২৩ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:০৪

রাজধানীবাসীর চরম দুর্ভোগ তীব্র যানজটে

রমজানের আর মাত্র ক’দিন বাকি। এর মধ্যেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। গত কয়েক দিনের যানজট মানুষকে অসহায় করে তুলেছে। মানুষ এখন রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। এক দিকে যানজট অপর দিকে অসহনীয় গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো: আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে চলছে তীব্র যানজট। যানজটে এখন রাজধানীর বাসিন্দারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট লক্ষ করা যায়। দিন যত বাড়তে থাকে ক্রমেই যানজটের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। শুধু রাস্তায়ই নয়, যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর ফাইওভারগুলোতেও। সকাল ১০টার পর থেকেই যানজট অসহনীয় রূপ নেয়। পথচারীদের বেশ কয়েকজন জানান, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, পুরো মিরপুর রোড, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা, বাংলামোটর, ফার্মগেট, নাবিস্কো থেকে তেজগাঁও সাত রাস্তা ও মহাখালী থেকে ফার্মগেটসহ রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তাই গতকাল অবরুদ্ধ ছিল। এমন অনেক এলাকা ছিল, যেখানে রাস্তাঘাটে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আবুল কালাম আজাদ নামের এক যাত্রী বলেন, দুপুরের দিকে মতিঝিল থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত বাসে যেতে তার সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। অথচ পায়ে হেঁটে এই পথ অতিক্রম করতেও ২০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। চার দিকের রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গতকাল রাজধানীর প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে যানজটের তীব্রতা। বেলা দেড়টার দিকে দেখা যায় মৎস্য ভবন মোড় থেকে চার দিকের রাস্তা একেবারে বন্ধ। গাড়িগুলো কোনো দিকেই চলতে পারছে না। ট্রাফিক পুলিশ এক দিক থেকে গাড়ি অপর দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আবার সেদিকের রাস্তাও একটু পরে আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাপে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা বলেন, রাস্তার ওপর থেকে হকার উচ্ছেদ করা হলেও পার্কিং এখনো বহাল আছে। বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য তীব্র যানজট। বাংলামোটর লিংক রোড, হাতির পুল, এলিফ্যান্ট রোডে দু’পাশ জুড়ে রয়েছে শত শত পার্কিং করা যানবাহন। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় রাস্তার দু’পাশ জুড়ে দেখা যায় শত শত গাড়ি পার্কিং করা। বড় বড় ভবনেরও কোনো পার্কিং না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই ভবনের সামনে গাড়ি রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা যায় কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্ত। এ এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যস্ত মার্কেট থাকলেও ওইসব মার্কেটের পার্কিং ব্যবস্থা নেই। মার্কেটগুলোতে আসা ক্রেতারা বাধ্য হয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে রেখে মার্কেটে ঢুকছেন। সেগুনবাগিচা এলাকায় দু’টি বহুতল ভবন উঠছে, যার নির্মাণসামগ্রী পুরোটাই রাস্তার ওপরে। স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী রেখে ভবন দু’টির কাজ চলছে। যে কারণে প্রায় প্রতিদিনই ওই স্থানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকার রাস্তায় দেখা যায় বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনের ইট-বালু রাস্তায়। যে কারণে দিনভর ওই রাস্তায় যানজট লেগে থাকছে।
রাজধানীর কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা, মিরপুর সড়ক, নিলক্ষেত, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, দিলকুশা, নর্থসাউথ রোড, ইংলিশ রোড, বংশাল, নবাবপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য তীব্র যানজট। একই সাথে কোনো কোনো এলাকায় দোকানপাটের মালামাল রাস্তায় রাখা হচ্ছে। নর্থসাউথ রোড, নবাবপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় এই চিত্র নিত্যদিনের। যে কারণে ওইসব রাস্তায় তীব্র যানজট হচ্ছে। রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় গাড়ি ব্যবসায়ীরা রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে কেনাবেচা করছেন।
কোনো কোনো এলাকার রাস্তা পুরোটাই দখল করে পার্কিং বানানো হয়েছে। বিশেষ করে ওইসব পার্কিংয়ে সরকারি যানবাহনই দেখা যায়। সচিবালয় ও জাতীয় প্রেস কাবের মাঝের রাস্তাটি পুরো পার্কিংয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এই এলাকার রাস্তাগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশে যানবাহন পার্কিং করায় রাস্তার আকৃতি ছোট হয়ে যায়। ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। নটর ডেম কলেজের উল্টো পাশের রাস্তা এখন অঘোষিত বাস ডিপোতে পরিণত হয়েছে। এখানে থামিয়ে রাখা হয় কয়েক শ’ গাড়ি। এর মধ্যে বিআরটিসির গাড়িও রয়েছে। এমনকি ঢাকার বাইরের গাড়িও এই রাস্তায় পার্কিং করে রাখা হচ্ছে।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে দেখা যায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ট্রাক থামিয়ে তরকারি ও মাছ নামানো হচ্ছে। বিকেল থেকেই এই রাস্তার প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে বসে যায় তরকারি ও মাছের বাজার। যে কারণে বিকেল থেকে এ স্থানটিতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এ দিকে এই যানজটের সাথে চলছে অসহনীয় গরম। দুয়ে মিলে রাজধানীর বাসিন্দাদের এখন ত্রাহি অবস্থা। রমজান আসার আগেই এভাবে যানজট রাজধানীর বাসিন্দাদের শঙ্কায় ফেলেছে। রাজধানীবাসীর ধারণা, এই যানজটের মাত্রা আরো বাড়বে রমজানকে কেন্দ্র করে। তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণের সব ব্যবস্থা থাকবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/222292