২১ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:০৭

কলেজ ভর্তিতে জালিয়াতি

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকের রুমের সামনে অভিভাবকদের জটলা। তাদের অভিযোগ, রাজধানীর শেরেবাংলা স্কুল কর্তৃপক্ষ জোর করে তাদের সন্তানদের অনলাইন আবেদন করে ফেলেছেন। শুধু এই কলেজকে পছন্দের তালিকায় রাখায় তা বাতিল করতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়া হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে। অনেক অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখানো হয় কলেজ থেকে। এখানে ভর্তি না করালে মার্কশিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেয়া হবে না। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার ৪টি কলেজও এই প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মতি ছাড়াই আবেদন করে ফেলেছে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে দেখেন তার আবেদনটি করা হয়ে গেছে। শুধু শেরেবাংলা বা ফুলবাড়ীয়ার কলেজ নয়, সারা দেশে নামসর্বস্ব কিছু কলেজ শিক্ষার্থীদের অনুমতি ছাড়াই অনলাইনে আবেদন করে নিয়েছে। এটা সরাসরি ক্রাইম বলছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এক সময় এই ধরনের প্র্যাকটিস হতো। এটা বন্ধ করতে চলতি বছর থেকে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী আবেদন থেকে শুরু করে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাধীনতা পাবে। কেউ জোর করে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করালে তা বাতিল করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজন্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে আবেদনের সঙ্গে মূল রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্র দেখালে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষার্থীর আবেদন সার্ভার থেকে মুছে দেবে। তারপর ওই শিক্ষার্থী পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে অনলাইনে করা আবেদনে ভুল হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঁচবার সংশোধনের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। একই সঙ্গে কোনো কলেজের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতারণার প্রমাণ পেলে ওই প্রতিষ্ঠান একাডেমিক স্বীকৃতি স্থগিতসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও স্থগিত করা হবে।
অভিযোগের ব্যাপারে শেরেবাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার মানবজমিনকে বলেন, আমার কলেজ থেকে এ ধরনের কাজ করা হয়নি। কেউ হয়তো বাইরে থেকে করে থাকতে পারে। শিক্ষার্থী অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিল আমি তাদের বোর্ডে যেতে বলেছি। তিনি বলেন, আমার কলেজের কোনো শিক্ষক যদি এ ধরনের কাজ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, অনলাইনে ভর্তিকার্যক্রম চালু হওয়ায় অনেক কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না- এই আশঙ্কা থেকেই জোর করে শিক্ষার্থীদের আবেদন করাচ্ছে। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। কোনো শিক্ষার্থী আবেদন বাতিল করতে চাইলে তাকে মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও মূল প্রবেশপত্রসহ স্ব স্ব শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখায় আগামী ১৬ তারিখ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে যোগাযোগ করার নির্দেশনা ভর্তির ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর ঈড়হঃধপঃ গড়নরষব ঘঁসনবৎ ভুল হলে, ঝবপঁৎরঃু ঈড়ফব না পেলে ভর্তির ওয়েবসাইট থেকে সংশোধন করতে পারবে। যারা আবেদন করতে গিয়ে ভুল নম্বরে টাকা পাঠিয়েছে তাদের পুনরায় ফি দিতে হবে না। আমরা এ ভুলগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নিয়েছি।
এদিকে গতকাল বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। এরমধ্যে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৭ জন অনলাইনে এবং টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৮৯ জন আবেদন করেছেন। রাজধানীর কলেজগুলোতে আবেদনের শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে, ঢাকা সিটি কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা কলেজ, উত্তরা রাজউক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ। একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করেন, রাজধানীর সরকারি বদরুন্নেসা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা জিপিএ-৩.৫ নির্ধারণ করলেও অনলাইনে আবেদন করতে গেলে জিপিএ-৪ চাচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে এটি সংশোধন করে দেয়া হবে। তবে কলেজটিতে যে আসন সংখ্যা রয়েছে তাতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে না।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ২৬শে মে পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে। ২৭ থেকে ২৯শে মে শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তারা ৩০ থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ৬ থেকে ৮ই জুন সিলেকশন (যে কলেজের তালিকায় নাম আসবে ওই কলেজেই শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন) তা এসএমএসে নিশ্চিত করতে হবে। এরপর মাইগ্রেশনের আবেদন (অপশন প্রদান) এবং নতুন আবেদন করা যাবে ৯ থেকে ১০ই জুন পর্যন্ত। ১৩ই মে দ্বিতীয় পর্যায়ে এবং ১৮ই মে তৃতীয় পর্যায়ের ভর্তি ফল প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ১৪ থেকে ১৫ই জুন সিলেকশন নিশ্চিত করবে এবং মাইগ্রেশন আবেদন (অপশন প্রদান) ও নতুন আবেদন করতে হবে ১৬ থেকে ১৭ই জুনের মধ্যে। তৃতীয় পর্যায়ে তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ১৯শে জুন সিলেকশন নিশ্চিত করবে। ২০ থেকে ২২শে জুন এবং ২৮ থেকে ২৯শে জুন দুই দফায় শিক্ষার্থী ভর্তি শেষে আগামী ১লা জুলাই ক্লাস শুরু হবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=66230&cat=6/