১৮ মে ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৬

আলো নেই সোলারে

রূপগঞ্জে তিন কোটি টাকার প্রকল্প জলে

গত তিন অর্থবছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপগঞ্জের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও সড়ক আলোকিত করার জন্য ৪শ’র অধিক সৌরবাতি স্থাপন করেছে উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তর। আরো প্রায় পৌনে দুশ’ বাতি ও খুঁটি স্থাপনের কাজ চলমান। কিন্তু বেশির ভাগ সৌরবাতি এখন আর জ্বলছে না, কিছু বাতি জ্বললেও তা জ্বলে কেবল মিটমিট করে। অনেক বাতির খুঁটি অযত্নে পড়ে আছে রাস্তার পাশে। অথচ নির্মাণকালে প্রতিটি বাতির ওয়ারেন্টি ধরা হয় ২০ বছর। এ সময়ে বাল্ব নষ্ট হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পুনঃস্থাপন করে দেয়ার কথা। আর সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রে ৫ বছরের গ্যারান্টি থাকলেও নষ্ট বাল্ব কিংবা ব্যাটারি কে যে বদলে দেবে সে রকম কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। ঠিকাদারেরও নেই কোনো হদিস। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের বাড়ির চার দেয়ালের ভেতরেও দেয়া হয়েছে সোলার বাতি। এসব অনিয়ম দেখার জন্য এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও নেই কোনো তদারকির ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় প্রতি বছর আরো সোলার বাতির জন্য অধিকসংখ্যক চাদিহা তৈরি করে নতুন টেন্ডার করছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়। সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও হতদরিদ্রদের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থে কেনা প্রায় ৩ কোটি টাকার সৌরবাতি প্রকল্পকে অপচয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। টিআর এবং কাবিখা প্রকল্পের টাকা লুটপাটের জন্যই এ প্রকল্পে বিশাল বাজেট খরচা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্র জানান, গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে টিআর, কাবিখা প্রকল্পের টাকায় মোট ১৫৭টি বাতি প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা দরে ক্রয় করেন। পরের বছরে একই দরে আরো ১৫৪টি বাতি একই বাজেট থেকে কেনা হয় যেগুলো উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে টিআর, কাবিখার টাকায় ২৫৭টি খুঁটিসহ সোলার বাতির টেন্ডার করা হয়। প্রতিটির জন্য ৫৪ হাজার ৪৯০ টাকা দরে ‘গ্রামীণ শক্তি’ প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৪০ লাখ ৩ হাজার ৪৯০ টাকার ওই সৌরবাতির প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। ইতিমধ্যে ২৫৭টি সৌরবাতির অর্ধেক বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও সড়কে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি প্রায় পৌনে দুশ’ বাতি ও খুঁটি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ৭ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত এসব সৌরবাতির বেশির ভাগই এখন আর জ্বলছে না, কিছু বাতি জ্বললেও তা জ্বলে কেবল মিটমিট করে। অনেক বাতির খুঁটি অযত্নে পড়ে আছে রাস্তার পাশে। অনেক বাতির চিনমিভর্তি পানি টইটুম্বর করছে। কোনো কোনো স্থানে সোলারের খুঁটি তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে ভাঙাড়ির দোকানে। রূপগঞ্জের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির চার দেয়ালের ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে খুঁটিসহ সৌরবাতি অথচ নিয়মানুসারে হতদরিদ্রদের বাড়ি আলোকিত করার কথা ছিল। এমন কোনো চিত্র উপজেলার কোনো এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কাঞ্চন পৌরসভার কাঞ্চন এলাকার টেক্সাইল ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের কয়েক দিন ভালোই ছিল। কিন্তু দু-এক মাস পেরুতেই প্রধান সড়কের সৌর বাতিই আর জ্বলে না। একই অবস্থা কলাতলী ও কেন্দুয়া, কৃষ্ণনগর এলাকার সৌরবিদ্যুতের। উপজেলার একমাত্র ৪ লেনের সড়ক তারাব পৌরসভার রূপসী বাসস্ট্যান্ড থেকে গন্ধর্বপুর পর্যন্ত স্থাপিত অর্ধশত বাতির প্রায় সবগুলোই অকেজো। দু-একটা জ্বললেও তা মিটমিট করে এক ঘণ্টা জ্বললেই সারা রাত থাকে অন্ধকার জানালেন ওই এলাকায় মাসুদ রানা।
ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটু জানান, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর যেসব সোলার বাতি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেগুলো এখনো স্থাপন করা হয়নি। অতীতে বসানো সোলারের অধিকাংশই বাতি জ্বলা বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু সোলারে সামান্য আলো জ্বললেও সেটা মিট মিট করে জ্বলে। কোনোটি আবার লাগানোর দিন থেকেই একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। এসব ব্যাপার জানানোর পর পিআইও অফিস থেকে ঠিক করে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়ন ও পৌরসভার সোলার প্যানেলগুলো ঠিকমত কাজ করছে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন জানান, সোলার প্যানেলের কারিগরি কিছু ত্রুুটির অভিযোগ এসেছে। ইতিমধ্যে সেগুলো শনাক্ত করে ঠিকাদারকে মেরামত করে দেয়া জন্য বলা হয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=65876&cat=3/