২০ মে ২০১৭, শনিবার, ৯:৪৫

ভাসানীর ফারাক্কা মিছিল

আত্মপক্ষ

|| এবনে গোলাম সামাদ ||

ভাসানীর ফারাক্কা মিছিল হতে পেরেছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে। শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় থাকলে যে ফারাক্কা মিছিল হতো না, সেটা সহজেই অনুমান করা চলে। ফারাক্কা মিছিল হতে পেরেছিল কেবল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন বলেই নয়, তিনি চেয়েছিলেন ফারাক্কা মিছিল হোক। তিনি জুগিয়েছিলেন এই মিছিলের সব খরচপত্র। করেছিলেন মিছিলকারী মানুষের আবাসন ও আহার্যের ব্যবস্থা। এর লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষকে ফারাক্কার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা এবং বিশ্বজনমতকে গঙ্গার পানি বণ্টনে বাংলাদেশের অনুকূলে আনা।
অনেকে এখন ভাসানীর ফারাক্কা মিছিলকে বলছেন ‘ফারাক্কা লংমার্চ’। কিন্তু চীনের নেতা মাও জেডং (যিনি আমাদের কাছে সাধারণত মাও সেতুং নামে পরিচিত)-এর লংমার্চের কোনো তুলনা হয় না। মাও ও ভাসানী একপর্যায়ের নেতা ছিলেন না। মাও ছিলেন বিরাট সামরিক প্রতিভা। তিনি আপন চেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন এক বিরাট সেনাবাহিনী। এই সেনাবাহিনীর এক লাখ লোক নিয়ে তিনি করেছিলেন ছয় হাজার মাইল দীর্ঘ মার্চ। এই মার্চ হয়েছিল যুদ্ধ করতে করতে। পথে যুদ্ধে এবং না খেতে পেয়ে মারা যান ৮০ হাজার সৈন্য। ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে মাও দখল করেন ইয়েমান শহর। আর সেই শহরকে কেন্দ্র করে স্থাপন করেন একটি রাষ্ট্র, যা থেকে শুরু হয় চীনে কমিউনিস্ট শাসন।
ভাসানীর ফারাক্কা মিছিল কোনো সামরিক অভিযান ছিল না। এ ছিল নিরস্ত্র গণমানুষের মিছিল। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা মিছিল শুরু হয় রাজশাহীর সরকারি মাদ্রাসার মাঠ থেকে। আর তা শেষ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার (বর্তমানে উপজেলা) কানসাট ইউনিয়নের হাইস্কুলের মাঠে জনসভা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। আমি ভাসানীপন্থী ছিলাম না। কিন্তু পদ্মা নদীর তীরে আমার বাড়ি। এই নদীর সাথে আমার আশৈশব পরিচয়। আমি কানসাটে গিয়েছিলাম, ভাসানী সাহেব পদ্মা নদী সম্পর্কে কী বলেন, সেটা নিজের কানে শুনতে। কানসাটের সভা আমার মনে স্মৃতি হয়ে আছে। কানসাটের সভায় ভাসানী বলেছিলেন ভাগীরথী গঙ্গার মূল শাখা নয়। পদ্মা হলো গঙ্গার মূল প্রবাহ। যা বয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। তাই গঙ্গা কেবল ভারতের নদী নয়, বাংলাদেশেরও নদী। বাংলাদেশের অধিকার আছে গঙ্গা নদীর পানির ওপর। এটা মেনে নিয়ে আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী গঙ্গার পানি ভাগ হতে হবে। বাংলাদেশকে দিতে হবে প্রাপ্য পানি।
ভাসানী সাহেবের বয়স এ সময় ছিল প্রায় ৯৬ বছর। তিনি ছিলেন অসুস্থ। তার বক্তৃতা দিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে। এত অধিক বয়সে খুব কম নেতার পক্ষেই সম্ভব সে দিনে কানসাটের মতো একটি জায়গায় এসে বক্তৃতা করা। কানসাটে সভা হয়েছিল আজ থেকে ৪১ বছর আগে। তখন কানসাটের পথ ছিল খানাখন্দকে ভরা। সেখানে যেতে আমাদের বেশ কষ্ট হয়েছিল। ওই সভায় খুব বেশি লোক যে ছিলেন, তা নয়। কেননা, খুব বড় সভা হওয়ার মতো পরিস্থিতি সেখানে ছিল না। আমরা সেখানে যারা গিয়েছিলাম, তারা যথেষ্ট কষ্ট করেই গিয়েছিলাম। ফেরার পর আমার গায়ে ছিল পথচলার ব্যথা। আমার ধারণা আরো অনেকেরই এ রকম ব্যথা অনুভূত হয়েছিল।
রাজশাহীতে মাদ্রাসা ময়দান থেকে ফারাক্কা মিছিল শুরু হওয়ার আগে এক ঘরোয়া আলাপচারিতায় ভাসানী বলেছিলেন, তড়িঘড়ি করে সাবেক পাকিস্তানকে ভেঙে দেয়া ভুল হয়েছে। না হলে ফারাক্কা সমস্যার সমাধান হতে পারত অনেক সহজে। কিন্তু এখন আর তা হতে পারবে না। আমি ওই ঘরোয়া সভায় উপস্থিত ছিলাম না। কথাটা পরে শুনেছিলাম একজন নির্ভরযোগ্য ভাসানী সমর্থকের কাছে। তিনি এতে খুবই বিস্মিত হয়েছিলেন। কেননা, ১৯৭০ সালে ভাসানী বলেছিলেন, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার কথা। আর তিনি আবার এখন বলছেন তড়িঘড়ি করে সাবেক পাকিস্তানকে ভেঙে দেয়া সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি, যা ছিল তার আগের ধারণা থেকে একেবারেই ভিন্ন।
আমি কিন্তু তার এই মত বদলানোর ব্যাপারে বিস্মিত হইনি। কেননা, ১৯৭১ সালে আমি ছিলাম কলকাতায়। হঠাৎ একদিন শুনতে পাই, ভাসানী কলকাতায় এসে গৃহবন্দী হয়েছেন। তাকে দেয়া হচ্ছে না কোনো ধরনের রাজনীতি করার সুযোগ। ভাসানী কলকাতায় গিয়ে কার্যত হন বিশেষভাবে লাঞ্ছিত। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট। তিনি তার কাছে আদৌ বাঞ্ছিত ব্যক্তি ছিলেন না। অন্য দিকে খন্দকার মোশতাক আহমদ ছিলেন পুরোপুরি মার্কিন লবির লোক। ভাসানী ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোঁড়া সমালোচক। তাই তিনি মোশতাক আহমদের কাছেও ছিলেন না গ্রহণযোগ্য। এ সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে সোভিয়েত পন্থী ও মার্কিন পন্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হতে পেরেছিল বিরাট ফারাক। ইন্দিরা গান্ধী মোশতাককে পছন্দ করতেন না। কিন্তু তিনি মার্কিন চাপে তাকে খুব একটা ঘাঁটাতেও চাইতেন না। এ সময় কলকাতায় জ্যোতি বসুর দল (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসিস্ট) চাচ্ছিল না সাবেক পাকিস্তান ভেঙে যাক। কেননা, ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই বলেছিলেন বহিরাক্রমণ থেকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য গণচীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জ্যোতি বসু মনে করতেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন চায় না প্রকৃত সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু চীনের কমিউনিস্টরা চায় সারা বিশ্বে প্রকৃত সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। পাকিস্তান ভেঙে পড়লে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বে প্রকৃত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ভাসানী তাই কোনো সমর্থন পান না বামপন্থী কমিউনিস্টদের কাছ থেকে। তিনি হয়ে পড়েন একান্তভাবেই একা। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন ভারত আসলেই চাচ্ছে না বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে। তার লক্ষ্য হলো পাকিস্তানকে ভাঙা। বদলে যায় তার আগের চিন্তাচেতনার মোড়। তিনি হয়ে ওঠেন ভয়ঙ্করভাবে ভারতবিরোধী।
একাত্তরের যুদ্ধের পর তিনি দেশে ফিরে আর বামপন্থী থাকেন না; হয়ে ওঠেন, বলা যায় দক্ষিণপন্থী। গড়েন খোদায়ী খিদমতগার দল। তিনি এই দলে নেতা হিসেবেই দিয়েছিলেন ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব। যদিও কিছু বামপন্থী তখনো চাচ্ছিলেন, তার নামকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করতে। আর এই মিছিলকে বলছিলেন ভাসানীর লংমার্চ। কিন্তু ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন তখন আর বাম চেতনা নিয়ন্ত্রিত ছিল না। তিনি আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছিলেন ইসলামি মূল্যবোধকে। তাই তিনি নিজের দলের নাম দিয়েছিলেন খোদায়ী খিদমতগার। সম্প্রতি ভাসানীর ওপর দু’টি লেখা আমার চোখে পড়েছে। একটি লেখার শিরোনাম হলো ‘কাগমারী সম্মেলনের ৬০ বছর পূর্তি’ (যুগান্তর : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। আরেকটি লেখা হলো ‘কাগমারীর দ্বীপশিখা জ্বলছে তো জ্বলছেই’ (যুগান্তর : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। এর প্রথমটির লেখক হলেন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর আর দ্বিতীয়টির লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ্।
বদরুদ্দীর উমরের মতে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ছিল আসলে পাকিস্তানের পাঞ্জাবিদের পররাষ্ট্রনীতি। তারা চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক জোট বাঁধতে। এটা তারা করেছিল কেবল নাকি পাঞ্জাবিদেরই স্বার্থের কথা ভেবে। আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও তার শিষ্য শেখ মুজিবুর রহমান এই নীতি সমর্থন করেছিলেন কেবল পাঞ্জাবিদের খুশি করে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য। আমরা জানি, ভাসানী ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারীতে ডেকেছিলেন সম্মেলন। এই সম্মেলনে তিনি করেছিলেন পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির বিশেষ সমালোচনা। আওয়ামী লীগ তার সমালোচনাকে গ্রহণ করেনি। ভাসানী বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গড়েন। সোহরাওয়ার্দী বলেন, পাকিস্তানের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তা আছে। আমার মনে হয় পরবর্তীকালের ঘটনাবলি প্রমাণ করেছে সোহরাওয়ার্দীর ধারণাকে। কেননা, পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি ছিল বলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে পাঠান সপ্তম নৌবহর, যা ভারতকে সংযত করেছিল।
অন্য দিকে ড. মাহবুব উল্লাহ্ বলছেন, কাগমারীর দ্বীপশিখা জ্বলছে তো জ্বলছেই। কিন্তু ভাসানী তার জীবনের শেষ ভাগে এসে তার বামপন্থী চিন্তাচেতনা পরিত্যাগ করেন। গড়েন ইসলামপন্থী দল খোদায়ী খিদমতগার। যার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল ফারাক্কা মিছিল। উমর ও মাহবুব দু’জনই যথেষ্ট প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। জানি না কেন তারা ভাসানীকে এতটা বিবৃত করে উত্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
নদীর পানির সমস্যা খুব জটিল হয়ে উঠেছে। ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বয়ে এসেছে বড়-ছোট মিলে ৫৪টি নদী। এদের পানির ভাগ নিয়ে সৃষ্টি হতে পারছে জটিল সমস্যা। এই নদীগুলোর মধ্যে একমাত্র গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে হতে পেরেছিল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটা পনি বণ্টন চুক্তি। কিন্তু ভারত এখন এই চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশকে গঙ্গার পানি দিচ্ছে না। এখন তিস্তার পানি নিয়ে হতে পারছে বিরাট জটিলতা।
তিস্তা নদীর উদ্ভব হয়েছে সিকিমে। সিকিম ছিল ভারতের একটা করদমিত্র রাজ্য। ভারত সিকিম দখল করে নেয় ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে। সিকিম যত দিন ভারতের অঙ্গরাজ্য ছিল না, তত দিন তিস্তার পানি নিয়ে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এখন হতে পারছে। বলা হচ্ছে সিকিম তিস্তার পানি ব্যবহার করছে। তিস্তা দিয়ে তাই আগের মতো আর পানি আসছে না। কিন্তু এ কথা কত দূর সত্য তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানির ব্যাপারে সিকিম কিছু বলছে না। বলছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানত তার বিরোধিতার কারণেই সৃষ্টি হতে পেরেছে তিস্তা নিয়ে ভারত বাংলাদেশ বিরোধ। তিনি সম্প্রতি আত্রাই নদীর পানি নিয়েও চাচ্ছেন বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করতে। বিজেপি সরকার যে কারণেই হোক এঁটে উঠতে পারছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরভাগে অনেক দিন ধরেই হচ্ছে কামতাপুর আন্দোলন। এই অঞ্চলে প্রাচীনকালে কামতাপুর বলে একটি রাজ্য ছিল, যা থেকে পরে উদ্ভব হয় করদরাজ্য কোচবিহার। কিন্তু কোচবিহার বলে এখন আর কোনো প্রদেশ নেই। সাবেক কোচবিহার রাজ্য এখন পরিণত হয়েছে কোচবিহার নামক একটি জেলায়। কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষ চাচ্ছে কামতাপুর নামে একটি পৃথক প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করতে। এর আছে একটা ঐতিহাসিক ভিত্তি। ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে সৃষ্টি করা হয়েছে পৃথক তেলেঙ্গানা প্রদেশ। পশ্চিমবঙ্গ ভেঙে তাই গড়া যেতে পারে কামতাপুর প্রদেশ। কামতাপুর প্রদেশ করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে নদীর পানি নিয়ে রাজনীতি করা সহজ হবে না।
আগে নদীর পানি নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল ভারতের সাথে। কিন্তু চীন এখন সাং-পো নদীর ওপর ব্যারাজ গড়ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে আর বাংলাদেশে আগের মতো পানি আসবে না। ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে যদি চীনের সাথে বাংলাদেশ একটা পৃথক চুক্তি করতে পারে, তবে সেটা হবে উত্তম।
বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু সারা বছর হয় না। জানুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাসকে ধরা চলে শুকনো মওসুম। এই শুকনো মওসুমের জন্যই হলো বাংলাদেশের মূল পানি সমস্যা। কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ করে বর্ষার বৃষ্টির ও নদীর পানি ধরে রেখে শুকনো মওসুমে তা ব্যবহার করা সম্ভব। বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে বর্ষাকালে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় ও নদীতে যে পরিমাণ পানি আসে, তা ধরে রাখতে পারলে কোনো রাষ্ট্রই কোনো চক্রান্ত করে বাংলাদেশকে মরুময় অঞ্চলে পরিণত করতে পারবে না। আমি ফারাক্কা ব্যারাজ হওয়ার পর দু’বার এর ওপর দিয়ে গিয়েছি। ফারাক্কা ব্যারাজের ওপর দিয়ে করা হয়েছে সড়ক ও রেলপথ। রেলপথ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার মনে হয়েছে, ফারাক্কা ব্যারাজ করার উদ্দেশ্য কেবল কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখা ছিল না। এর একটা লক্ষ্য ছিল পদ্মার পানি আটকিয়ে সাবেক পাকিস্তানকে কাবু করা। আর এখন চেষ্টা হতে পারে বাংলাদেশকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে রাখার। এই সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/221272