১৯ মে ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩৭

চার মাসে ১৭৭ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার

দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনা লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে বলে মনে করছে অন্যতম মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুরে শিশু কন্যা সন্তানের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে অভিমান ও লজ্জায় কন্যাকে নিয়ে ট্রেনের নিচে পরে আত্মহত্যা করে বাবা। বনানীর দুই তরুণীর ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী চলছে আলোচনার ঝড়। এর মধ্যে গতকাল সাভারের এক গার্মেন্টস শ্রমিক নির্মম গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর পূর্ববর্তী দিনেও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিশু।
বিএমবিএস এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে, গত চার মাসে ১৭৭ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৭৬ নারী ও ৭৭ জন শিশু ধর্ষিত হয়। গণ ধর্ষণের শিকার হয় ২৪ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৫ জন। ধর্ষণের ঘটনা বেশী সংগঠিত হয় ঢাকা বিভাগে। এর পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর অবস্থান।
এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান এডভোকেট সিগমা হুদা। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিচার কার্যে আমাদের দেশে প্রচুর সময় নেয়া হয়। এর মধ্যে ভিকটিমকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই অনেক ভিকটিম মামলা করতে চান না। তিনি বলেন, ধর্ষনের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা গেলে আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসবে বলে আমি মনে করি।
পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশুপাচার, যৌন নিপীড়ন, আত্মহত্যা, বাল্যবিয়ে, অপহরণ ছাড়াও বিভিন্নভাবে ১ হাজার ৫৬৬ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬২জন, মার্চে ৭১ ও এপ্রিল মাসে ৬৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর গত বছর ৮৪০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তার মধ্যে বছরের প্রথম চার মাসে ২৮০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। তার মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৪, ফেব্রুয়ারিতে ১৩, মার্চে ১৪ ও এপ্রিলে ১৪ নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
২০১৬ সালে মোট গণধর্ষণের ঘটনা ছিল ১৬৬টি। এর মধ্যে বছরের প্রথম চার মাসে ৪১ নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে চারজন, ফেব্রুয়ারিতে চারজন, মার্চে তিনজন ও এপ্রিলে চার নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে। গত ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ছিল পাঁচটি। গত বছর ৪৪ নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। তাছাড়া, ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৬০টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২, ফেব্রুয়ারিতে ১৬, মার্চে ২০ ও এপ্রিলে ১২ নারী ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন। গত বছর প্রথম চার মাসে এই সংখ্যা ছিল ৪২ জন। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে ২৬টি। চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৫৬টি।
আর ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫১। গত মার্চ মাসে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাসুরকে খুঁজতে গিয়ে অষ্টাদশী এক গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশ উক্ত ঘটনার মামলায় গণধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করেছে। কদমতলীর শ্যামপুর এলাকায় দিনেদুপুরে এমন ঘটনায় এলাকার বাসিন্দরা হতবাক হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল বলেন, ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। এর প্রধান কারণ অপরাধীদের বিচার না হওয়া। অপরাধিদের দ্রুত শাস্তির বিধান নিশ্চিত না করলে এ অবস্থা থেকে বের হতে পারবো না আমরা। তিনি আরোও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে শুধু সরকার নয়; সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

http://www.dailysangram.com/post/284394-