২১ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:১১

সরকারের শিল্প তৎপরতা বন্ধ না হলে প্রাকৃতিক সুন্দরবন রক্ষা সম্ভব হবে না

সরকারের লাগামহীন শিল্প তৎপরতা সুন্দরবনকে হুমকিতে ফেলছে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব ন্যাচার বা আইইউসিএন। একই সাথে সরকারের এই অশুভ কাজ বন্ধ করতেও সংস্থাটি সুপারিশ করেছে।
সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্য সুন্দরবনে নৌ চলাচল ও শিল্প তৎপরতা বৃদ্ধিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব ন্যাচার বা আইইউসিএন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে বাংলাদেশ ও ভারতে সুন্দরবন এখন হুমকির মুখে। সংস্থাটি অবিলম্বে এ ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপরিশ করেছে। পদক্ষেপ হিসেবে সংস্থাটি নৌ চলাচল ও শিল্প তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণের সুপরিশ দিয়ে বলেছে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতের অংশ বিশ্ব ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে হলে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির এক প্রতিবেদনে আইইউসিএন’এর পরামর্শ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বলা হয় তা না হলে বিশ্ব ঐতিহ্যের এ অন্যতম নিদর্শন রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বিশ্বের ৫৫টি প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম হচ্ছে সুন্দরবন। ইউনেস্কোর অধীনে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও আইইউসিএন সুন্দরবনের ওপর নজর রেখেছে ও সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তদারকি করছে। আইইউসিএন দেখছে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় যে সব বিষয় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে তা মেনে চলা হচ্ছে না। এরফলে সুন্দরবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সুন্দরবনে বিশুদ্ধ পানির প্রবাহ বিনষ্ট ও বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন বা স্থাপনা তৈরি বন্ধ ও পরিবেশ ঠিক রাখতে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’এর ৪২তম সভায় বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সুন্দরবনকে রক্ষার জন্যে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সুন্দরবনের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার ৪০ ভাগ ভারতে ও বাকি ৬০ ভাগ বাংলাদেশে পড়েছে। অনেক দুষ্প্রাপ্য জীবজন্তু ও গাছপালা, লতাগুল্ম ও প্রাণি বিশেষ করে কুমির, মিঠা পানির ডলফিন, রাজকীয় বাঘ, জলপাই রংয়ের কচ্ছপ, পানি মাপা টিকটিকিসহ নানা জাতের সরিসৃপ রয়েছে। সুন্দরবনই হচ্ছে একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন যেখানে বাঘ রয়েছে।
আইইউসিএন’এর পক্ষ থেকে সুন্দরবনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জোর আপত্তি জানিয়ে বলা হয় এধরনের স্থাপনা ও নির্মাণ প্রকল্প সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্যে ভয়াবহ পরিণাম বয়ে আনবে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনে বিশুদ্ধ পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকলে মওসুমি পাখিসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তু ও প্রাণির জন্যে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়বে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্পকারখানা স্থাপন ও সশস্ত্র সংঘাতও সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি হিসেব বিরাজ করছে।

http://www.dailysangram.com/post/284613-