২৭ মে ২০১৭, শনিবার, ১১:৩১

চিকুনগুনিয়া এবং দুই মেয়র

|| আশিকুল হামিদ || পাঠকদের নিশ্চয়ই ‘ডিজিটাল’ যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সম্পর্কে কমবেশি ধারণা আছে। অনেকে সম্ভবত ফেসবুকে রয়েছেন, ফেসবুক দেখেনও মাঝে-মধ্যে। সত্যি বলতে কি, বিশেষ করে বিগত বছর দেড়-দুয়েকের মধ্যে সরকারই ফেসবুককে তুমুল রকমের ‘জনপ্রিয়’ করে তুলেছে। কখনো ফেসবুক বন্ধ করে দিয়ে, কখনো ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে আবার কখনো বা এর-ওর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়ে সরকার এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেÑ যখন সাধারণ মানুষও ফেসবুক ব্যাপারটা কি তা জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমার নিজের কথা অবশ্য অন্য রকম। ফেসবুক আমার কাছে পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি সহজ মাধ্যম। এখানে এমন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি, যাদের সঙ্গে বহু বছর দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। অনেক হাসি-তামাশা ও মজাও করা যায়। আমার মতে কে কিভাবে ফেসবুককে ব্যবহার করবেন- সেটা যার যার ইচ্ছা বা নিয়তের ব্যাপার।
পাঠকরা তাই বলে ভাববেন না, আজ ফেসবুক সম্পর্কে লেকচার দিতে বসেছি। তবে শুরুটা ফেসবুক থেকে করতে হচ্ছে বিশেষ কারণে। এখানে বিচিত্র, এমনকি ভয়ংকর অনেক কিছুও পাওয়া যায় এবং দেখতে ও পড়তে হয়। জানা যায় অনেক ভীতিকর তথ্যও। যেমন কিছুদিন আগে একজন একটি প্রেসক্রিপশনের ছবি হাজির করেছেন ফেসবুকে। এতে দেখা গেছে, ওই পৃষ্ঠাটিতে আর একটি লাইন লেখার মতো জায়গাও খালি নেই! পৃষ্ঠার একদিকে চিকিৎসক মহোদয় নানা রকমের টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকটিতে রয়েছে একের পর এক ওষুধের নাম। ফেসবুকে যিনি পাঠিয়েছেন তিনি লিখেছেন, অন্য কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, যে রোগীর জন্য এত টেস্ট ও ওষুধের আয়োজন তার আসলে সেগুলোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘নাম করা’ এক চিকিৎসক মহোদয় অমন একখানা প্রেসক্রিপশনের আড়ালে বিপুল খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন রোগীর ঘাড়ে। এর ক’দিনের মধ্যেই আরেক রসিকজন একটি কার্টুন ছেড়েছেন ফেসবুকে। এতে দেখা গেছে, সামান্য অসুখের জন্য ওষুধের পাহাড় চাপানো হয়েছে এক রোগীর মাথায়। ওষুধের চাপে বেচারার তখন রাস্তার ওপরই পড়ে যাই যাই অবস্থা!
বিষয়গুলো নিয়ে যখন ভাবছিলাম তখনই পরিচিতজনদের মধ্যে অতি সচেতন কয়েকজন আমাকে ‘খোঁচা’ দিয়ে বললেন, রাজনীতি নিয়ে লিখে তো ‘গড়’ অনেক ওল্টালেন, এবার সাধারণ মানুষের কথা কিছু লিখুন! ব্যাখ্যাও তারাই দিয়েছেন- যার মূলকথা হলো, রাজনীতির নামে দেশের প্রধান দলগুলো কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দৌড়াচ্ছে। অন্যদিকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চরমভাবে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজধানীতে বাসের সংকট ও চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রকোপ থেকে সুনামগঞ্জের বন্যায় ফসল এবং মাছ ও হাঁসসহ পানীজ প্রাণীর মৃত্যু এবং সর্বশেষ লোডশেডিংসহ বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকট পর্যন্ত বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে পরিচিতজনেরা বললেন, ভারতের ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তার কারণেই সুনামগঞ্জে এত ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেলো কি না- তা নিয়েও দেশে ‘পলিটিক্সই’ হলো। এখনো হচ্ছে। সেখানেও ক্ষমতায় যাওয়া আর টিকে থাকাটাই প্রধান উদ্দেশ্য। মাঝখানে সাধারণ মানুষ যে চিড়ে-চ্যাপ্টা হচ্ছে সেদিকে কারো খেয়ালই নেই! একই কারণে আমার ওই পরিচিতজনদের পরামর্শ ছিল, আমি যেন অন্তত সাধারণ মানুষের স্বার্থের ব্যাপারে কিছু লিখি।
‘সাবজেক্ট’ও পেয়ে গেলাম ফেসবুকেই। দেখলাম, দেশের সিনিয়র এক সাংবাদিক চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্তদের প্রতি আহবান জানিয়ে লিখেছেন, তারা যেন সকল টেস্টের রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধের দামসহ চিকিৎসার জন্য মোট খরচের হিসাব ‘রেডি’ রাখেন। কারণ, আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই সাংবাদিক ঢাকার দুই মেয়রের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলা করার পর এসব খরচের হিসাব কোর্টে কাজে লাগবে এবং দুই মেয়রের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে। সাংবাদিক সাহেবের আহবানটিকে প্রথমে বিচিত্র এমনকি অবাস্তবও মনে হয়েছিল। কিন্তু দেখলাম, ফেসবুকে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে। অসংখ্যজন সমর্থন জানিয়েছেন, তারাও একই আহবানের পুনরাবৃত্তি করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে দুই মেয়রের ‘সুন্দর চেহারা’ থেকে ‘সুন্দর সুন্দর’ কথাবার্তা পর্যন্ত বহু ব্যাপারেই দেখলাম নিন্দা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ লিখেছেন, ওই ‘সুন্দর’ চেহারা ধুয়ে পানি খেলে তো আর চিকুনগুনিয়া জ্বরের ক্ষতি পূরণ করা যাবে না! মূলকথায় সবাই একবাক্যে বলেছেন, দুই মেয়রই রাজধানীবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালনে অমার্জনীয় উপেক্ষা দেখিয়েছেন। তারা ব্যস্ত রয়েছেন শুধু এমন সব কাজ নিয়ে, যেগুলোতে ‘নগদ নারায়ণ’ প্রাপ্তির নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে সর্বাত্মকভাবে। কিন্তু মেয়র সাহেবদের সেদিকে নজর নেই। তারা বিশেষ করে চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী মশা নিধনের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছেন না।
মূলত সে কারণেই উদাহরণ দেয়ার টেস্ট ও প্রেসক্রিপশনের কথা টেনে আনা হয়েছে। বিষয়টি ফেসবুকে এলেও মেয়রদের গোপন সহযোগিতায় চিকিৎসার নামে আসলে এভাবেই চরম বিশৃংখলা ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। এ ব্যাপারে ডাক্তার বা চিকিৎসকদের ওপর দোষ চাপানো হলেও অন্তরালে রয়েছে ওষুধের ব্যবসায়ীরা। রয়েছে নাম করা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানিও। কিন্তু সব জেনেও মেয়র সাহেবরা কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সাধারণ ওষুধের পাশাপাশি ভেজাল দেয়া হচ্ছে এমনকি জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধেও। ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধে এরই মধ্যে ছেয়ে গেছে ওষুধের বাজার। এসব বিষয়ে জানা সম্ভব হচ্ছে না বলে জনগণও ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধই কিনছে এবং খাচ্ছে। তারা শুধু অসুস্থ ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে না, নানা অসুখে ভুগে বহু মানুষ মারাও যাচ্ছে। ক’নি আগে ঢাকা ভার্সিটির একজন ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে। এ নিয়ে হইচইও কম হয়নি। কিন্তু মেয়র সাহেবরা যথারীতি কানে তুলো দিয়ে রেখেছেন! এর ফলে একদিকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিকুনগুনিয়ার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছে এবং চিকিৎসকদের ভিজিট দিতে ও ওষুধ কিনতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে দুই মেয়রসহ সরকারের প্রশ্নসাপেক্ষ নমনীয় নীতি ও ভ’মিকার সুযোগ নিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু কোম্পানী আবার ভেজাল ও বিষাক্ত ওষুধ প্রস্তুত করার অঘোষিত প্রতিযোগিতায়ও নেমে পড়েছে। সঙ্গত কারণেই বলা হচ্ছে, সবকিছুর জন্য দায়ী আসলে দুই কীর্তিমান মেয়র।
বলা দরকার, রাজধানীবাসীদের জন্য সম্প্রতি ভোগান্তির নতুন কারণ সৃষ্টি করেছে চিকুনগুনিয়া নামের এক জ্বর। এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়। মাথা তো ব্যথা করেই, তার সঙ্গে প্রচন্ড ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরেও। হাঁটুতে এবং হাত ও পায়ের গিরায় গিরায় প্রচন্ড ব্যথায় রোগীরা এমনকি হাঁটতে পর্যন্ত পারে না। মাংসপেশীতে ও পায়ের তলায়ও থাকে তীব্র ব্যথা। শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে যায়। অনেকে কয়েক মিনিট পরপর বমি করে। খাওয়ার রুচি থাকে না একেবারেই। জোর করেও খাওয়ানো যায় না রোগীকে। বিভিন্ন রোগীর রক্ত পরীক্ষার পর রোগ তত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর জানিয়েছে, ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস নামের মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। চিকুনগুনিয়া টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলা হয়। এসব মশা সাধারণত পানিতে জন্মায় এবং ভোরে ও সন্ধ্যায় মানুষকে কামড়ায়।
বিভিন্ন হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে, মাসখানেক আগে রাজধানীতে কয়েকদিন বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হওয়ার ফলে একদিকে এডিস প্রজাতির মশাগুলোর জন্ম ও বিস্তার ঘটেছে, অন্যদিকে এসব মশার কামড়ে প্রতিদিন চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই রেহাই পাচ্ছে না। দুই ‘সুপুরুষ’ মেয়রের নেতৃত্বাধীন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রচারণা না থাকায় চিকুনগুনিয়া জ্বরের ব্যাপারে মানুষ প্রথমেই জানতে বা ধারণা করতে পারছে না। তারা একে সাধারণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা মনে করছে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরিবর্তে জ্বরের ওষুধও খাচ্ছে যার যার মতো। অনেকে আবার প্রথম দু’-চারদিন পর্যন্ত কোনো ওষুধই খাচ্ছে না। এর ফলে রোগীর অবস্থা মারাত্মক হয়ে উঠছে।
ভীতি ও উদ্বেগের কারণ হলো, চিকুনগুনিয়া জ্বরের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো টীকা আবিষ্কৃত হয়নি। এমন অবস্থায় ‘ভদ্র’ ও ‘পেশাদার’ চিকিৎসকরা সাধারণ প্যারাসিটামল ওষুধ হিসেবে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রোগীকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। সেই সাথে খেতে হবে প্রচুর পানি এবং তরল ধরনের খাবার। ডাব, তরমুজ এবং কমলাসহ পানি আছে এমন ধরনের ফল খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত প্রচন্ড জ্বর থাকতে পারে। তিন বেলা দুটি করে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে জ্বর কমে যাবে কিন্তু ব্যথা কমতে সময় লাগবে বেশ কয়েকদিন। এমনকি এক-দেড় মাস পর্যন্তও ব্যথা থাকতে পারে। কিন্তু এজন্য ভয় পাওয়ার কারণ নেই। চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকি আছে বলে এখনো জানা যায়নি। রোগীকে প্রচুর বলকারক খাবার খাওয়াতে বলেছেন ‘ভদ্র’ ও ‘পেশাদার’ চিকিৎসকরা। পাশাপাশি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বাড়ির ভেতরে বা আশপাশে পানিযুক্ত ময়লা-আবর্জনা জমতে না পারে। কারণ, এসব স্থানেই এডিস প্রজাতির মশাগুলোর জন্ম হয়। তাছাড়া মশার উপদ্রব বেশি থাকলে অবশ্যই মশারী ব্যবহার করতে হবে। শুধু রাতে নয়, চিকিৎসকরা দিনের বেলায়ও মশারী টাঙানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গেই প্রাধান্যে এসেছে সরকার এবং দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ও ভূমিকার বিষয়টি। কারণ, বছরের কোনো সময়েই মশা নির্মূল করার জন্য সিটি করপোরেশনের লোকজনকে ওষুধ ছেটাতে দেখা যায় না। কখনো কখনো দায়সারাভাবে ওষুধ ছেটালেও সে ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ থেকেই যায়। কেননা, এসব ওষুধে মশার উৎপাত বন্ধ হয় না। ফলে মশার উপদ্রব শুধু বেড়েই চলছে না, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকেও অসহনীয় করে তুলছে। রাতে তো বটেই, দিনের বেলায়ও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হচ্ছে রাজধানীবাসী। দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনের জন্য কোটি কোটি টাকার অংকে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও তার সুফল ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে না মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, জনগণের ট্যাক্সের অর্থে বেতন দিয়ে লোকজন রাখা এবং স্প্রে করার জন্য ‘বস্তায় বস্তায়’ ওষুধ কেনা হলেও তারা কোনো উপকার পাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে বরং জানা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে স্প্রে করার কাজে ছয়জন করে কর্মী থাকলেও মাসের পর মাস তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায় না। শুধু এমন কিছু স্থানেই তারা মশার ওষুধ স্প্রে করে, যেগুলোর সঙ্গে দুই কীর্তিমান মেয়র ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ মশা নিধনের ক্ষেত্রেও রীতিমতো রাজনীতি ও স্বজনপ্রীতি করা হচ্ছে। চলছে মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্তাব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা।
এসব কারণেই রাজধানীতে মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু এবং টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ও ফাইলেরিয়াসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ-বালাই। সবশেষে যুক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়া জ্বর। অবস্থা এমন হয়ে পড়েছে যে, নানা বাহারি নামের দেশী-বিদেশী মশার কয়েল ও ওষুধেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, মশার ওষুধের কার্যকারিতা না থাকার কারণ, কেনার প্রক্রিয়ায় হচ্ছে ব্যাপক দুর্নীতি। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে দুই মেয়রের নেতৃত্বাধীন সিটি করপোরেশন এমন সব কীটনাশকই কিনছে যেগুলো মশা নিধনে মোটেও সক্ষম নয়। একই কথা সত্য বাজারের বিভিন্ন ওষুধ ও কয়েল সম্পর্কেও। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশের বাজারে যেসব মশার কয়েল বিক্রি হয় সেগুলোর বেশির ভাগের মধ্যেই মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। ফলে মশা তাড়াতে গিয়েও মানুষ কেবল ক্ষতিরই শিকার হচ্ছে। একই কারণে বেড়েছে চিকনগুনিয়া জ্বরের জন্য দায়ী এডিস প্রজাতির বিভিন্ন মশার উপদ্রব।
সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই আমরা মনে করি, বর্তমান পর্যায়ে সরকার এবং দুই সিটি করপোরেশনের উচিত প্রথমে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া এবং মশা নিধনের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া। এজন্য কেবল ওষুধ ছেটানোই যথেষ্ট নয়, তারও আগে ওষুধ তথা কীটনাশক কেনার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এমন কীটনাশকই কেনা এবং ছেটানো দরকার, যেগুলো মশার জন্ম ও বিস্তার রোধ করতে পারে। সব মিলিয়ে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে রাজধানী মহানগরী থেকে মশার উপদ্রব কমে যায় এবং চিকনগুনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিবর্তে মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাতে পারে। মেয়র সাহেবদের সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ মামলার কথাও মাথায় রাখতে হবে। কারণ, এ শুধু কথার কথা নয়। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে মানুষ কিন্তু বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া ভবিষ্যতে আবার নির্বাচনের প্রশ্নও তো রয়েছে!

http://www.dailysangram.com/post/285477-