২৯ মে ২০১৭, সোমবার, ১১:২৮

সরকারি প্রাইমারি স্কুল

প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দেয়া নিয়ে ক্ষোভ

যোগদান না করলে চাকরিচ্যুতি

দীর্ঘ আট বছর পর সরকারি প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে যেসব সহকারী শিক্ষক বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে যে স্কুলে তারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেখানে আর তারা থাকতে পারবেন না। সবাইকেই অন্য থানায় বদলি করা হয়েছে। এ মর্মে জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বদলীকৃত স্কুলে নির্ধারিত তারিখে যোগদান না করলে তারা বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে যাবেন। মানে তাদের আর চাকরি থাকবে না ওই স্কুলে। চাকরি বজায় রাখতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে বদলীকৃত স্কুলে যোগদান করতে হবে তাদের। তা ছাড়া প্রধান শিক্ষক হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করলেও প্রধান শিক্ষক পদের কোনো প্রকার সুযোগসুবিধা তারা পাবেন না। সহকারী শিক্ষক হিসেবে তারা যে বেতনভাতা পান সেটাই পাবেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময় প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রেও তারা কোনো অগ্রাধিকার পাবেন না। এ ধরনের আরো কিছু শর্ত আরোপ করে চিঠি ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ৬৫ ভাগ প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা হয় সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে। বাকি ৩৫ ভাগ পদ পূরণ করা হয় সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু একটি মামলার কারণে ২০০৯ সাল থেকে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট মামলা শেষ হলেও সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যায়নি। কারণ ওই বছরেই ৯ মার্চ প্রধান শিক্ষকের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করে সরকার। ফলে দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগের ভার চলে যায় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) হাতে। কিন্তু পিএসসি নীতিমালার জটিলতার কারণে তারাও এ পদে এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদানের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এ অবস্থায় দীর্ঘ আট বছর ধরে সারা দেশে প্রধান শিক্ষকের হাজার হাজার পদ শূন্য হতে থাকে। বিভিন্ন স্কুলে সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কঠিন দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কোনো ধরনের সুযোগসুবিধা ছাড়াই। এ অবস্থায় গত ২৩ মে থেকে মন্ত্রণালয় এসব ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত থেকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে চিঠি ইস্যু করে। রাজধানীর ৮৭ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে বদলির আদেশ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, চলতি দায়িত্ব প্রদানকে পদোন্নতি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তারা নিজ বেতন স্কেলে বেতনভাতা গ্রহণ করবেন। পিএসসির সুপারিশের ভিত্তিতে পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণযোগ্য এবং সে ক্ষেত্রে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা কোনো অগ্রাধিকার পাবেন না। পদায়নকৃত শিক্ষকদের ১ জুন থেকে বদলীকৃত স্কুলে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় ৪ জুন তারিখে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত হয়েছেন মর্মে গণ্য হবেন।

প্রবীণ শিক্ষকরা জানান, সর্বশেষ শর্তটির মানে হলো যদি কোনো শিক্ষক চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নতুন স্কুলে যোগদান না করেন তবে তিনি চাকরিচ্যুত হয়ে যাবেন। এখন তিনি যে স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন সেই স্কুল থেকে তাকে মুক্ত করা হবে। সেখানে আর তার চাকরি থাকবে না। তার মানে কেউ যদি এ চলতি দায়িত্ব গ্রহণ না করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে আগের স্কুলেই থেকে যেতে চান তা পারবেন না। বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাকে অবমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তার মানে হয় তাকে চলতি দায়িত্ব পদ বেছে নিতে হবে নয়তো চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। প্রবীণ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এ ধরনের শর্ত আরোপ করাটা একেবারেই ঠিক হয়নি।

চলতি দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান বিষয়ে ক্ষোভের কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলেন, প্রথমত কোনো সুযোগসুবিধা নেই। রয়েছে কঠিন দায়িত্ব পালনের বিষয়। আর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো দূরের স্কুলে বদলি করা হয়েছে। নারী শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

জারি করা প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, রাজধানীর কোতোয়ালি থানার একজন নারী সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়ে বদলি করা হয়েছে ডেমরা থানায়। জাফরাবাদের আরেক নারী শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে গুলশানে। আজিমপুরের আরেক নারী শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে মিরপুরে। ডেমরার এক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। এভাবে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এক থানা থেকে আরেক থানায় বদলি করা হয়েছে। যারা বর্তমানে নিজ নিজ কর্মস্থলের পাশে বাসা নিয়ে আছেন, ছেলেমেয়েকে বাসার পাশের স্কুলে পড়াচ্ছেন তারা পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি হলে তাকে আর আগের কর্মস্থলে রাখা যায় না। চিঠিতে চলতি দায়িত্বকে পদোন্নতি হিসেবে গণ্য করা যাবে না মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার তাদের অন্য স্কুলে বদলি করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে ২১ হাজার সরকারি প্রাইমারি স্কুলে (নতুন জাতীয়করণকৃত স্কুল বাদে) প্রধান শিক্ষকের পদ খালি। সরাসরি নিয়োগ বাদে বাকি ১৬ হাজার পদ সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। সে প্রক্রিয়াই শুরু হলো গত ২৩ মে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে।
তবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে জারিকৃত চিঠিতে অপ্রীতিকর অনেক বিষয় থাকলেও তাকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। এর মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকার দরজা খুলে গেছে বলে মনে করেন তারা। যাদের দূরের স্কুলে বদলি করা হয়েছে তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন কোনো কোনো শিক্ষক নেতা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/223881