২৪ মে ২০১৭, বুধবার, ৮:১২

চোরাই পথে আসছে ভারতীয় নিম্নমানের ধানের বীজ

প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক * ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা

রংপুর অঞ্চলের হাট-বাজারে আমন ধনের নিম্নমানের ভারতীয় ধানের বীজ আসছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বত্র এই ধানের বীজ পাওয়া যাচ্ছে। চোরাচালান হয়ে আসা এসব ধানের বীজ নিয়ে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন। দেশের বিএডিসির গুদামে প্রচুর ধানের বীজ মজুদ আছে। আসন্ন আমন ধান রোপণ মৌসুমে ভারতীয় এসব ধানের বীজ বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে অনুমোদনহীন ভারতীয় স্বর্ণা বীজ বিক্রি হলেও সরকারি বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কর্মকর্তারা নীরব আছেন। ফলে একটি অসাধু চক্র নিন্মমানের বীজ বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিএডিসির ডিলাররা বাধ্যতামূলক বীজ উত্তোলন করে কৃষক পর্যায় ধানের বীজ বিক্রি করতে না পারায় তারা বিপাকে পড়েছেন।


রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুরের কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ মৌসুমের আমন বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হবে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। তাই সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের উৎপাদিত বীজ যাতে কৃষকরা সহজে পেতে পারেন এ জন্য চলতি মে মাসের ৫ তারিখ থেকে এ অঞ্চলের নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে বীজ সরবরাহ শুরু করেছে। এ সব ধানের বীজের জাত হচ্ছে বিআর-১১, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬ এবং বিনা-৭।

বিভিন্ন হাট-বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু সংখ্যক ধানের বীজ ব্যবসায়ী সরকার অনুমোদিত কোম্পানির উৎপাদিত মানসম্মত বীজ বিক্রি করছে। আর কিছু বীজ ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় ভারতীয় স্বর্ণাসহ নামসর্বস্ব কোম্পানির ধানবীজ বিক্রি করছেন। দুই কেজি এবং ১০ কেজি প্যাকেটের স্বর্ণা ধানবীজ বিক্রি করা হচ্ছে যথাক্রমে ১৪০ ও ৬৫০ টাকায়। রংপুর সদর উপজেলার কৃষক বকুল সরকার জানান, স্বর্ণা ভারতীয় ধানবীজ কিনে প্রথম দিকে ভালো ফলন পেলেও বর্তমানে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া তিনি নিজেও গত বছর স্বর্ণা জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাননি। তিনি অভিযোগ করেন, স্বর্ণা বীজের একাধিক ভেজাল বীজ বাজারে পাওয়া যায়। প্যাকেট দেখে তাই কারও আসল নকল চেনার উপায় নেই। এতে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই তিনি বাজার মনিটরিং বৃদ্ধির দাবি জানান। বিএডিসির আমন বীজের চেয়ে ভারতীয় নিন্মমানের স্বর্ণা বীজে ভালো ফলন পাওয়া যায় একশ্রেণীর চেরাচালান চক্র এ প্রচারণা চালিয়ে তা বাজারজাত করছে। কৃষকরা বিএডিসির উন্নত জাতের ধানের বীজ বাজারে আনার দাবি জানান।

বিএডিসি বীজ ও সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশন রংপুর আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ মোস্তফা আলী হাকীম বলেন, কৃষকরা যে বীজে ফলন ভালো হবে সেই বীজ খুঁজবেন। এখন সেই কোম্পানির অনুমোদন আছে কিনা তা তাদের বিচার্য বিষয় নয়। ভারতীয় স্বর্ণার ব্যাপক চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে তিনি বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইন্সটিটিউটকে (বারি) অধিক ফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবন করে তার নাম স্বর্ণা দিয়ে শুরু করার আহ্বান জানান।

রংপুর আঞ্চলিক বিএডিসির (বীজ বিপণন) উপ-পরিচালক ড. সুলতান-উল-আলম বলেন, এ অঞ্চলের আমন মৌসুমের কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক ধানের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭০০ মেট্রিক টন ধানের বীজ পাঁচ জেলার বিএডিসির তালিকাভুক্ত ৭৭৬ জন ডিলারের কাছে সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়েছে। সরকারের অনুমোদন নেই এমন বীজ বিক্রির কারণে বিএডিসি বীজ বিক্রিতে সমস্যা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কাজ হচ্ছে উৎপাদিত বীজ ডিলারের কাছে প্রেরণ করা। কিন্তু বাজার মনিটরিং করবে সরকারের বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কর্মকর্তারা।

রংপুর আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির ভারপ্রাপ্ত রিজিওনাল সিডস সার্টিফিকেশন অফিসার আফসার আলী বলেন, জাতীয় স্বার্থে ভারতীয় স্বর্ণা বীজ বিক্রিতে বাধা না দিয়ে নীবর থাকতে হচ্ছে। তবে ধানবীজ ভেজালকারী যদি কেউ থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

http://www.jugantor.com/news/2017/05/24/126974/