২০ মে ২০১৭, শনিবার, ১০:১০

লাইনে দাঁড়িয়েও হাকালুকির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা পাচ্ছেন না ওএমএসের চাল

মৌলভীবাজারের বড়লেখার হাকালুকি হাওরপারের বোরো ফসল হারানো হাজার হাজার কৃষকের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। ১৫ টাকা কেজি দরের ওএমএসর চাল বিক্রি গত ৮ মে থেকে শুরু হলেও তালিমপুর ইউনিয়নে চালু করা বিক্রয়কেন্দ্রটি দুর্গত এলাকা থেকে অনেক দূরবর্তী স্থানে হওয়ায় এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না প্রকৃত তিগ্রস্তরা। অবশেষে গত মঙ্গলবার থেকে হাওরপারের কানুনগো বাজারে চালু হয় খোলা বাজারে চাল বিক্রি। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও দুর্গত মানুষজন শেষ পর্যন্ত চাল না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে হাওরপারের দুইটি বিক্রয়কেন্দ্রে হতাশার এমন চিত্র দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাওরপারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ও সুজানগরের অন্তত ২০ হাজার মানুষ বন্যায় বোরো ফসল হারিয়ে মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হন। গত ৯ মে সড়ক, যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হাকালুকির তিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি সেখানে আগামী বোরো ফসল ঘরে ওঠার পূর্ব পর্যন্ত হাওরপারের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার তিগ্রস্ত কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এমনকি ৬ হাজার ভিজিএফ কার্ড প্রদানেরও ঘোষণা দেন।
দুর্গত লোকজনদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে উপজেলা প্রশাসন নিয়োগ দেয় চারজন ওএমএসের ডিলার। গণহারে তিগ্রস্ত তালিমপুর ইউনিয়নের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয় তিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে। ফলে সরকারের আসল উদ্দেশ্য দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মহৎ উদ্যোগটি পণ্ড হয়ে যায়। এসব দুর্ভোগ নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রতিবেদন ছাপা হলে উপজেলা প্রশাসন দূরবর্তী স্থানের ডিলার বাতিল করে তালিমপুর ইউপির কানুনগোবাজারে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ডিলার নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। অবশেষে আট দিন পর সফিক উদ্দিনকে প্রতিদিন জনপ্রতি ৫ কেজি ২০০ দুর্গত মানুষের কাছে বিক্রির জন্য এক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
সরেজমিনে সুজানগর ইউপির আজিমগঞ্জ বাজারের ওএমএসের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দুর্গত মানুষের দীর্ঘ লাইন। ডিলার মোক্তার আলী জানান, প্রতিদিন ২০০ মানুষের কাছে চাল বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দোকান খোলার সাথে সাথেই ৫০০-৬০০ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমান। এ অবস্থায় বরাদ্দ শেষ হওয়ায় বিক্রি বন্ধ রাখতে গিয়ে চাল না পেয়ে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। সরবরাহ না বাড়ালে চাল বিক্রি নিয়ে নানা ঝামেলা সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে।
ওএমএসের চাল কিনতে আসা সুজানগর ইউপির সালদিগা গ্রামের ইন্দ্রজিৎ বিশ^াস, মাখন দাস, রিপন দাস; ভোলারকান্দি গ্রামের রুশনা বেগম, পারভীন বেগম প্রমুখ জানান, পাঁচ কেজি চাল কিনতে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও ডিলার জানান চাল শেষ। এভাবে তারা দুই দিন চাল না পেয়ে ফিরে গেছেন। নূর ইসলাম নামের এক উপকারভোগী জানান, পাঁচ কেজি চালের জন্য পুরো দিন চলে যায়।
তালিমপুর ইউনিয়নের ওএমএসের দোকানে কয়েক শ’ নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন থাকতে দেখা গেছে। ডিলার সফিক উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে ১৫০ জনকে চাল দেয়া শেষ করেছেন। লাইনে অন্তত ২০০ জন লোক দাঁড়ানো রয়েছেন। আরো ৫০ জনকে দেয়ার পর অবশিষ্টদের চাল নেই বলা মাত্রই বিশৃক্সক্ষলা সৃষ্টি হয়।
সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী ও তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস ও বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন কমপে তিন টন চাল বিক্রির ব্যবস্থা নিলে লাইনে দাঁড়ানো দুর্গত লোকজন অন্তত চাল না নিয়ে বাড়ি ফিরবে না। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল জানান, ওএমএসের চাল বরাদ্দ দ্বিগুণ করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/221405