২৩ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:০৬

পরিবহন ধর্মঘটে উত্তরাঞ্চলে সবজি চাষিদের সর্বনাশ

সাত দফা দাবিতে উত্তরবঙ্গ ট্রাক, ট্রাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অধিকার আদায় বাস্তবায়ন কমিটির টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটে উত্তরাঞ্চল থেকে সবধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘটের কারনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েভে এই অঞ্চলের সবজির বাজারে। প্রতিদিন বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত ট্রাক সাবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে। ধর্মঘটের কারনে গত দুইদিন উত্তরাঞ্চল থেকে কোন সবজিবাহী ট্রাক দেশের কোথাও যেতে পারেনি। ফলে ক্ষেতের সবজি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বিশেষ করে বগুড়ার চাষিদের মাথায় বাজ পড়েছে। তারা তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন। ট্রাক ধর্মঘটের কারণে বাইরের পাইকাররা সবজি না কেনায় মাঠে অথবা তোলার পরে এসব সবজি বাজারেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান সবজির হাট মহাস্থান বাজারে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার সবজি নষ্ট হচ্ছে। খুচরা গ্রাহকরা স্বল্প পরিমাণ সবজি কিনলেও ট্রাক না চলায় ঢাকার পাইকাররা সবজি কিনছে না। এতে প্রান্তিক চাষিরা বাজার থেকে সবজি ফেতর নিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সবজি বাজার মহাস্থানগড়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সবজি চলে যায়। দেশের সবজি চাহিদার বড় একটা চহিদা এই বাজার থেকেই পূরণ হয়। চলমান ট্রাক ধর্মঘটের কারণে বর্তমানে মহাস্থানের পাইকারী বাজারে কৃষক সরাসরি ঢেঁরস বিক্রি করছে ১ টাকা কেজি। ডাটার কেজি ৫০ পয়সা, বেগুন ৮ টাকা, করলা ১০, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৩টাকা কেজি দরে। অপরদিকে মিস্টি কুমড়া বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। মহাস্থানের এই বাজারে এমনিতেই সবজির দাম কম। এরপরেও ট্রাক ধর্মঘটের ফলে সবজি বাজারে চরম ধস নেমেছে। অপর দিকে স্থানীয় ছোট পাইকাররা মহাস্থান থেকে উল্লেখিত দরে সবজি কিনে অটো ভ্যান, রিক্সায় করে শহরে এনেই হাত বদল হয়ে সেই সবজি কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে মাঠে ঠকছে কৃষক আর বাজারে ঠকছে সাধারণ ভোক্তা। মহাস্থান এলাকার ঢেঁরস চাষি কোরবান আলী জানান, প্রতিদিন তার জমি থেকে ৫ মণ ঢেরস তোলা যায়। প্রতিদিন না তুললে জমিতেই নষ্ট হয়ে যায় এই সবজি। ট্রাক ধর্মঘটের ফলে তার জমি থেকে ঢেঁরস তুললেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি হচ্ছে না, অপর দিকে না তুললে গাছের নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঢেঁরস। প্রতিদিন তার ২হাজার টাকার ঢেঁরস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান এই চাষি।
আরো ২৪ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে
মহাসড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে উত্তরাঞ্চলে চলমান পণ্য পরিবহন ধর্মঘট আরও ২৪ ঘন্টা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ৪৮ ঘণ্টার এই ধর্মঘট বেড়ে ৭২ ঘণ্টা পালন করার ঘোষণা দিয়েছে উত্তরবঙ্গ ট্রাক, ট্রাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও পিক-আপ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সোমবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তরবঙ্গ ট্রাক, ট্রাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অধিকার আদায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান আকন্দ জানান, ৭ দফা দাবিতে চলমান ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে ৭২ ঘণ্টা পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। এরপরও দাবি আদায়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পবিত্র ঈদ উল ফিতর এর পরে লাগাতার ধর্মঘট পালনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার, জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, জেলা পিকআপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারররফ বুলবুল প্রমুখ সহ অন্যন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অধিকার আদায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, ৭ দফা দাবি দীর্ঘদিনের। সরকারের পক্ষ থেকেও এসব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও-আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাধ্য্য হয়েই এই ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। আর চলতি মাসের মধ্যে যদি ৭ দফা দাবি মেনে নেয়া না হয়, তাহলে ঈদ-উল-ফিতরের পরে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এদিকে ট্রাক ধর্মঘটে বগুড়াসহ উত্তরজনপদ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/284949-