২১ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:০৮

গাজীপুরে চাল বিক্রিতে আগ্রহ নেই মিল মালিকদের

য়দেবপুর সরকারি খাদ্য গুদামে বর্তমানে আপদকালীন খাদ্য মজুত বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এমনকি বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হলে নিয়মিত রেশনিং কার্যক্রমও স্বাভাবিক রাখার পরিস্থিতি নেই। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রায় মাসখানেক আগে খাদ্য গুদাম থেকে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। প্রাকৃতিক বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে খাদ্য পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি চলতি বোরো মৌসুমে স্থানীয়ভাবে চাল সংগ্রহ টার্গেট অনুযায়ী না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্তাব্যক্তিরাই। এখনো পর্যন্ত গাজীপুরের কোনো মিল মালিক চাল বিক্রি ও সরবরাহ করতে চুক্তি করেননি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
সরবরাহ কম থাকায় জয়দেবপুর সরকারি খাদ্য গুদামে চালের মজুতের পরিমাণ কমে গেছে। আর দুর্বল মজুত পরিস্থিতিতে বাজারে বেড়ে গেছে চালের দাম। কষ্টে পড়েছেন দরিদ্র মানুষ। তাদের বাজার থেকে চাল কিনতে হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। সরকারের ঘরে চাল না থাকার সুযোগ নিচ্ছে মিল মালিক- আর চাল ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হচ্ছে, চালের সংকটে ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মজুত কম থাকায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি মে মাস পর্যন্ত চালু রাখার কথা থাকলেও এপ্রিলেই তা বন্ধ করা হয়েছে। আর আরো আগে থেকেই খাদ্যের বিনিময়ে কর্মসূচি টিআর-কাবিখা প্রকল্পে চাল-গমের বদলে দেয়া হচ্ছে নগদ টাকা।
সামনে রোজার পর আসছে আনন্দের ঈদ। অন্য বছরগুলোতে ঈদের আগে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র পরিবারগুলোতে চাল দেয়া হতো। প্রতিজনকে দেয়া হতো ১০ কেজি করে চাল। উপজেলা ওয়ারী লোকসংখ্যার অনুপাতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টন চাল দেয়া হতো। এবার ঈদের আগে দরিদ্রদের ভিজিএফ চাল দেয়ার জন্যও পর্যাপ্ত মজুত নেই সরকারি গোডাউনে। তাই হয়তো ভিজিএফের চালের বদলে দেয়া হবে নগদ টাকা। আর তখন টাকা বিতরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে চালের চেয়ে আরো বেশি মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মিল মালিকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহ করলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন মিল মালিকরা। এজন্য চাল সরবরাহে অনীহা তাদের। লোকসান গুনে চাল সরবরাহ সম্ভব হবে না। চলতি মৌসুমে জয়দেবপুর খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ ৪১৯ টন চাল কেনার বরাদ্দ পায়। কিন্তু তারা ১ টনও কিনতে এখনো চুক্তি করতে পারেননি মিল মালিকদের সঙ্গে। গত বছর এই গোডাউনে ১২০ টন চাল সরবরাহ করেছেন স্থানীয় ওসমান মোল্লা অটো রাইস মিলের মালিক নূর আলম। গোডাউন কর্মকর্তাগণ এবার তাকে সরবরাহের জন্য ডেকে নিলেও তিনি সরবাহ করতে চুক্তি করেননি। মিল মালিক নূর আলম জানান, বর্তমানে যেখানে ধানের মণ ৮০০ টাকা, সেখানে এক কেজি চাল সরবরাহ করতে তার সর্বনিম্ন খরচ হবে ৩৯ টাকা। তারপর লাভের হিসাব। আর সরকার দর নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা। সে হিসেবে ১০০ টন চাল সরবরাহ করলে তার ক্ষতি হবে প্রায় ৫ লাখ টাকা। কাজেই ক্ষতি হিসাব গুনে কেউ ব্যবসা করতে রাজি নন। তাই এবার তিনি এই দরে সরকারী গোডাউনে চাল সরবরাহ করতে চাননি। চুক্তিও করেননি। গত বছর তিনি গোডাউনে ১২০ টন চাল সরবরাহ করেছেন ৩৩ টাকা কেজি হিসেবে। আর তখন বাজারে প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৩০ থেকে ৩১ টাকা। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহে সংশয়ে রয়েছেন কর্মকর্তারা।
গাজীপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, জয়দেবপুর খাদ্য গুদামে বর্তমানে চালের মজুত ৪২২ টন আর গমের মজুত ১২৩ টন রয়েছে। আগে সাধারণত ৮০০ থেকে ৯০০ টন চাল এবং ৪০০ থেকে ৫০০ টন গম মজুত থাকতো। আপদকালীন মজুত কম থাকায় তারাও উদ্বিগ্ন। উদ্বেগের মূল কারণ হলো বিশেষ জরুরি গ্রাহক। যারা নিয়মিত রেশন পেয়ে থাকেন। এই শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও কারাগার। দেশের বৃহত কারাগার কাশিমপুর কারাগারের বন্দি, কারারক্ষীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এই গোডাউন থেকে চাল নিয়ে থাকেন। গাজীপুরে শুধু সেনাবাহিনীর জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় প্রায় ২০০ টন চাল। তবে যা মজুত আছে তা থেকে চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে এর থেকে বিভিন্ন সংস্থার গ্রাহককে দিতে লাগবে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ টন চাল। এ মাসের মধ্যে সরবরাহ না পেলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই আগামী মাসে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। আর সংকট মোকাবেলা করতে এরই মাঝে চাহিদাপত্র গত ৩০শে এপ্রিল পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে। চাহিদাপত্রে জরুরি ভিত্তিতে এই গোডাউনে ২০০ টন চাল বরাদ্দের দাবি জানিয়ে উল্লেখ করা হয়, জয়দেবপুর খাদ্য গুদাম থেকে ইপি/ওপি ও সেনাখাতে বিলি বিতরণের জন্য ওই চালের প্রয়োজন হবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=66257&cat=3/