২৯ মে ২০১৭, সোমবার, ১১:২৪

তারাবি ইফতার ও সেহরিতে ভোগান্তিতে রোজাদাররা

রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যেই চলছে লোডশেডিং

বাংলাদেশ ব্যাংকের আওয়ামী লীগ সমর্থিত অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন খান। তিনি বর্তমানে অবসর জীবন মিরপুর-১২ এ পরিবার নিয়ে কাটাচ্ছেন। তিনি গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করে নয়া দিগন্তকে জানান, ইফতারের ঠিক ১৫ মিনিট আগে মিরপুর এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেছে। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে গ্যাসের চুলা। ইফতারিসামগ্রী প্রস্তুত করার জন্য সব কিছু আনা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস না থাকায় ইফতারি তৈরি করতে পারছেন না। বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারেই বসে আছেন। দিনের অন্য সময়ে লোডশেডিং করে অন্তত ইফতারের সময় বিদ্যুৎ থাকলে সারা দিনের রোজা শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা একটু স্বস্তিতে ইফতার করতে পারেন। অথচ ঠিক ইফতারের আগ মুহূর্তেই বিদ্যুতের লোডশেডিং করা হচ্ছে। তিনি ক্ষোভের সাথে প্রশ্ন করেন, আসলে বিদ্যুৎ বিভাগ কারা চালাচ্ছেন? বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
একসময়ের দাপুটে এ ব্যাংক কর্মকর্তা ও নেতার মতো গতকাল অনেকেই ইফতারের আগে নয়া দিগন্তকে ফোন করে তাদের এ কষ্ট ও ক্ষোভের কথা জানান। শুধু ইফতারের সময় নয়, তারাবির ও সেহরি খাওয়ার সময়ও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না। লোডশেডিং করা হয় এমনই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। যশোর থেকে এক গ্রাহক গতকাল ফোন করে নয়া দিগন্তকে জানান, শনিবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) থেকে প্রতি মসজিদের ইমামদের চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির বক্তব্য শনিবার প্রথম তারাবির আগে মসজিদে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের পড়ে শোনান। তাতে লেখা আছে বিদ্যুতের লোডশেডিং ধৈর্যসহকারে মোকাবেলা করতে হবে। শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। মসজিদে ইমাম আরইবির এ চিঠি পড়ে শোনানো মাত্রই বিদ্যুৎ চলে যায়। অন্ধকারেই তীব্র গরমের মধ্যে মুসল্লিরা তারাবির নামাজ শেষ করেন। বিদ্যুৎ আসে প্রায় দুই ঘণ্টা পড়ে। বিদ্যুতের এ ভোগান্তি কী শহর, কী গ্রাম সব জায়গায়ই একই অবস্থা।


সবচেয়ে বেকায়দায় আছেন ইট পাথরে ঘেরা শহুরে জীবনে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে প্রায় প্রতিটি মসজিদেই একটু আরামে ইবাদত বন্দেগি করার জন্য এসি বসানো হয়েছে। ফলে জানালা-দরজা বন্ধ থাকে ওই সব মসজিদে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করে থাকেন মুসল্লিরা। সারা দিনের রোজা শেষে এমনিতেই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এর ওপর তারাবির সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় দরজা-জানালা বন্ধ অবস্থায় মসজিদগুলোতে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন মুসল্লিরা। অনেকেই গরমে ঠিকতে না পেরে নামাজ শেষ না করেই বেরিয়ে পড়েন। এমনিই কষ্টের কথা জানিয়েছেন ডেমরা এলাকায় বসবাসকারী এক ব্যাংক কর্মকর্তা।
শুধু তারাবি ও ইফতারের সময়ই নয়, সেহরির সময়ও কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে অন্ধকারেই প্রথম রমজানে সেহরি খেয়েছেন অনেকেই।


বিদ্যুতের এ সাতকাহনের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড গড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, শনিবার পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন করা হয়েছিল ৯ হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট। গতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ৯০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা রয়েছে ৯ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। তবে রাত ১০টার পর বোঝা যাবে উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রার বাস্তব অবস্থা। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলে লোডশেডিং করা হচ্ছে কেনÑ এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ বিভাগের আরেক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চালন লাইনের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। আমরা সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি।


প্রসঙ্গত, গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় বিদ্যুৎসচিব ড. আহমদ কায়কাউস ঘোষণা করেন, রমজানে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় লোডশেডিং থাকবে না। লোডশেডিং করতে হলে আগে থেকেই সংশ্লিষ্টদের জানাতে হবে এবং এর শিডিউল করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতি হতে আরো দুই দিন লাগবে। তবে রমজানে পুরোপুরি লোডশেডিং মুক্ত থাকবে না বলে তিনি ঘোষণা করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/223896