২৭ মে ২০১৭, শনিবার, ১১:৪০

পোড়ার ঝুঁকি বেশি পুরুষের, গুরুতর দগ্ধ বেশি হন নারী

দগ্ধ হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের বেশি। তবে গুরুতর দগ্ধ হন নারীরাই বেশি। মূলত ঘরের কাজ করতে গিয়েই নারী আগুনে বা অন্য কোনোভাবে দগ্ধ হন বেশি।

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির (এসএইচএনআইবিপিএস) ২০১৫-২০১৬ সালের কার্যসম্পাদন প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছেন, শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হলে তা গুরুতর বলে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত দুই বছরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ১ হাজার ৪০০ দগ্ধ নারীর ৩১ থেকে ৪০ শতাংশ পোড়া ছিল। এমন পোড়া ছিল ৮০০ পুরুষের। ৫১ থেকে ৬০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নারী ছিলেন ৬০০, আর পুরুষ ২০০ জনের কম।
এ দুই বছরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৫ হাজার ২৬২ জন নারী। আর পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৬ হাজার ১১২ জন। অর্থাৎ পুরুষ রোগী ছিলেন তিন গুণের বেশি।
এসএইচএনআইবিপিএসের জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বলেন, দেখা গেছে রান্নার সময় চুলা থেকে শাড়িতে আগুন লাগে, ভাতের মাড় ঝরাতে গিয়ে গরম মাড় শরীরে পড়ে, চুলা থেকে গরম পানি নামাতে গিয়ে গায়ে পড়ে। বাড়িতে আগুনে পোড়ার ঘটনা নারীদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। আর সেসব পোড়া গুরুতর।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের মহিলা ওয়ার্ডে নোয়াখালীর রামগঞ্জের তাহেরা বেগমের চিকিৎসা চলছিল। তাঁর সারা শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো। রান্নার সময় শাড়িতে আগুন লেগে তাঁর হাত, মুখ, বুকসহ শরীরের ৫৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাহেরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, চুলায় ভাত বসিয়ে তরকারি কাটছিলেন; শাড়িতে কখন আগুন লেগেছে বুঝতেও পারেননি।
এসএইচএনআইবিপিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দগ্ধ হওয়ার ৪১ শতাংশ ঘটনা বাড়িতেই ঘটে; এর মধ্যে শুধু ভাতের হাঁড়ি থেকেই ঘটে ২৭ ও গরম পানির পাত্র থেকে ১২ শতাংশ। সরাসরি আগুন থেকে ঘটে ৩২ শতাংশ ঘটনা।
আফসানা বেগম চুলা থেকে গরম পানির পাত্র নামাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। উত্তরার এই নারী বলেন, ‘পানি ফুটাইতে দিছিলাম। নামানোর সময় ছলকে আমার গায়ে পড়েছে।’ এতে তাঁর মুখ, বুকের বাঁ পাশ, বাম পাসহ শরীরের ৪৯ শতাংশ পুড়ে গেছে।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল বলেন, শরীরের কোন অংশ কতটুকু দগ্ধ হলো, তার ওপর নির্ভর করে ক্ষতির ব্যাপ্তি। গুরুতর দগ্ধ হলে কেউ দৃষ্টিশক্তি হারান, কারও কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারও অঙ্গহানি ঘটে, কেউ আবার স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারান। শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি তাঁরা অনেক সময় সারা জীবন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। মৃত্যুর ঘটনা তো রয়েছেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতন ও সতর্ক হলে ঘরের এসব দুর্ঘটনা এড়ানো বা কমানো সম্ভব। এসএইচএনআইবিপিএসের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা সাত্তার বলেন, গরম পানি নেওয়ার সময় হাঁড়ির পরিবর্তে বালতি ব্যবহার করতে হবে। কাপড় ভালোভাবে পেঁচিয়ে বা গাউন পরে রান্না করতে হবে; রান্নার পরপরই চুলা নিভিয়ে ফেলতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগুনে পোড়ার জায়গায় ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, ডিম বা পেস্ট লাগানো যাবে না। সম্ভব হলে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ট্যাপের পানি ঢালতে হবে। অবস্থা গুরুতর হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1194971/