাকতে বলে ছেন। বন্দর-ইপিজেড,নৌ-বিমান সকল কাজের পণ্য উঠা নামা সম্পূন্ন বন্ধ করা হয়েছে বলে চট্রগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানান।
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও করণীয় নির্ধারণে লক্ষ্মীপুরে জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু, পর্যাপ্ত ত্রানের ব্যবস্থা, ১০২টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক হোমায়রা বেগমের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আ স ম মাহতাব উদ্দিন, সিভিল সার্জন মোস্তফা খালেদ আহম্মেদ, জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা ও তথ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ বঙ্গোপসাগারে অবস্থান করছে। এতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলায় সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শত শত ট্রলার সাগরে ॥ স্বজনরা আতঙ্কে
পাথরঘাটা (বরগুনা)সংবাদদাতা : বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে নিম্মচাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মোরা'। এ কারণে গভীর সমুদ্রে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নৌবন্দরে ৭ ন¤¦র ও মংলা ও পায়রা বন্দনে ৫ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি থাকায় পাথরঘাটা উপকুলীয় এলাকায় সকাল থেকে মেঘলা আকাশ রয়েছে।
এদিকে গভীর সমুদ্রে শতশত মাছ ধরা ট্রলার থাকায় স¦জনদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হঠাৎ আবহাওয়া প্রতিকূলে যাওয়া এবং গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপ থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা রূপ নেয়ায় সাগরে থাকা জেলে ও ট্রলার নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছে উপকূলীয় ট্রলার মালিক।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ এবং গভীর সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় সাগরে থাকা জেলেদের আগাম কোন খবর দিতে না পারায় ট্রলারগুলো নিরাপদে আসতে পারেনি। এ কারণে সাগরে থাকা অন্তত ৪ শতাধিক ট্রলার ও জেলেদের নিয়ে শঙ্কিত আছি আমরা। তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর কাছাকাছি ট্রলারগুলোতে আবহাওয়ার খবর পাঠাতে সক্ষম হলেও গভীর সমুদ্রের ট্রলারগুলোকে খবর পাঠাতে পারিনি।
বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান মাঝি বলেন, গত ৩ থেকে ৪দিনের মধ্যে অন্তত ৪ শতাধিক ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেছে। আবহাওয়া হঠাৎ খারাপ হওয়ায় এখন পর্যন্ত আগাম কোন ম্যাসেজ দিতে পারিনি।
অরপদিকে ঘুর্ণিঝড় পুর্ব প্রস্তুতি সভা আবহান করেছে পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসন। সোমবার বিকেলে ৪টায় পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়া কথা রয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলার সিপিপির টিম লিডার অলিউল ইসলাম বাবুল বলেন, প্রান্তিক জনপদে পাইকিং করা হচ্ছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. কামরুল হুদা বলেন, বিকেল ৪টায় জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে আমরা সতর্ক আছি।

http://www.dailysangram.com/post/285855-