২১ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:০৩

অফশোর ব্যাংকিংয়ে হঠাৎ অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ

দুটি বেসরকারি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় ১১শ' কোটি টাকার ঋণ হঠাৎ করে খেলাপি দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে এবি ব্যাংকের রয়েছে ৩০৭ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকে ৭৮১ কোটি টাকা। দুটি ব্যাংকের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ঋণখেলাপি দেখানো হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মোট খেলাপি ঋণ কয়েকগুণ বেড়ে ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় ঠেকেছে। তিন মাস আগেও এক্ষেত্রে খেলাপি ছিল মাত্র ১০১ কোটি টাকা। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চভিত্তিক ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং প্রতিবেদনে বিস্ময়কর এ তথ্য উঠে এসেছে।


অফশোর ব্যাংকিং হলো, দেশে কার্যরত ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়া আলাদা ইউনিট। এই ইউনিট শুধু দেশের বাইরে থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সংগ্রহ করে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়। বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো নীতিমালা ছাড়া চলছে এসব ইউনিটের কার্যক্রম। এমন প্রেক্ষাপটে অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে একটি নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নীতিমালার খসড়াটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলো থেকে দেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণ রয়েছে তিন হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এর মধ্যে মন্দমানে শ্রেণিকৃত তথা আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ দেখানো হয়েছে ৭৮০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকটির অফশোর ইউনিটের ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংই এখন খেলাপি। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে কখনও খেলাপি ঋণ ছিল না। গত ডিসেম্বরেও ব্যাংকটির মাধ্যমে বিতরণ হওয়া তিন হাজার ১০৪ কোটি টাকার সবই ছিল নিয়মিত।


অন্যদিকে, গত মার্চ পর্যন্ত এবি ব্যাংকের অফশোর ইউনিট থেকে এক হাজার ১৯৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩০৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। মূলত এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বেশ আগে চার বিদেশি কোম্পানিকে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলার সমপরিমাণ প্রায় চারশ' কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ঋণের নামে এসব অর্থ পাচার হয়েছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শনে বিষয়টি উঠে আসার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এসব অর্থ আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জোর চাপ দেওয়া হয়। ঋণ আদায়ে কয়েক দফা সময় নিয়ে সামান্য কিছু আদায় হলেও বেশিরভাগই রয়েছে অনাদায়ী। অনেক দেনদরবারের পর গত মার্চে এসে ৩০৭ কোটি টাকা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খেলাপি করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শুরুর দিকে এবি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসানো হয়েছে।


এবি ও ইসলামী ব্যাংকের বাইরে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের অফশোর ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে ৯৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। ব্যাংকটির বিতরণ করা এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা ঋণের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি উরি ব্যাংকের ৫৫৪ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে খেলাপি রয়েছে ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ে এই দুই ব্যাংকের বাইরে এক টাকাও কোনো খেলাপি ছিল না। যদিও বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।


ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিষয়ে বক্তব্য নিতে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ করেও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এ নিয়ে এখনই তারা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিংয়ে কোনো খেলাপি নেই। এখানকার পদ্ধতিটা এমন যে, হুট করে খেলাপি হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। সেখানে হঠাৎ করে মন্দমানে খেলাপি দেখানোটা অবাস্তব।


ইসলামী ব্যাংকের এই বক্তব্যের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে তথ্য সংগ্রহ করে হুবহু প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব কোনো বিশ্লেষণ বা মতামত থাকে না। ফলে ভুল হয়ে থাকলে তা ব্যাংকের ভুল। এবি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক চার কোম্পানিকে দেওয়া ঋণ আদায় করতে না পারায় তাদের এ পরিস্থিতি হয়েছে। ওই ঋণ আদায়ে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

 

http://bangla.samakal.net/2017/05/21/294362