২৮ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:১২

ফাস্ট ফুডে বসছে ১০% সম্পূরক শুল্ক

একদিকে শরীরের ভার, অন্যদিকে করের ভার—দুই রকম ভারের ভয় তাড়া করবে ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুডখোরদের। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ফাস্ট ফুড বা জাংক ফুডের ওপর প্রথমবারের মতো সম্পূরক শুল্ক বসানো হচ্ছে ১০ শতাংশ হারে। এমনকি ফাস্ট ফুডের দোকানে বসে যে পানির বোতল কিনবেন, এর ওপরও এই সম্পূরক শুল্কহার প্রযোজ্য হবে।

এনবিআরের বাজেট প্রস্তাবের খসড়া অনুযায়ী, ফাস্ট ফুডের আইটেম পাস্তা, লাজারানো, ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংক, সব ধরনের বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, হট ডগ ও পিত্জার ওপর ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ হচ্ছে নতুন অর্থবছরে। এ ছাড়া তিন লিটার পর্যন্ত মিনারেল ওয়াটারের বোতলের ওপর ৫ শতাংশ এবং কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকের ওপর ২৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক বসবে, যা আগামী ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হবে।
হালে শহুরে ধূমপায়ী তরুণ ও যুবকদের অনেকে সিগারেট ছেড়ে ই-সিগারেটে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। ই-সিগারেটে কিছুদিন পর পর রিফিল করতে হয়। এ দুটি পণ্য বাংলাদেশে নতুন হওয়ায় আগে এসব আমদানির ওপর কোনো শুল্ক ছিল না, ছিল না কোনো সম্পূরক শুল্কও। আগামী বাজেটে ই-সিগারেট ও এর রিফিল—উভয় ক্ষেত্রেই শুল্ক বসানো হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাব মতে, ই-সিগারেট ও রিফিল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হবে। এতে ই-সিগারেট ও রিফিলের মূল্য দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নতুন ভ্যাট আইনে রপ্তানির উদ্দেশ্যে কেনা পণ্য বা উপকরণের ওপর ভ্যাট আরোপের কথা বলা আছে। তবে আগামী বাজেট প্রস্তাবে ভ্যাট আইন সংশোধন করে রপ্তানি খাতকে এই ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এ জন্য ভ্যাট আইনের ২৩(১) ধারায় সংশোধন আনা হচ্ছে।
বর্তমানে বড় করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকি উদ্ঘাটন ও করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বৃহৎ করদাতা ইউনিট রয়েছে। কিন্তু বেশি পরিমাণে যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়, তাদের জন্য আলাদা কোনো ভ্যাট ইউনিট নেই। আগামী বাজেটে নতুন করে বৃহৎ ভ্যাটদাতা ইউনিট গঠনেরও প্রস্তাব থাকছে। ‘মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’-এর ৭৮(৩) ধারার ক্ষমতা অনুযায়ী এই ইউনিট গঠন করবে এনবিআর। এ জন্য পৃথক একটি আদেশ জারি করা হবে, এরই মধ্যে আদেশের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
এনবিআরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন ভ্যাট আইনে করযোগ্য যেকোনো পণ্য আমদানিতে আমদানি পর্যায়ে সব আমদানিকারকের ওপরই ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। সেবা আমদানির ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। আমদানিকারক ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয়, বরং নিজের ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে কোনো পণ্য বা সেবা আমদানি করলেও এ নিয়ম কার্যকর হবে। তবে আমদানিকারক সর্বশেষ ভোক্তা হলে তিনি ভ্যাট নিবন্ধন নিতেও পারেন, আবার নাও নিতে পারেন। যদি আমদানিকারক সর্বশেষ ভোক্তা হন এবং অনিবন্ধিত থাকেন, তাহলে তিনি ভ্যাটে কোনো রেয়াত পাবেন না। আমদানিকারক নিবন্ধিত হলে এবং আমদানি পণ্য বা সেবা অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হলে তিনি রেয়াত পাবেন। এ কারণে যেকোনো ব্যক্তি (অনিবন্ধিত) করযোগ্য কোনো সেবা আমদানি করলে তার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার জন্য নতুন ভ্যাট আইনের ২০(৪) ধারার পর ২০(৫) নামে আরেকটি উপধারা যুক্ত করা হচ্ছে।
খসড়া ২০(৫) উপধারায় বলা হয়েছে, ভ্যাট অব্যাহতি পাওয়া সেবা বাদে নিবন্ধন বা তালিকাভুক্ত নয় অথবা নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তিযোগ্য নয়, এমন কোনো ব্যক্তির আমদানি করা কোনো সেবা করযোগ্য সরবরাহ হবে এবং তা থেকে ভ্যাট আদায় করা হবে। সেবা আমদানির ক্ষেত্রে সেবামূল্যের আংশিক বা পুনর্মূল্য পরিশোধের সময় পুরো ভ্যাট পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা কেটে রাখবে। অর্থাৎ কোনো সেবা আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় বা মূল্য পরিশোধের সময়ই ভ্যাট কেটে রাখবে ব্যাংক। আর ভ্যাট কর্তনকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেবা আমদানিকারকের পক্ষে তার দাখিলপত্রের মাধ্যমে হিসাব করে কেটে নেওয়া ভ্যাট পরিশোধ করবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকালে পরিশোধ করা আগাম করের (এআইটি) সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো হবে। এ জন্য নতুন ভ্যাট আইনের ৪৬(৬) ধারা, অর্থাৎ উপকরণ কর সমন্বয়ের সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য উপকরণ করের মতো আমদানিকালে পরিশোধ করা এআইটি দেওয়ার মাস থেকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সমন্বয় করা যাবে। অর্থাৎ যে মাসে কোনো আমদানিকারক এআইটি পরিশোধ করলেন, তা সমন্বয় করতে এনবিআর পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত সময় পাবে। বিদ্যমান আইনে ওই কর বছরের মধ্যেই সমন্বয়ের বিধান ছিল। এখন মেয়াদ বাড়ানো হলে আমদানিকারকদের এআইটি দেওয়া বাবদ অর্থ সমন্বয়হীন অবস্থায় এনবিআরের কাছে অতিরিক্ত এক বছর থাকবে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/05/28/502217