২৪ মে ২০১৭, বুধবার, ৮:১৯

এতো বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়?

* সারা দেশেই ত্রাহি অবস্থা
* রমযানে দুর্ভোগ আরো বাড়বে
বিদ্যুৎ সংকটে সারাদেশেই এখন ত্রাহি অবস্থা। রমযানের আগে উত্তোরণেরও কোন সুখবরও নেই। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ণ বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে দেশে এখন চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এতো বিদ্যুৎ যাচেছ কোথায়? এদিকে গত কয়েকদিনের অব্যাহত খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ। শহরেতো বটেই গ্রামের মানুষেরও গরমে এখন ত্রাহি অবস্থা। ঢাকার বাইরে দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এই সংকটের আশু কোন সমাধানেরও পথ দেখাতে পারেননি।
বিদ্যুৎ সংকটে সারা দেশের মানুষের মধ্যে যখন ত্রাহি দশা, তখন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ওয়েবসাইট দিচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য। পিডিবির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, গতকাল ও এর আগের কয়েকদিন দেশে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন ছিল, উৎপাদিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি। তাদের ওয়েবসাইটে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়- ২৩ মে চাহিদা ছিল ৮ হাজার মেগাওয়াট, উৎপাদন ছিল ৮ হাজার ৬শ’ ১৫ মেগাওয়াট। ২২ মে চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৮শ’ ৭৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ছিল ৮ হাজার ২শ’ ৫৯ মেগাওয়াট।
গত ২১ মে বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট; উৎপাদন ছিল ৮ হাজার ৮৩০ মেগাওয়াট। ২০ মে চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট; উৎপাদন ৮ হাজার ৮১৯ মেগাওয়াট। ১৯ মে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট; উৎপাদন ছিল ৮ হাজার ৭৫৩ মেগাওয়াট। অর্থাৎ দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং নেই বরং চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি।
পিডিবি’র দেয়া এই তথ্য প্রকাশের পর আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এ মুহূর্তে আমরা দিতে পারব না। এটা হতে আমাদের আরও ৩-৪ বছর লেগে যাবে।
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীর চাহিদা মেটাতে গিয়ে তাদের সরবরাহ অনেকাংশে কাটছাঁট করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ কারণে ঢাকার বাইরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে গড়ে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়েছে। কোথাও কোথাও আরও বেশি। ঢাকাকে আলোকিত রাখতে রাতে বেশিরভাগ গ্রামকে রাখা হচ্ছে অন্ধকারে।
গত কয়েক দিন ধনেই সারাদেশেই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়ছে। তীব্র তাপদাহে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে চলছে। গরমজনিত রোগে হাসপাতালগুলোতে ভীড় বাড়ছে। গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরে লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহীর মতো বড় বড় শহর-নগরেও লোডশেডিং হচ্ছে দফায় দফায়।
এদিকে রমযানে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনো প্রস্তুতি নেই। অথচ কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে মাহে রমযান। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে আগামীতে ঢাকার বাইরে লোডশেডিং বাড়বে। এতে বাড়বে মানুষের দুর্ভোগও। বিদ্যুৎ সংকটে ঢাকার বাইরে অনেক শিল্পকারখানা সন্ধ্যার পর বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দিনেও অধিকাংশ কল-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না আরইবি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, রমযানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট করার টার্গেট আছে সরকারের। এ কারণে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামতের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনাঘাট, সিরাজগঞ্জ, আশুগঞ্জ, রংপুর, বড়পুকুরিয়াসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ আছে। কয়েকটি মেরামতের পর ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেড়ামারার ২১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাকিগুলো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চালু হলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ২১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড আছে। রমযানে এটা বাড়িয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানোর জন্য সঞ্চালন লাইনেরও সংস্কার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রমযানে ইফতার-তারাবি ও সেহেরির সময় লোডশেডিং থাকবে না। লোডশেডিং করতে হলে আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় জানিয়ে দেয়া হবে। এজন্য অগ্রিম শিডিউল তৈরি করে সবাইকে জানানো হবে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এবারের পুরো রমযানজুড়ে গরম থাকবে। এতে সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর যে অবস্থা তাতে রমযানে সরকারের টার্গেট অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট করা সম্ভব হবে না। এতে রোজাদারদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে। ইফতারি, তারাবি ও সেহেরির সময় চাহিদা বেড়ে গেলে গ্রামের লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করবে। ডিপিডিসি ও ডেসকোকে ঢাকায়ও বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং করতে হবে। তাছাড়া ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন সংস্কার না হওয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ লাইনে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। দুর্বল বিতরণ লাইনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেই বিভিন্ন স্থান লাইন ও ট্রান্সফরমার জ্বলে যাবে। এতে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

http://www.dailysangram.com/post/285059-