২৮ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:১৪

নানামুখী দুর্ভোগ নিয়ে রমজান শুরু

নানামুখী দুর্ভোগ নিয়ে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রাজধানীতে গ্যাস, পানি, যানজট আর খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণা চলছে আগে থেকেই। রমজানে এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং তা বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। প্রচণ্ড গরমে রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে লোডশেডিং ভোগান্তি। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে রমজানে সেহরি ও ইফতারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে বেশি। এই সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে আগে থেকে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিকে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় চলছে গ্যাস ও পানি সংকট। ঢাকা ওয়াসা ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রমজান উপলক্ষে তারা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সঙ্গে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকায় ঘাটতি থেকেই যাবে। এদিকে রাজধানীজুড়ে সড়কে যে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে এতে দুর্ভোগে রয়েছেন অনেক এলাকার মানুষ। রমজান ও ঈদ ঘিরে রাজধানীতে মানুষের যাতায়াত বাড়লে এ সমস্যা আরো প্রকট হবে। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে দিনভর। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলে তা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

বিপুল ঘাটতি নিয়ে সংকটে বিদ্যুৎ বিভাগ: বর্তমানে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু পিডিবির (বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) সূত্র মতে, গতকাল থেকে উৎপাদন হয়েছে দশ হাজার ৫০ মেগাওয়াট। তাদের হিসাবে মেরামতে থাকা ৮০০ মেগাওয়াটের ২ থেকে ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র শনিবারে উৎপাদনে এসেছে। এদিকে, একই সঙ্গে উৎপাদিত গ্যাসের বিপুল পরিমাণ অংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করার সিদ্ধান্তে রাজধানীতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দেবে। এছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা থেকেও গ্যাস কাটছাঁট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে দেয়ার কথা রয়েছে। এতে রমজান মাসজুড়ে শত শত ছোট-বড় শিল্প-কারখানা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাবে না। যার কারণে আগামী ঈদকে কেন্দ্র করে উৎপাদনে থাকা শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হবে। জানা গেছে, রমজানে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে ১০ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট। কিন্তু এই সময়ে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে কমপক্ষে ১২ হাজার মেগাওয়াট। যেভাবে গরম পড়ছে, বৃষ্টি না হলে প্রতিদিনই এ চাহিদা বাড়বে। এতে রমজানে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশ্বস্ত করেছেন, এবারের রমজানের প্রথম দিন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দশ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করা সম্ভব হবে। আর সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা আছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কাজেই রোজায় বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগ হবে না। বিশেষ করে ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এই সময়ে কোনো ধরনের লোডশেডিং করতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগে থেকে ঘোষণা দেয়া হবে, যাতে রোজাদাররা প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের তেমন কোনো সমস্যা হবে না। এ জন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের মতে, গরমের কারণে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই এই লোডশেডিং শূন্য হয়ে যাবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ খাতের বিশেষজ্ঞ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, জোড়াতালি দিয়ে সংকট নিরসন করতে গিয়ে সব ক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হবে। অনেক এলাকার শিল্প-কারখানায়ও গ্যাস কমিয়ে দেয়া হবে। শিল্প-কারখানায় গ্যাস কমিয়ে দেয়া হলে ব্যাহত হবে শিল্পোৎপাদন। আর শিল্প উৎপাদন কম হলে শ্রমিক-কর্মচারীরা সমস্যায় পড়তে পারেন। ঈদের বেতন-বোনাস নিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। কারিগরিভাবে সমাধান না করে এভাবে জোড়াতালি দিয়ে কোনো লাভ হবে বরং সংকট বাড়বে।
পিডিবি হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ২১২ মেগাওয়াট। প্রথম রোজা থেকে এটা বাড়িয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট করা হবে। এতে তাদের হিসাবে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ঘাটতি লোডশেয়ারিং করে সমন্বয় করা হবে। তার মতে, এখন লোডশেডিং নেই। যা হচ্ছে তা লোডশেয়ারিং। এ প্রসঙ্গে পিডিবি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, রমজানে সেহরি, ইফতার ও তারাবির নামাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শহর এলাকার পাশাপাশি গ্রামেও। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রমজানে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো।
সূত্রে জানায়, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এখনই গড়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন সমিতিগুলোর বিতরণ এলাকায় ৮০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ উপকেন্দ্রগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে বিভিন্ন এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কোনো কোনো এলাকায় দু-একদিন পর বিদ্যুতের দেখা মিলে। ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো এলাকায় বিক্ষোভও হয়েছে। চলতি বছর রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। গত বছরের দিবাপিক, সন্ধ্যাকালীন পিক এবং সেহরির সময় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল পর্যায়ক্রমে ৭৯০০, ৯০৩৬ ও ৮৮৪১ মেগাওয়াট। এ বছর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৯৩০, ১০ হাজার ২০০ ও ১০ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। গত বছর রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দৈনিক গড় সরবরাহ ছিল এক হাজার ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং সর্বোচ্চ সরবরাহ ছিল এক হাজার ১১৬ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এ বছর গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লেও গ্যাসের সরবরাহ এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে ৯৪০ থেকে ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে। চলতি বছর বিদ্যুতের উৎপাদন চাহিদা পূরণ করতে হলে ১১৫০ থেকে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছাড়াই একের পর এক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখন পেট্রোবাংলাকে গ্যাস সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, চাইলেই গ্যাস সরবরাহ করা যায় না। প্রতিনিয়ত গ্যাসের উৎপাদন কমে আসছে। ফলে পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা কঠিন।
এদিকে রাজধানীর কিছু এলাকার বাসিন্দারা গ্যাস সংকটে রয়েছেন। পূর্ব রাজাবাজার এলাকার ১৪৬ ও ১৪৬/২ বাসার মালিক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বেশিরভাগ দিনই এই এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকে। ফলে দৈনন্দিন কাজে খুবই সমস্যা হয়। একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, প্রায়ই গ্যাস থাকে না। সকালে গ্যাসের চাপ খুব কম থাকে। আবার দুপুর ২টার পর গ্যাস আসে। রোজার মাসে এমন সমস্যা থাকলে বিকল্প খুঁজতে হবে।
তবে, বর্তমানে রাজধানীতে গ্যাসের সংকট তুলনামূলক কম বলে জানান তিতাসের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি জাতীয় পর্যায়ে গ্যাসের সঙ্কট, অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে রাজধানীর কিছু এলাকায় গ্যাসের কিছুটা সংকট রয়েছে। তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী এইচ এম আলী আশরাফ মানবজমিনকে জানান, জাতীয় পর্যায়ে ৫০০ মিলিয়ন ঘন ফুট আর তিতাসের ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে। তবে, ঢাকার যে সব এলাকায় গ্যাস সংকট আছে সেসব এলাকায় গ্যাসের লাইনে কাজ চলছে। আর উত্তরখান, দক্ষিণখান, ভাটারা এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুন করে আবার তারা সংযোগ দিচ্ছে। তিতাস সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় তিতাসের বৈধ সংযোগ রয়েছে ২৩ লাখ ৫ হাজার ২৩১টি। আর অবৈধ সংযোগ আছে ২ লাখের বেশি। সূত্রে জানা যায় বৈধ সংযোগে গ্যাস ব্যবহার করা হয় ২৪ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট। যা মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১২ শতাংশ। আর অবৈধ গ্যাস সংযোগগুলো চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সংকট একেবারেই কমে যাবে।
এদিকে গত কয়েকদিনের গরমে রাজধানীবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে নগরের কিছু এলাকায় চলছে তীব্র পানির সংকট। আবার কিছু এলাকায় অনিয়মিতভাবে পানি পাওয়া গেলেও ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে তা ব্যবহারের অনুপযোগী। রমজানে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় পানির এ সমস্যা তীব্র হতে পারে মনে করেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। যদিও ওয়াসা বলছে, রমজানে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা পূরণে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, আদাবর, বাড্ডা, বনশ্রী, মধুবাগ, হাতিরঝিল, মগবাজার, বেগুনবাড়ি, চান মিয়া লেনসহ কিছু এলাকা ঘুরে ও এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পানির তীব্র সংকটের সত্যতা পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, রমজানে পানির চাহিদা বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে পানির সংকট। বেশকিছু এলাকার বাসিন্দা জানান, অনেক জায়গায় ওয়াসার পানি এসে আধা ঘণ্টার বেশি থাকে না। আবার কিছু কিছু এলাকায় ভোরবেলা পানি আসে। তবে, লালচে ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসার কারণে অনেকেই এই পানি ব্যবহার করতে চান না। ময়লাযুক্ত পানি পান করে অনেকেই ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া পানি সংকটে নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা রান্না, গোসলসহ অন্যান্য কাজও সারতে পারছেন না সময়মতো। রাজধানীর বনশ্রী এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পানির সংকটের চিত্র পাওয়া গেছে। ওই এলাকার বি ব্লকের ১ নম্বর সড়কের প্রায় সব ফ্ল্যাটে একসপ্তাহ ধরে পানির সংকট চলছে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ ওয়াসার পানির পাইলাইনের কাজের জন্য তাদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ওই এলাকার ৪ নম্বর বাসার মালিক ফিরোজ বলেন, গত ছয়দিন ধরে পানি পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগে সড়কে ওয়াসার পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যাদের কাজ দিয়েছিল তারা কাজ পুরোপুরি শেষ করেনি। যেকারণে এই এলাকায় নিয়মিত পানি আসছে না। আর পানি না থাকায় রান্না ও প্রাত্যহিক কাজেও সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তারা এ ব্যাপারে উদাসীন। একই সড়কের ‘স্বপ্নছায়া’ বাসার তত্ত্বাবধানকারী দুলাল মিয়া বলেন, এক সপ্তাহ ধরে এই এলাকার কোনো বাসাবাড়িতে নিয়মিত পানি আসছে না। অনেকেই বাইরে থেকে পানি কিনে এনে রান্না ও অন্য কাজ সারছেন। তিনি বলেন, গত রোজায়ও পানির সমস্যা ছিল। এবার রোজার মাস শুরুর আগেই পানির সমস্যা শুরু হয়েছে। এই দুর্ভোগ আরো কতদিন থাকে কে জানে? গত কয়েকদিন তীব্র গরম শুরু হওয়ার পর থেকেই পানি নেই উত্তর বেগুনবাড়ি এলাকায়। এলাকাবাসী জানান, এমনিতেই এই এলাকায় প্রায় সারাবছর পানির সংকট থাকে। এবার গরম শুরু হওয়ার পর থেকেই পানির তীব্র সংকট চলছে। রমজান মাসে পানির এ সংকট আরো তীব্র সংকট আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা এলাকাবাসীর। উত্তর বেগুনবাড়ি এলাকার গৃহিণী রহিমা বেগম বলেন, নিজের বাড়িতে যখন পানি না আসে তখন অন্যের বাড়ি থেকে ধার করে এনে কাজ সারি। আর যখন অন্যের বাড়িতে না পাওয়া যায়, তখন আশেপাশের পাম্প থেকে পানি কিনে আনি। তিনি বলেন, প্রতি রোজাতেই এই এলাকায় পানির সমস্যা থাকে। উত্তর বেগুনবাড়ি এলাকার মেম্বারবাড়ির মালিক মহসিন মিয়া বলেন, যে পানি আমাদের দরকার তার অর্ধেক কখনও চার ভাগের একভাগ ব্যবহার করি। দুই বালতির জায়গায় এক বালতি ব্যবহার করি। কোন কোন দিন তাও পাই না। পানি নিয়ে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথাকাটি হচ্ছে নিয়মিত। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের গরমে সমস্যা আরো বেড়েছে। এই এলাকার প্রায় সবার একই সমস্যা। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই পানির সংকটে ভুগছেন। যে পাম্প ব্যবহার করি তা দিয়েও পানির সংকট মিটছে না। রমজানে কি অবস্থা হয় সেই দুশ্চিন্তায় আছি। মধ্যবাড্ডা মোল্লাপাড়ার ৬৬২ হোল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া মো. শাহীন বলেন, ৪/৫ দিন ধরেই পানির সংকটে ভুগছি। প্রাত্যহিক কোন কাজই ঠিকমতো করতে পারছি না। রোজায় যদি এ সমস্যা থাকে তাহলে আমাদের আরো ভুগতে হবে। একই এলাকার বাসিন্দা মো. শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া বলেন, এই এলাকার দু’একটি বাসা ছাড়া সকল বাসাবাড়িতেই পানির সংকট চলছে। মধ্যবাড্ডা বেপারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে প্রায় ১০ দিন একটানা পানি ছিল না। তবে, এখন পানি কিছুটা আসলেও রোজায় পানির চাহিদা বাড়লে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ গত রমজানেও এই এলাকায় পানির সমস্যা ছিল। বড় মগবাজার এলাকার বাটার গলির বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আলম মিয়া বলেন, পানি আসে অনিয়মিত। তাও পানিতে দুর্গন্ধ। ব্যবহারের অনুপযোগী। অনেক দিন ধরেই এই সমস্যা চলছে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। এদিকে পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীবাসীর পানির ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ওয়াসা। এছাড়া অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘ওয়াসালিংক-১৬১৬২’ এবং ১৫টি অভিযোগ কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলে জানান ওয়াসার কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে মড্স জোনের পানির পাম্প মনিটরিং করার জন্য ১১টি ভিজিলেন্স টিমও তৎপর থাকবে।
খোঁড়াখুঁড়ি: বর্ষাকাল আসলেই নগরজুড়ে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় নগরবাসীর ভোগান্তি। ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, বিটিসিএল, ডিপিডিসি, তিতাসের উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়িতে রাজধানীর অনেক সড়কই এখন জরাজীর্ণ। এবারও পুরো নগরীর প্রধান সড়ক, অলি-গলির রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে করে সড়ক সরু হয়ে বাড়ছে যানজট। একই সঙ্গে বাড়ছে নগরবাসীর ভোগান্তি। রাজধানীর আগারগাঁও, কাওরানবাজার, মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়কের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির এ চিত্র দেখা গেছে। আগারগাঁও এলাকার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) পার হয়ে তালতলা পর্যন্ত রাস্তার পাশে অনেক দিন ধরেই পয়ঃনিষ্কাষণের কাজ করছে ওয়াসা। একটু পরপরই খুঁড়ে রাখা হয়েছে বড় বড় গর্ত। গর্তগুলোতে এখনো স্ল্যাব না বসানোয় তা যেকোনো মুহূর্তে বিপদের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ওই এলাকায় চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা। ইতিমধ্যে এই খোঁড়াখুঁড়ির জেরে এই সড়কে ছোট-বড় বেশকিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা। এভাবে মূল সড়কের পাশে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ নম্বর অভিমুখী এই সড়কে দিনভর যানজট লেগেই থাকে। ১০/১৫ মিনিটের এই সড়ক পার হতে লেগে যায় অনেক সময়। তালতলা এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. মেজবাহ্উদ্দিন বলেন, গত আড়াই তিন মাস ধরেই এই সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। কিন্তু কবে শেষ হবে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলছে না। একেক সময় একেকটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা এসে কাজ করছেন। তিনি বলেন, এভাবে মূল সড়কের পাশে বিশাল খোঁড়াখুঁড়িতে এই সড়কটি সরু হয়ে গেছে। আগে তিনটি গাড়ি সড়কে চলতে পারতো। এখন ছোট ছোট গাড়িও এই সড়ক দিয়ে যেতে যানজট মাড়াতে হয়। আর যানজট সামাল দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, কিছুদিন আগে সড়কের ওই পাশে মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলেও এখনো কিছু কিছু জায়গা এবড়ো থেবড়ো হয়ে আছে। ফলে সড়কের দুই পাশেই যানজট লেগেই থাকে। শ্রমিকেরা জানান, তারা অনেকদিন থেকেই কাজ করছেন, তবে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা তারা জানেন না। কর্তৃপক্ষও তাদের কিছু বলেনি। আশেপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রায় তিন মাস ধরে কাজ চললেও কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে তারা অবগত নন। ফার্মগেট থেকে কাওরানবাজার অভিমুখী সড়কে পাশের ফুটপাথের সংস্কারের কাজ চলছে। তবে, সংস্কার কাজের সরঞ্জাম সড়কের পাশে ফেলে রাখায় এই সড়ক দিয়ে যান চলাচলে যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি সাধারণ মানুষও ফুটপাথ ব্যবহার করতে না পারায় মূল সড়ক ব্যবহার করছেন। সংস্কারের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক আইনুল জানান, পুরো কাজ শেষ করতে কতদিন লাগবে তা তারা জানেন না। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার বাসিন্দা এবং এখানকার সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গণপরিবহনের যাত্রী ও চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম ওই এলাকার সড়কগুলো। একদিকে একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে জমছে পানি। সেই কাঁদাপানিতে মাখামাখি হয়ে এখানকার সড়ক দিয়ে চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার মৌচাক মালিবাগের সড়কের পাশে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় সড়ক সরু হয়ে গেছে। এছাড়া ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সংস্কার কাজের দরুন সৃষ্ট খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তি আরো বেড়েছে। এসব এলাকার সড়ক দিয়ে চলাচলও রীতিমতো দুঃসাধ্য।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=67298&cat=3/