২৮ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:২৫

ওয়াদা রাখলেন না ব্যবসায়ীরা

রমযানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে নাগরিকদের। রমযানের আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীকে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না করার ওয়াদা দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। সে ওয়াদা না রেখে নিজেদের ইচ্ছা মতো দাম নিচ্ছে তারা। দায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে বাজার আরও লাগানহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখায় জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মহাসড়কে অব্যাহত চাঁদাবাজির কারণেই সাক সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। রমযানকে কেন্দ্র করে এ চাঁদাবাজি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এতে করে পণ্যের দামও বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এ নিয়ে ব্যবসাযীরা অভিযোগ করলেও চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না।
যখন আদালত প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য বা বনানীর রেইনট্রি হোটেল নিয়ে মত্ত সারাদেশ ঠিক তখনই পণ্য সরবরাহের অজুহাতে বাজার গরম করছে ব্যবসায়ীরা। এতে করে বিপাকে পড়ছে ব্যবসায়ীরা।
রাতের ব্যবধানে চিনি অথবা ছোলার মতো রমযানের নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে কপালে ভাঁজ পড়ছে নিম্ম আয়ের মানুষের। এসব মানুষের প্রশ্ন রমযান এলেই কেন এসব ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তারা বলেন, রমযানে বিক্রি বেড়ে যায় কয়েক গুণ্ এতে লাভও হয়ে থাকে কয়েকগুণ বেশি। তাহলে দাম বাড়ে কেন। দাম না বেড়ে দাম কমার কথা থাকলেও উল্টো পথে হাটছেন এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরই এসব ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়ে থাকেন পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তারপরেও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। আর ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই কারসাজি বাড়ছে।
জানা গেছে সপ্তাহ ব্যবধানে চেনা চিনির অচেনা দাম। এক রাতে দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা। গত সপ্তাহেও দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ৬৫ টাকার চিনি বিক্রি হয়ে ৮০ টাকা। অথচ ব্যবসায়ীরা বলছেন মজুদ এবং সরবরাহ রয়েছে স্বাভাবিক। তাহলে দাম বৃদ্ধির জন্য কে দায়ী?
আর ছোলার উত্তাপ ছাড়িয়ে গেছে আবহাওয়ার গরমকেও। এক মাস আগেও ছোলা পাওয়া যেত ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে। তবে, এখন বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। চাল নিয়ে চালবাজি তো চলছেই। দাম বাড়ার তালিকায় যোগ হয়েছে খেজুর, মুড়ি বা বেসনের মতো রমযানের নিত্যপণ্যও। একইভাবে বাড়ছে কাচামরিচ, পেঁয়াজ, কালা বেগুন, শশা, ধনিয়াপাতা প্রভৃতি।
এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে মনে করছেন ভোক্তভোগীরা। আর সরকার বলছে মনিটরিং হচ্ছে নিয়মিতই। তাহলে বাজার বাড়ছে কেন।
গত ২৪ মে এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, পণ্য সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো পণ্যের সংকট বা মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। চিনি, ছোলা, ভোজ্য তেল, ডাল, খেজুরসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আমদানি করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সততার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিগত দিনের মতো শুধু রোজা নয়, সারা বছর পণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। প্রশ্ন উঠেছে প্রতিটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিংসহ সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ভোক্তারা যাতে কষ্ট না পায়, সে জন্য ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল কিনেছে। কৃষকদের জন্য ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক বলবৎ থাকবে।
এদিকে রোজায় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কাওরানবাজারের ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে এ দাবি জানান। তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলেন, সড়কে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে আছে। কাওরান বাজারেও চাঁদাবাজি সহ্য করা হবে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়কে চাঁদাবাজি কমলে সবজির দাম আরও কমবে। এছাড়া রোজায় রাজধানীতে সবজিবাহী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার দাবিও জানান তারা। রোজায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা বিক্রেতা দুপক্ষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক।
অন্যদিকে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম রাখায় হাতিরপুল বাজারের একটি দোকানকে জরিমানা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শনিবার দুপুরে ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট মামুন সরদারের ভ্রাম্যমাণ আদালত লিটন স্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
এ সময় উপস্থিত ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, কেউ যদি নির্ধারিত দামের বেশি আদায় করেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, রমযানে ডিএসসিসির ২৯টি কাঁচাবাজারে কর্পোরেশনের ৮টি মনিটরিং টিম থাকবে। এদের নেতৃত্ব দেবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তারা পুরো রমযান মাস বাজার মনিটরিং করবেন। বেশি দাম রাখলে ডিএসসিসিকে অভিযোগ করতে ক্রেতাদের অনুরোধ করেন তিনি।

http://www.dailysangram.com/post/285616-