২০ মে ২০১৭, শনিবার, ১০:১৫

চালের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছেই

চালের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছেই। দফায় দফায় বেড়েই চলছে চালের দাম। গত একমাসে কয়েক দফা বেড়েছে চালের দাম। আবার পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে আদা ও রসুনের দামও বেড়েছে। মুদি পণ্য ও সবজির দাম কয়েকদিন আগে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানেও বৃদ্ধি পাওয়া দাম বহাল রয়েছে।
দিন দিন চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তারা বলছেন, নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়ছেই।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চালের দাম ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই চালের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত সপ্তাহে যে চালের বস্তা (৫০ কেজি) ২ হাজার ৬৫০ টাকায় কিনেছি, এ সপ্তাহে সেই বস্তা কিনতে হয়েছে ২ হাজার ৭৫০ টাকায়।
চাল ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, সাধারণ মানুষের চাহিদা হচ্ছে গুটি স্বর্ণা ও পারিজাত চাল। সরকার কর আরোপ করায় ভারত থেকে একেবারে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাই চালের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘আটাশ চাল ৫০ কেজির বস্তা কিনতে হচ্ছে পাইকারি ২৩০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে কিনেছি ২ হাজার ২২০ টাকা। এখন কেজিতে যদি ২ টাকা বেশি না রাখি তাহলে আমাদেরতো কোন লাভই থাকবে না।’
বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬-৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৪-৫৫ টাকা। পারিজাত বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৪৮ টাকা, গুটি স্বর্ণা চাল ৪৭ টাকা, আটাশ চাল ৪৭-৪৯ টাকা, নাজিরশাইল ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৫৫ টাকা কেজি।
নাসরিন সুলতানা নামে এক চাল ক্রেতা জানান, বাজারের যে চরিত্র দাঁড়িয়েছে, এতে কয়েকদিন পর না খেয়েই থাকতে হবে। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ জনগণের অবস্থা খারাপ হবে।
তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ায় আয়ের বড় একটি অংশই চলে যায় চাল কিনতে। সেই চালের দাম দফায় দফায় বাড়ছে।’
এদিকে বাজার বিশ্লেষণ ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল ৪৬-৪৮ টাকা, মিনিকেট (ভালো মানের) ৫৮-৬২ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৭-৬০ টাকা, বিআর২৮ ৪৮-৫২ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা ও উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাইজাম চাল ৫০-৫২ টাকা, বাসমতি ৫৬-৫৮ টাকা, কাটারিভোগ ৭৮-৮০ টাকা এবং পোলাও চাল ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি পণ্যের বাজারেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতি কেজি ছোলা ৯৫ টাকা; মুগ ডাল ১৩৫ টাকা দরে; ভারতীয় মুগ ডাল ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাসকলাই ১৩৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১২৫ টাকা ও ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৭২-৭৩ টাকা দরে চিনি; ১৩০ টাকায় দেশি রসুন; ২৩০ টাকায় ভারতীয় রসুন বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোজ্য তেলও আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের বোতল ব্র্যান্ড ভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৬ টাকা। লবণের কেজি ৩৮ টাকা; দারুচিনি ৩৬০ টাকা; জিরা ৪৫০ টাকা; শুকনা মরিচ ২০০ টাকা; লবঙ্গ ১৫০০ টাকা; এলাচ ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচা পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি টমেটো কেজি ৪৫-৫০ টাকা, সাদা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, কালো বেগুন ৬০ টাকা, শশা ৩৫-৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পটল ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, করলা ৪৫-৫০ টাকা, কাকরোল ৪৫-৫০ টাকা, আলু ১৮-২০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা এবং লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক আঁটি প্রতি ১৫ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা এবং লাউশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০-৮০০ টাকা, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে; প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৬০০ টাকা।
এছাড়া গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪৫০-৫০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগি ১৮০, দেশি মুরগি ৪০০, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/284557-