২৯ মে ২০১৭, সোমবার, ১২:১৬

১ বছরে ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ

রমজান মাসে সাধারণত বেশির ভাগ এলাকাতেই ইফতারের সময় সুন্নত হিসেবে খেজুর মুখে দিয়ে রোজা ভাঙেন রোজাদাররা। এর পাশাপাশি ইফতারের খাবার হিসেবে পিয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, হালিম, জিলাপি, বুন্দিয়া ব্যবহার করে থাকেন রোজাদাররা। আর এসব আইটেমের দাম গত এক বছরে বেড়েছে দ্বিগুনের বেশি। আইটেমগুলোর গতবার যে মূল্য ছিল এবার সেগুলো দ্বিগুন দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে শতভাগ। তবে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ইফতারির খণ্ডকালীন দোকানগুলোতে ইফতারির দাম হোটেল রেস্তারাঁর চেয়ে কম। অবশ্য এখানেও দাম আগের চেয়ে একটু বেশি।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইফতারির অনেকগুলো আইটেম গরুর মাংস দিয়ে তৈরি হয়। আর গত বছরের চেয়ে মাংসের দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। ফলে এসব আইটেমের দাম বাড়বেই। তবে এবারও ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক বৃষ্টি এবং মোবাইল কোর্ট।
সরজমিন দেখা গেছে, ইফতারির দোকানগুলোয় এলাকা ভেদে বেগুনি, পেঁয়াজু, সমুচা বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পিস হিসেবে। এছাড়া ডিমের আলুর চপ ১০ থেকে ২০ টাকা, জালি কাবাব ১৫ থেকে ২৫ টাকা, ভেজিটেবল রোল ২৫ টাকা, জিলাপি প্রতিকেজি ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দইবড়া প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা, হালিম ৫০ থেকে ৬০০, টানা পরোটা ৪০, কিমা পরোটা ৫০, চিকেন ললি ৬০-৭০, বিফ মিনি কাবাব ৫০-৬০, চিকেন সিংগার স্টিক ৪০, ছোলা প্রতি কেজি ২৫০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।


গত বছর কী রকম মূল্য ছিল এসব আইটেমের এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতারা জানান, বেগুনি, পেঁয়াজু, সমুচার প্রতি পিস মূল্য ছিলো ৩ টাকা থেকে ১০ টাকা হিসেবে। এছাড়া ডিমের চপ, আলুর চপ ১০ থেকে ১২ টাকা, জালি কাবাব ১০ থেকে ১৫ টাকা, ভেজিটেবল রোল ১৫ টাকা, জিলাপি প্রতিকেজি ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় হয়েছিল। এছাড়া চিংড়ি মাছের বল ৪০-৫০ টাকা, দইবড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা, হালিম ৫০ থেকে ৫০০, টানা পরোটা ৩০, কিমা পরোটা ৪৫, চিকেন ললি ৪৫-৬০, বিফমিনি কাবাব ৪০-৫০, চিকেন সিংগার স্টিক ৩০, আলু চপ প্রতিপিস ৫-২০, ছোলা প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এবার।


বিক্রেতারা জানান, রমজানে ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর, পেয়াজ, বেগুন ও ভোজ্যতেলসহ অন্য পণ্যেও মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূলত ইফতারির আইটেমগুলোর দাম বেড়েছে। এসব পণ্য আমারা যদি কম দামে কিনতে পারতাম তাহলে আমরাও কমে দিতে পারতাম। তাদের দাবি, দাম বাড়লেও খুব বেশি বাড়েনি। পণ্যভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানান তারা। তবে সরজমিন রাজধানীর বেইলি রোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারির বিভিন্ন আইটেমগুলোর দাম গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ রাখা হচ্ছে।


নবাবী ভোজ-এর ম্যানেজার একরাম উল হক বলেন, আমরা সাধারণ ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এবার দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছে। তবে খুব সামান্য কিছু দাম বেড়েছে। গড়ে দুই-তিন টাকা বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
বেইলি রোড ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর অভিজাত শ্রেণির মানুষের ইফতারির বাজার হিসেবে খ্যাত বেইলি রোড। মন্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা, ব্যাংকার, বিভিন্ন সরকারি আমলা ও কর্মকর্তা, বড় ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরাই মূলত এখানকার ক্রেতা। তবে সাধারণ মানুষ আসে। এখানে রয়েছে বিখ্যাত ফখরুদ্দিনের ইফতার। এ ছাড়া রয়েছে স্কাইলার্ক, গোল্ডেন ফুড, আমেরিকান বার্গার, ক্যাপিটাল কনফেকশনারি, রেডকোর্ট, বুমার্স, মিস্টার বেকারস, কেএফসি, পিৎজা হাটসহ সব লোভনীয় সব ফাস্টফুডের দোকান। এসব বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলোয় ইফতার সামগ্রী গতবারের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা। তারা জানান, মূলত সুন্দর পরিবেশ ও বাড়তি স্বাদের কারণে বেইলি রোডের ইফতারি কেনেন তারা।


বেইলি রোডে দোকান ভেদে রয়েছে দামের তারতম্য। এখানে দইবড়া প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা, জিলাপি ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, হালিম ২০০ থেকে ১০০০ টাকা, টানা পরোটা ৫০, কাম্মিরী পরোটা ৯০, চিকেন রেশমী কাবাব ২৫০, আলু চপ প্রতিপিস ৫-২০, বেগুনি ও পিঁয়াজু ১০-২০, ছোলা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেইলি রোডে ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ চার ভাইয়ের বিখ্যাত ‘ক্যাপিটাল কনফেকশনারি’। এবারের রোজায় তাদের শতাধিক পদ রয়েছে।
বেইলি রোডে ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ ‘পিঠাঘর’। রমজান মাসজুড়ে রোজাদারদের জন্য থাকবে পাটিসাপটা, ডোবা, চিতই, তেলেভাজাসহ নানা স্বাদের পিঠাপুলি।
বেইলি রোডের ফ্রেশকো ইফতারের জন্য জুস ও শরবতের আইটেম তৈরি করে। পেঁপে, কমলা, মাল্টা, আনারসহ ২৫ ধরনের ইফতারসামগ্রী রয়েছে এখানে।
এ ছাড়া বাছাই করে কেনার সময় নেই যাদের, তাদের জন্য রয়েছে ইফতার প্যাকেজ। ১২ পদের ইফতার প্যাকেজের দাম পড়বে ৩৫০ টাকা। রেস্তোরাঁয় বসে দুই ধরনের সেট মেনু দিয়ে ইফতার করা যাবে। আম্রপালির জুস, শামি কাবাব, হালিম ও ফিরনিসহ ১৭ পদের সেট মেনুর দাম পড়বে ভ্যাট ছাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা।
ছোলা: রমজানে ইফতারির অন্যতম উপকরণ ছোলার কেজি ১০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। পণ্যেটির দাম গত এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
খেজুর: রমজানের অপরিহার্য পণ্য খেজুরের দর এক বছরের ব্যবধানের বেড়েছে ২৩.৩৩ শতাংশ। টিসিবি হিসাবে বর্তমানে বাজারে সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২৫০ টাকায়।
চিনি: এদিকে ঢাকার বাজারে চিনির কেজিতে ৫ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম কেজিতে প্রায় ৫-৮ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চিনি বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৩ টাকা দরে।
পেঁয়াজ: ২০-২৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৮ টাকার মধ্যে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=67453