২১ মে ২০১৭, রবিবার, ৯:০১

হাওরের বানে এবার ভাঙছে ভিটে-বাড়ি

জেলায় হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরীতে অকাল বানের পানিতে ধান নষ্ট ও মাছ-হাঁস মারা যাওয়ার পর এখন কৃষকের শেষ সম্বল ভিটে-মাটিটুকুও গ্রাস করছে। ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে পড়ছে অরক্ষিত বাড়ি-ঘর। হঠাত্ দুর্যোগে কৃষকের হাতে টাকা না থাকায় কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারছে না।

সম্প্রতি বাঁধ ভাঙা ঢলের পানিতে অকাল বন্যায় খালিয়াজুরীর প্রায় শতভাগ বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়াসহ মাছ ও হাঁস মারা যাওয়া শেষ হতে না হতেই এখন এখানে ঢেউয়ের আঘাতে প্রায় অর্ধশত গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আগাম এ ভাঙন ঠেকানোর প্রস্তুতি আর অর্থ না থাকায় নিশ্চিহ্ন হচ্ছে অসংখ্য ভিটে-বাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য বছর হাওরে পানি আসতো আষাঢ় মাসে। তাই হাওর পাড়ে ঢেউয়ের কবল থেকে বাড়ি বাঁচাতে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া হতো জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিকে। বৈশাখী ফসলের আয়ে বাঁশ, প্লাস্টিকের বস্তা কিংবা বাঁশের বেড়াসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে এনে আগের বছরগুলোতে বাড়ির প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে পারলেও এবার তা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এ বছর চৈত্রের শুরুতেই হঠাত্ বন্যার পানি এসে হাওরের ফসলসহ ঘর-বাড়িতে হানা দিয়েছে। এতে ফসল হারিয়ে এলাকাবাসী অর্থ সংকটে পড়েছে এবং ঘর-বাড়ি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে পারছেন না বলে এখন এখানে পানির স্রোত হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।

কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের সুরঞ্জিত দাস বলেন, ‘ইবার বানের পানির ঢেউয়ে আমার বসত ঘরের আধা শতাংশ জায়গা ভাইঙ্গা নিছে। অহন আর আধা শতাংশ জায়গা আছে হেইডা বাইনদা রাকমু কেমনে এই চিন্তায় দিশা পাইতাচি না। ইবার সব ফসল তলাইয়া যাওয়ায় হাতে ট্যাহা নাই। এরলাইগ্যা অহন বউ-পুলাপানের খাওন ঠিকমত যোগাইতে পারতাচিনা, মাজনের ঋণ পরিশোধ করতে পারতাচি না, বাড়িও বাইনদা রাখতে পারতাচি না’।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই গ্রামে সুরঞ্জিত দাসের মতো দিশেহারা রনধির সরকার, সিবাশ সরকার, অলক সরকার, বাবলু সরকার, প্রসেন সরকার, সুবির সরকারসহ আরও ৩০/৪০টি পরিবার বাড়ি ভাঙনের দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। তারাও টাকার অভাবে বাড়ির প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত করতে পারছেন না।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান তালুকদার সুয়েবসহ স্থানীয় ইউপি’র কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, নগর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি নতুনপাড়া, তাতিয়া উত্তরপাড়া, পাঁচগাছিয়া, তাতিয়া, হায়াত্পুর, চাকুয়া ইউনিয়নের দাউদপুর, মুকিমপুর, গোবিন্দপুর, পাতরা, সুলতানপুর, বাগনবাড়ি, মেন্দিপুর ইউনিয়নের জগন্নথপুর, ইসলামপুর, রসুলপুর, বানোয়ারি, খালিয়জুরী সদর ইউনিয়নের গছিখাই, কাদিরপুর, যুগিমারা, মমিননগর, গাজীপুর ইউনিয়নের চড়পাড়া, পাঁচহাট, বয়রা, বাতুয়াই, পাঁচহাট বাজার, দাউদপুর, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর, কুতুবপুর, কৃষ্ণপুর নামাপাড়া গ্রামগুলো ব্যাপকভাবে ভাঙলেও অর্থের অভাবে তা ঠেকানো যাচ্ছে না।

ইউএনও মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, তিনি ভাঙনকবলিত কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন এবং দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের ঘর-বাড়ি রক্ষার্থে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রেবেকা মমিন বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2017/05/21/114526.html