২৭ মে ২০১৭, শনিবার, ১১:৪৪

এখনো হুমকি-ধমকির মধ্যে ধর্ষিতারা

রেইনট্রি হোটেলে ছাত্রী ধর্ষণ

আসামিরা গ্রেফতার হলেও এখনো হুমকি-ধমকির মধ্যে রয়েছেন ধর্ষিতা দুই তরুণী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে; যে কারণে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখছেন ধর্ষিতারা। ধারণা করা হচ্ছে সাফাতের বন্ধুরাই এই হুমকি দিচ্ছে। এ দিকে ধর্ষণ মামলায় ৫ আসামি গ্রেফতার হলেও তাদের সহযোগীরা এখনো বেপরোয়া বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকার এক সংসদ সদস্যপুত্র গত ১৫ এপ্রিল ধর্ষিতা ওই দুই তরুণীকে আবারো হোটেলে আসার জন্য ডাকলেও পুলিশের তদন্তে ওগুলো এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যারা এই তরুণীদের হয়রানি করেছে তারাও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।
বনানী রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৫ আসামিকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের মধ্যে মূল হোতা সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফসহ চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। কিভাবে ওই দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে, তা বিস্তারিত বলেছে তাদের স্বীকারোক্তিতে। ড্রাইভার বেল্লাল ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছে। এই ভিডিওর সূত্র ধরে এবং নেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গত ১৫ এপ্রিল ধর্ষিতা ওই তরুণীদের আবারো হোটেলে ডেকেছিল ঢাকার এক এমপিপুত্র। ওই এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে এর আগে একটি খুনের মামলা হয়েছিল। ঢাকা উত্তরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক কিছুই এখন ওই এমপিপুত্রের নিয়ন্ত্রণে। সাফাতের মতো বেশ কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে। যারা ওই এমপিপুত্রের অবৈধ কর্মকাণ্ডের অর্থ জুগিয়ে থাকে। এই এমপিপুত্রের মনোরঞ্জনের জন্য দুই তরুণীকে ওই দিন ডাকা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এভাবে সাফাতের বন্ধু-বান্ধবের আরো অনেকে রয়েছে যারা ঘটনার পর থেকে বিভিন্নভাবে এই তরুণীদেরকে হয়রানি করে আসছিল। পুলিশকে তাদের বিষয়টি জানানো হলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। এ দিকে ধর্ষিতা ওই তরুণী ও তাদের পরিবার এখনো চরম আতঙ্কে আছেন বলে জানা গেছে। তাদেরকে অব্যাহত হুমকি-ধমকি দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কে বা কারা এই হুমকি দিচ্ছে সে সম্পর্কে জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে সাফাতের হয়ে তার বন্ধু-বান্ধব এই হুমকি-ধমকি দিচ্ছে; যে কারণে দুই তরুণীর মোবাইল ফোন পর্যন্ত এখন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে দুই তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ মিলে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে। এতে সহায়তা করে সাফাতের আরেক বন্ধু সাদমান সাকিফ। অভিযোগ উঠেছে হোটেলের অন্যতম পরিচালক মাহিরও সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। মাহির সাফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওই দুই তরুণীসহ মোট চারজনকে সাফাত জন্মদিনের নিমন্ত্রণ জানিয়ে ওই হোটেলে নিয়েছিল। সেখানেই দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার ব্যাপারে মামলা নিয়ে গড়িমসি করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গত ৬ মে মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়েরের পর সাফাত, সাকিফ, সাফাতের ড্রাইভার বেল্লাল ও বডিগার্ড রহমত আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/223327