২১ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:০৪

আতঙ্কে ভ্যাট ও শুল্ক কর্মকর্তারা

কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট-এর কাছে এনবিআর এর চিঠি : হাটে হাঁড়ি

আতঙ্কে আছেন ভ্যাট ও শুল্ক কর্মকর্তারা। জুয়েলারী ব্যবসার ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা শুভঙ্করের ফাঁকি নিয়ে এ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, জুয়েলারী ব্যবসা নিয়ে ‘বৈধ-অবৈধের’ প্রশ্নে চটে আছেন জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা। তারাও যেকোনো মুহূর্তে ‘হাটে হাঁড়ি’ ভেঙ্গে দিতে পারেন। তাতে শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অনেকেরই মুখোশ খুলে যাবে। ঢাকার সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট-এর কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জুয়েলারী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার কোনো জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানেই সঠিকভাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায় করা হয় না। এনবিআর সঠিকভাবে তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে। জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে চারভাগের একভাগ ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে থাকেন। এজন্য তাদের মাসে মাসে মসোহারা দিতে হয়। এনবিআর সঠিকভাবে তদন্ত করলে এ বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। আবার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিভিন্ন নামীদামী জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে মণকে মণ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড। আপন জুয়েলার্সে শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ জব্দ করে জানিয়েছেন, তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এতে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়, ঢাকার অন্যান্য সব নামীদামী জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই চিত্র ধরা পড়বে। কারণ শুল্ক ও গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য মতে, গত ১০ বছরে বৈধপথে খুব বেশি স্বর্ণ আমদানী হয়নি। এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেছেন, আপন জুয়েলার্সে যারা অভিযান চালিয়েছে তারা কি আগে থেকে জানতো না যে আপন জুয়েলার্সের বৈধ কাগজপত্র নেই? তিনি বলেন, দেশের স্বর্ণ ব্যবসার কী অবস্থা তা এক আপন জুয়েলার্স থেকেই বোঝা যায়।
জুয়েলারী ব্যবসায়ী সমিতির এক শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের স্বর্ণ কীভাবে আসে কোথা থেকে আসে তা নিয়ে শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এতোদিন কোনো প্রশ্ন তোলেননি। এখানে চোরাচালানের একটা বড় অংশ আছে সেটাও তাদের জানা। তবে এটা ঠিক যে, জুয়েলারী ব্যবসার একটা বড় অংশ আসে যাত্রীদের মাধ্যমে বৈধভাবে। ওই ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন জুয়েলার্সকে যেভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে তাতে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। হঠাৎ করে আইন দেখিয়ে তারা আমাদেরকে শেষ করে দিবে-এটা হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে আমরাও মুখ খুলবো। অর্থমন্ত্রীর কাছে যাবো। আমরা মুখ খুললে শুল্ক ও গোয়েন্দাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে এখন যারা মিডিয়াতে বড় বড় কথা বলছেন তাদেরও কারো কারো মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় স্বর্ণ চোরাচালানীর যে ২৫টি সিন্ডিকেট আছে তার সাথে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু বরাবরই তারা থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আলাপকালে জুয়েলারী ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা বলেন, এবার আমরা তালিকা তৈরী করছি।
অন্যদিকে, জুয়েলারী দোকান থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স নিয়ে অনিয়ম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এ অনিয়মের বিষয়টি উদঘাটনের জন্যই ভ্যাট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট-এর কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এনবিআরের নির্দেশিত ছকে ভ্যাট সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ভ্যাট সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিলে অনেক কর্মকর্তাই ফেঁসে যাবেন বলে খোদ স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরই ধারণা। তারা বলেন, ঢাকা শহরে কোনো জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানই সঠিক অঙ্কের ভ্যাট ট্যাক্স দেয় না। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই অনিয়মই অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এনবিআর এর চিঠিতে হীরক বা অন্য কোনো মূল্যবান পাথর ব্যবসায়ী থাকলে ওই হীরক বা অন্য মূল্যবান পাথর ব্যবসায় ব্যবহৃত পণ্যের উৎস কী, তা জানানোর জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রীত গহনায় ব্যবহৃত হীরক ও অন্য মূল্যবান পাথরের উৎস কী, তা জানানোর জন্য বলা হয়েছে। জুয়েলারী সমিতির একাধিক নেতা বলেন, এসব তথ্য জানাতে গেলে আবার নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এতে করে জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা আবার নতুন করে হয়রানীর শিকার হবে। ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে ধর্মঘটসহ আন্দোলনের কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো। একই সাথে যারা এতোদিন ‘অবৈধ’ সুবিধা নিয়ে এখন ‘ভালো’ সাজার ভান করছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিতে দ্বিধা করবো না।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/80373/