২২ মে ২০১৭, সোমবার, ৮:১৮

আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এটি আপনি সরকারকে বলবেন, সমাধানের জন্য আপনাকে জানিয়ে দিলাম।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানির একপর্যায়ে গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় স্থগিতের মেয়াদ আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। শুনানির জন্য ২ জুলাই দিন রেখে এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে। ফলে ২ জুলাই পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চালাতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পৃথক তিন রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১১ মে হাইকোর্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ১৪ মে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা ১৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম।
শুরুতে মাহবুবে আলম বলেন, বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে। তাঁরা এখনো হাইকোর্টের রায় হাতে পাননি। এই আবেদন স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। প্রধান বিচারপতি বলেন, দরখাস্তে কী দেখাতে চেয়েছেন? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধ থাকায় কি ইফেক্ট হয়েছে? চার দিনে দিনাজপুরে ৩৭টি বাল্যবিবাহ হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রকাশ্য আদালতে অনেক কথা হয়। এ নিয়ে অপব্যাখ্যা হচ্ছে। বিচার বিভাগ সব সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখে। বিচার বিভাগ সরকারের বিপক্ষে নয়। বিচার বিভাগ চালাতে সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। আপনি এটা সরকারকে জানাবেন, সমাধানের জন্য আপনাকে জানিয়ে দিলাম।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এভাবে বললে এটা কি সমাধান হবে? সংবাদপত্রে বড় বড় অক্ষরে হেডলাইন হবে।
পরে শুনানিতে আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে রিট আবেদনকারীকে ৩০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ছয় দিন কারাভোগের পর তিনি জামিন নিয়ে বেরিয়ে সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি দোষ স্বীকার করেছেন, এটি তো বলেননি। হাসান এম এস আজিম বলেন, স্বীকারোক্তির নামে একটি লেখা নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দোষ স্বীকার বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধিতে একটি বিধান আছে। আমরা চাচ্ছি না কোনো বাড়াবাড়ি হোক। ভ্রাম্যমাণ আদালতের তফসিল বাড়তে বাড়তে এক মাইল চলে গেছে। এখন বাকি আছে ৩০২ (দণ্ডবিধির ধারা)। কবে নাগাদ রায়ের কপি পেতে পারেন?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ন্যূনতম ছয় সপ্তাহ।
শুনানির পর আদালত ২ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1188621/